অর্ধকোটি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন, রাস্তাঘাট ফাঁকা

আপডেট: July 20, 2021 |

রাজধানীর গাবতলী থেকে সোমবার রাত ৯টায় নাবিল পরিবহনের বাসে ওঠেন মিফাতুল ও বারাত। দুই বন্ধু মিলে ঈদে ঠাকুরগাঁও জেলায় নিজেদের বাড়িতে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে তাদের বহনকারী বাসটি বগুড়া অতিক্রম করে। তারা বঙ্গবন্ধু সেতু তিনি পার হন দুপুর একটায়। শুধু তারাই নন, এবারের ঈদে লাখো মানুষ রাজধানী ছেড়েছেন।

ঢাকা থেকে বাস-ট্রেন-লঞ্চ ছাড়াও অন্যান্য যানবাহনে ঢাকা ও তার আশপাশ থেকে বাড়ি গিয়েছেন মানুষ। তাদের সঙ্গী ছিল যানজট, অতিরিক্ত ভাড়াসহ নানা ভোগান্তি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে যাত্রীর ভিড় ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সদরঘাটেও ছিল একই অবস্থা। তাদের মধ্যে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই।

ঈদুল আজহা বুধবার। রাজধানী ঢাকা থেকে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে ১৫ জুলাই থেকে। বিধিনিষেধ জারির দুই সপ্তাহ ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে তা শিথিল করায় ঈদযাত্রায় শামিল হয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। ফলে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হয়ে যেতে থাকে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর গাবতলী, আফতাবনগর, সাইদনগরসহ বিভিন্ন পশুর হাট ও সংলগ্ন স্থানে জনজট রয়েছে। তবে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়ক প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। আগের দিন যানজটে অচল প্রগতি সরণি, মহাখালী ও মিরপুরের সড়কগুলো ধরে সাঁই সাঁই ছুটে চলছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।

এদিকে, সিম ব্যবহারকারীর তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, ১৫ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা ছেড়েছেন ২৬ লাখের বেশি মানুষ।

পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যকিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে অর্ধকোটি মানুষ ঢাকা ও তার আশপাশ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় গেছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ছাড়াও বিভিন্ন বাহনে ১৫ জুলাই থেকে ২০ জুলাই সন্ধ্যা পর্যন্ত কম হলেও অর্ধকোটি মানুষ বাড়িতে গেছেন।

তিনি বলেন, ঈদুল আজহার পর একদিন বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে। একদিনে মানুষ ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় ফিরতে পারবে না। অনেকে বেশি ছুটি নিয়ে বাড়িতে গেছেন। ফলে তারা ফিরবেন বিধিনিষেধের মধ্যে। তখন দুরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে বলে সরকারি প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেছে।

ঢাকায় লোকজনকে ফেরাতে কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রয়োজন।

এবারের ঈদের আগে তীব্র যানজটের ফলে ঢাকা থেকে সময়মতো বাস গন্তব্যে যেতে ও ঢাকায় ফিরতে পারেনি। তাতে বাসের ট্রিপ কম হয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ ও পরিবহন শ্রমিকদের দুরাবস্থার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন প্রস্তাব করছে বলেও জানান তিনি।

ঈদের জন্য বাড়ি যেতে মানুষজন ছয়দিন সময় পাচ্ছেন। ঈদের পর ফেরার জন্য তারা পাচ্ছেন একদিন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এরইমধ্যে প্রতিক্রিয়া ও দাবি জানিয়ে বলেছেন, ২২ জুলাই কর্মস্থলে ফেরার জন্য একদিনে সবাই রাস্তায় নামলে যানজট, জনজট, গণপরিবহন, ফেরিঘাট, টার্মিনালে মানুষের গাদাগাদি হবে। ভয়াবহ ভোগান্তির পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে। এতে বিধিনিষেধের অর্জিত ফলাফল শূন্যে পৌঁছাবে।

২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে। বাড়িমুখোদের বড় একটি অংশ শিল্প-কারখানার কর্মী। ৫ আগস্টের আগে তাদের ঢাকায় ফেরার দরকার হবে না। তারপরও ঈদের পর ২২ জুলাই অর্থাৎ একদিনের মধ্যে যারা ফিরতে চাইবেন, তারা ফিরতে পারবেন না।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর