কৃষিযান্ত্রিকীকরণ ও এগ্রোপ্রসেসিংয়ে বাংলাদেশে ভারতকে বিনিয়োগের আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর

আপডেট: December 22, 2020 |

কৃষিখাতে ভারত-বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে দুদেশের ডিজিটাল কনফারেন্স মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) যৌথভাবে এ কনফারেন্সের আয়োজন করে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষিযান্ত্রিকীকরণ ও এগ্রোপ্রসেসিংয়ে বাংলাদেশে ভারতকে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিনিয়োগের আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো.  আব্দুর রাজ্জাক। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে। সরকার এ বছর ২০০ কোটি টাকার মাধ্যমে ৫০-৭০% ভর্তুকিতে কৃষকদের কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপারসহ কৃষিযন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। এ ছাড়া ৩০০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে প্রায় ৫১ হাজার কৃষিযন্ত্রপাতি দেয়া হবে।

কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্রপাতির বাজার বছরে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারের যা বছরে ১০% হারে বাড়ছে। এ বিশাল বাজারে ভারত যদি সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনিয়োগে করে তবে দুদেশই উপকৃত হবে। বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা স্থাপন ও অ্যাসেম্বল হলে দেশে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে অন্যদিকে কৃষকেরা কম দামে যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে।

ড. রাজ্জাক আরো বলেন, আমরা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে ভারতের সহযোগিতা দেখতে চাই। ভারতীয় কম্পানিগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপন করতে পারে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ভারত-বাংলাদেশ দুদেশেই ৬০% এর বেশি মানুষ কৃষিতে সম্পৃক্ত। ভারত বাংলাদেশে কৃষিযান্ত্রিকীকরণ, ফুড প্রসেসিং ও ফিস-অ্যাকুয়াকালচার এই তিনটি খাতে অধিক গুরুত্বসহ কৃষির সকল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা করতে আগ্রহী। ফুড প্রসেসিংয়ে একসাথে কাজ করলে বৈশ্বিক ফুডবাজার  এই দুদেশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও তিনি আশা করেন।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার উল্লেখ করে পীযূষ গয়াল বলেন, এ অংশীদারিত্ব অন্যদের জন্য রোল মডেল। আমি মনে করি, দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে কৃষির গেম চেঞ্জিং সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কৃষিখাতে জিটুজি এবং বিটুবি সহযোগিতা ও বিনিয়োগের খাত চিহ্নিতকরণে এই কনফারেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত এন্টি ডাম্পিং শুল্কের কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেন, এসব পদক্ষেপের কারণে আমাদের রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি খাত প্রতিবছর ভারত থেকে কয়েক শত কোটি ডলার পণ্য আনে, যা আরো বৃদ্ধির ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। এটা যৌথ উদ্যোগ, শিল্প বৈচিত্র্যকরণ এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি এবং ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, টাটা স্টিলের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি ভি নরেন্দ্রন, মাহিন্দ্র ও মাহিন্দ্র’র সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পবন গোয়েঙ্কা, সিআইআই’র মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, এফবিসিসিআই’র পরিচালক সুজিব রঞ্জন দাশ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় কৃষিসচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এবং দুদেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ  উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দুদেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং মানুষের জীবন-জীবিকাতে কৃষিখাত মুখ্য ভূমিকা পালন করে। দুদেশের প্রায় ৬০% মানুষের জীবিকা কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। সেজন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বীজ, এগ্রোপ্রসেসিং, ভ্যালু চেইন, গবেষণা, হাইব্রিড জাতের ফসল ও টিস্যু কালচার, জার্মপ্লাজমসহ বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার অনেক সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এই কনফারেন্সে দুদেশের সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়/কৃষিযন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ  অংশগ্রহণ করেন।

বৈশাখী নিউজইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর