‘সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ব’

জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, সোনার বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কার্যকরি ভূমিকা রাখবো।

সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এই মহান নেতার অনুপস্থিতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত জয়ের উল্লাস-উদ্দীপনায় অপূর্ণতা ছিল যেমন স্পষ্ট, তেমনই যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে তার নেতৃত্বগ্রহণ সার্বজনীন উপলব্ধিতেও ছিল অতি প্রতীক্ষিত। তাই ১০ জানুয়ারি বাংলার মানুষ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে অনুভব করেছিল পরিপূর্ণ বিজয়ের স্বাদ।

বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, জাতির পিতা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য দীর্ঘ ২৪ বছর সংগ্রাম করেছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম সব ক্ষেত্রেই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, সবসময় দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৭০ এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই পাকিস্তানি বাহিনী জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে পাঠায় ও তার ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাতে থাকে। প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুণতে গুণতেও তিনি বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণশক্তি। তার অবিচল নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মরণপণ যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে।

তিনি বলেন, পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। একই দিন সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে তিনি লন্ডনে অবতরণ করেন। সেখানে কমনওয়েলথ মহাসচিবের আহ্বানে বাংলাদেশের সদস্যপদ গ্রহণে তাৎক্ষণিক সম্মতি জানান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সংবাদ সম্মেলন করেন।

জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সকালে দিল্লিতে যাত্রা বিরতি দিয়ে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বাংলার মাটিতে পদার্পন করেন। ওইদিন রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসমুদ্রে এক ভাষণে তিনি পাকিস্তনি সামরিক জান্তার নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন। সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা সংঘটনের দায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তিনি ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭২ বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।

তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধুদেশ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অতি অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীচক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু করে। তারা ’৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়। মোস্তাক-জিয়াচক্র খুনিদের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে কূটনৈতিকের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে, রাজনৈতিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত করে।

মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। বিএনপি-জামায়াত সরকার এ ধারা অব্যাহত রাখে।

২১ বছরের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একই বছর ১২ নভেম্বর ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল আইন, ১৯৯৬’ সংসদে পাশ করে। এর মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচারের সব বাধা দূর হয়।

তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতিহারে ‘দিনবদলের সনদ’ ঘোষণা দিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করি এবং পরপর তিন দফা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হই। আমরা জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছি। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে আমরা উন্নয়নের সব সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।

এখন আমাদের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৬ বছর। ৯৯ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিচ্ছি। পদ্মাসেতুর সব স্প্যান বসানোর ফলে বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদীর দু’প্রান্ত এখন সংযুক্ত হয়েছে। রাজধানীতে মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আজ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা ২০২০-২০২১ সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছি। ২৬ মার্চ ২০২১ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবো। কিন্তু, এরই মধ্যে বৈরী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়েছে।

তিনি স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। সূত্র : বাসস

বৈশাখী নিউজজেপা