করোনা মহামারিতেও ফুজিফিল্মের রেকর্ড মুনাফা

আপডেট: July 14, 2021 |

একটা সময় ছিল, ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার ফিল্মের রিল হিসেবে ফুজিফিল্ম ছাড়া কল্পনাই করা যেত না।

ডিজিটাল ক্যামেরার প্রবর্তন, মোবাইলে উন্নতমানের ক্যামেরা যুক্ত হওয়াসহ নানা কারণে হারিয়ে গেছে সে ম্যানুয়াল ক্যামেরা। ফলে টিকে থাকার প্রয়োজনে ব্যবসা পরিবর্তন করতে হছে ফুজিফিল্মকে। ওষুধ থেকে শুরু করে প্রসাধনসামগ্রী, ক্যামেরা ও বিভিন্ন ধরনের ইমেজিং মেশিনের দিকে ব্যবসা বিস্তৃত করেছে তারা। তার সুফলও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর কৃতিত্ব দেয়া যেতে পারে ফুজিফিল্মের নির্বাহী উপদেষ্টা শিগেতাকা কমোরিকে। ৮৭ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠানটিকে বায়োফার্মাসিউটিক্যালস খাতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নতুন নতুন কৌশল প্রণয়ন করেন তিনি।

নতুন প্রযুক্তির দিকে মনোনিবেশ করতে ফুজিফিল্মকে উৎসাহ দিয়েছেন। পুরনো দক্ষতা আর সম্পদ কাজে লাগিয়ে তা কীভাবে আরো উন্নত করা যায় সে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন নিরলসভাবে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে ফুজিফিল্মের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট তাকাতোশি ইশিকাওয়া বলেন, বাইরে থেকে মনে হতে পারে যে এসব ব্যবসা ফুজিফিল্ম কীভাবে করছে? কিন্তু ভেতর থেকে দেখলে এসবই আসলে মূল প্রযুক্তির সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত। তিনি বলেন, ফুজিফিল্ম তার অ্যানালগ শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিভিন্ন উপকরণের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছে।

কমোরি ফুজিফিল্মকে একটি উচ্চতায় রেখে গেছেন। যদিও মহামারীর কারণে বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হয়নি। তার পরও গত মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ১৬০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি। চলতি বছর আয়ের ক্ষেত্রে রীতিমতো রেকর্ড গড়েছে তারা।

করোনা প্রতিরোধী নোভাভ্যাক্স টিকার জন্য অ্যান্টিজেন তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ফুজিফিল্মের প্রযুক্তি। যদিও এটি এখনো জাপানে অনুমোদিত নয়। পাশাপাশি ফাইজার ও মডার্নার মতো এমআরএনএ টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত ন্যানো টেকনোলজির জন্য এটি বিশেষায়িত।

টোকিওভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান এমন একটি পিসিআর টেস্ট আবিষ্কার করেছে, যার মাধ্যমে মাত্র ৭৫ মিনিটের মধ্যে কভিড-১৯ রোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

পুরনো পদ্ধতিতে রোগ শনাক্তে অনেক বেশি সময় লেগে যেত। গত মার্চে কভিড-১৯-এর বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের জন্য বিশেষ ধরনের শনাক্তকরণ যন্ত্রও আবিষ্কার করে ফুজিফিল্ম। এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ এভিগান কার্যকর কিনা তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

যে অবস্থা থেকে ফুজিফিল্ম উঠে এসেছে, সে একই অবস্থা ছিল আরেক ফিল্ম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কোডাক।

কিন্তু তারা বৈচিত্র্য আনতে ব্যর্থ হয়। ফলে একপর্যায়ে এটি বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু ব্যবসায়ীর বিচক্ষণতা আর নিজের দক্ষতার ওপর আস্থায় আরো ভালোভাবে টিকে থাকে ফুজিফিল্ম। নিজেকে বদলে ফেলতে ফুজিফিল্ম হোল্ডিং করপোরেশন ফার্মাসিউটিক্যালস ও প্রসাধনী খাতে নিজেদের মাইক্রোন স্তরের দক্ষতা ব্যবহার করে, যা ধীরে ধীরে চিকিৎসা প্রযুক্তিতেও ব্যবহূত হতে থাকে।

কয়েক দশক ধরে ফুজিফিল্ম তাদের দক্ষতা বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সনোসাইট কিনে নিয়েছে তারা। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইরভাইন সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সেলুলার ডায়নামিকস, গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইপিএসসিও কিনেছে ফুজিফিল্ম। সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতে হিটাচির ডায়াগনস্টিক ইমেজ-সংক্রান্ত একটি ব্যবসাও কিনে নেয় তারা।

বৈশাখী নিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর