বানারীপাড়ায় ৬২ বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে ৫৪ বছরের বৃদ্ধার বিয়ে

আপডেট: February 20, 2022 |
print news

বানারীপাড়া প্রতিনিধি: প্রেম-ভালোবাসায় কোন গরীব-ধনী,ধর্ম-বর্ণ কিংবা বয়স নেই, তার প্রমান রাখল বানারীপাড়ার ৬২ বছরের বৃদ্ধ আশরাফ আলী বেপারী ও ৫৪ বছরের বৃদ্ধা মোসাম্মৎ বানু বেগম ।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে দীর্ঘ একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা কাটাতে ভালোবেসে বিয়ে করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তারা। জমকালো আয়োজনে চাঞ্চল্যকর এ বিয়ে হয়েছে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার শেরে বাংলার স্মৃতিধণ্য পূণ্যভূমি চাখার ইউনিয়নের সোনাহার গ্রামে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পে।

ব্যতিক্রমধর্মী এ বিয়েতে ১ লক্ষ ১ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। নগদ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত দেনমোহরে ওই দম্পতির বিয়ে সম্পন্ন হয়। বাহারী রঙিন বেলুন আর ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছিল তাদের বাসরঘর (ফুলশয্যা)।

শনিবার (১৯ ফেব্রæয়ারী) রাতে দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বিয়েতে নিমন্ত্রিত অতিথি পাঁচশ হলেও গ্রামের উৎসুক মানুষের অংশগ্রহণে শেষ পর্যন্ত তা প্রায় হাজার ছাড়িয়ে যায়। বর ও কনে চাখার ইউনিয়নের সোনাহার গ্রামের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা।

বিধবা মোসামৎ বানু বেগমের ঘরে এক কন্যা সন্তান থাকলেও বৃদ্ধ আশরাফ আলী ছিলেন চিরকুমার। ফলে একাকিত্বের জীবনে একেঅপরকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় তারা। দু’জনের মাঝে প্রথমে ভালো লাগা,পরে প্রেম অতঃপর একে অপরকে আরও নিবিড়ভাবে পেতে দুজনের ঘর বাধার সিদ্ধান্ত।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুর উদ্যোগে বেশ ধুমধাম পরিবেশে তাঁদের প্রেম-প্রণয়কে বিয়ের মাধ্যমে পরিণয়ে রূপান্তর করা হয়।

এ প্রসঙ্গে চাখার ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল হক টুকু বলেন, তার ইউনিয়নের সোনাহার গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আশরাফ আলী বেপারী বিয়ে করেননি। তার কোন সংসার নেই। ভিক্ষে করে চলে তার জীবন।

বৃদ্ধ বয়সে বেশ একাকিত্বের জীবন কাটাতেন তিনি। পরে আশরাফ আলী বেপারী এই নিঃসঙ্গতা কাটাঁতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। এক সময় বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামে আশরাফ আলী বেপারীর বাড়ি হলেও নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তার ঠিকানা হয় চাখারের সোনাহার গ্রামের আশ্রয়নে।

সেখানে দু’ শতক জমিসহ পেয়েছেন চকচকে রঙিন পাকা ঘর। সেই ঘরে একজন সঙ্গী বড়ই প্রয়োজন হয়ে ওঠে তার। অপরদিকে একই প্রকল্পের বাসিন্দা একসময় চট্টগ্রাম থেকে আসা মোসাম্মৎ বানু বেগমের স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ে ও জামাতার সাথে থাকলেও নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতেন তিনি।

জীবন চলে তার অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। এ অবস্থায় তিনিও বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে উভয়ের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে অবশেষে পরিবারের সম্মতিতে শনিবার রাতে খুব ঘটা করেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এমন আয়োজনে কৌতুহলী এলাকাবাসী সেখানে ভিড় জমায়।

বিয়ের অনুষ্ঠান সবাইকে উপভোগ্য করে তোলে। এলাকাবাসী নবদম্পতির দীর্ঘায়ু কামনা করে সুখী জীবনযাপনের জন্য দোয়া করেন। এদিকে এ বিয়ের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রেম-প্রণয় পরিণত রূপ পাওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। এতে এলাকার সবাই দারুন আনন্দিত ও উচ্ছ¡সিত।

বৃদ্ধ আশরাফ আলী বেপারী ও বৃদ্ধা মোসাম্মৎ বানু বেগম তাঁদের দাম্পত্য জীবন আমৃত্যু যেন সুখকর ও মধুময় থাকে সেজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। এদিকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ঘটা করে এ বিয়ে এলাকায় টক অব দ্য নিউজে পরিণত হয়েছে।

বৈশাখী নিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর