গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলা টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত

আপডেট: October 28, 2024 |
inbound1763894381296570607
print news

জাহাঙ্গীর আলম, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যবাহী খেলা হাডুডু বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে এই খেলা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এক সময় ব্যাপক হাড়ে খেলা হলেও বর্তমানে আর চোখেই পড়ে না। পুরনো ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ঘরোয়া পরিবেশে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে বাচোর ইউনিয়নের পুর্ব বাচোর স্টুডেন্ট ক্লাব ও স্থানীয়দের আয়োজনে হা-ডু-ডু টুর্নামেন্ট-২০২৪ এর আয়োজন করা হয়।

inbound4939463019733206332

আজ ২৮ অক্টোবর (সোমবার) বিকাল চারটায় উপজেলার পুর্ব বাচোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এক সময় এই এলাকায় নিয়মিত এই খেলার আয়োজন করা হলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছিল খেলাটি। নতুন করে খেলাটি শুরু হওয়ায় উৎসুক জনতার উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এতে উৎসব মুখর পরিবেশে মাঠে খেলা শুরু হওয়ার আগেই স্থানীয় নারী পুরুষ ও শিশু কিশোর, বয়স্ক বয়জষ্ঠারা খেলা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে মাঠে জমায়েত হতে থাকেন।

খেলা দেখতে আসা স্থানীয় দর্শকরা জানান, অনেক আগে এই এলাকায় হাডুডু খেলা বেশ জনপ্রিয় ছিল।

inbound3643255143703607809

তবে কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু আজ বিলুপ্তির পথে। খেলাটি এলাকায় জনপ্রিয় থাকায় স্থানীয়দের সহযোগীতা ও উদ্যোগে আবার খেলা শুরু হওয়ায় তারা খুবই আনন্দিত ও খেলাটিকে ধরে রাখার জন্য প্রতি বছর এমন টুর্নামেন্টের আয়োজন কামনা করেন খেলা আয়োজক কমিটির প্রতি।

সাইফুল ইসলাম নামে খেলা দেখতে আসা এক দর্শক বলেন, গ্রামের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের তেমন বিনোদন করার সময় নাই ।

অনেক দিন পরে আমাদের এখানে হা-ডু-ডু খেলা শুরু হয়েছে। তাই দেখতে এসেছি। খেলা দেখে খুবই ভালো লাগছে।

আশরাফুল আলম নামে স্থানীয় এক কিশোর বলেন, হাডুডু খেলা কি আমি দেখিনি বইয়ে পড়েছি।ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটি এর আগে আমাদের গ্রামে আমি দেখিনি।

হঠাৎ করে স্থানীয়রা এ খেলার আয়োজন করেছেন বলে আজ এ ধরণের খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছি এজন্য ধন্যবাদ খেলা আয়োজক কমিটির সকলকে।

নেকমরদ থেকে খেলা দেখতে আসা আশা মনি নামে এক দর্শক বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি গ্রাম বাংলায় যা হাডুডু খেলা নামে পরিচিত।

আমাদের এলাকায় হাডুডু খেলার এমন ধরনের কোনো আয়োজন করা হয় না। এতে মনে করছিলাম খেলাটি আর কোনদিন চালু হবে না।

তবে বাচোর ইউনিয়নের পুর্ব বাচোর স্টুডেন্ট ক্লাব ও স্হানিয়দের আয়োজনে হাডুডু টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা হাজারো দর্শক ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হারিয়ে যাওয়া খেলাটি প্রান ফিরে পেয়েছে।

খেলা দেখতে এসে খুব ভালো লাগছে। এলাকাবাসী এটি আবার চালু করেছে দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে।

আসাদুজ্জামান লিটন নামে আরেক দর্শক বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু। এই জাতীয় খেলা আবার চালু করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

খেলাটি ধারাবাহিকভাবে চালু রাখার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ বর্তমান সময়ে গ্রামের অনেক শিশু কিশোর হা-ডু-ডু খেলা কি তা চোখেই দেখেনি। যেহেতু এটি আমাদের দেশের জাতীয় খেলা তাই খেলাটি চালু রাখা জরুরী।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা হাডুডু। খেলাটিকে পুনরোজ্জীবিত করতে এ ধরনের আয়োজন প্রশংসনীয়।

হাজারো মানুষের ঢল ও উৎসব মুখর পরিবেশ গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া এই খেলা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় এমন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হলে বিলুপ্তি হওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলা তার প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন খেলা দেখতে আসা প্রধান অতিথি ঠাকুরগাঁও -৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদ।

খেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এলাকাবাসীকে আনন্দ দিতে ও খেলাটির প্রচলন ধরে রাখার জন্য এই হাডুডু টুর্নামেন্টের আয়োজন।

আশা করছি সকলের সহযোগিতা ও উৎসাহ পেলে প্রতিবছর এই এলাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া হাডুডু খেলা টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে।

এছাড়াও টুর্নামেন্টে মোট ১৪ টি দল অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি দলে ৭ জন করে দুই দলে মোট ১৪ জন স্থানীয় খেলোয়ার অশংগ্রহণ করেন।

ফাইনালে বাচোর স্টুডেন্ট ক্লাব চন্ডিপুর একাদশকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হন। এদের মধ্যে বিজয়ী দলকে ৬৫০০ এবং রানার্সআপ দলকে ৪৫০০ টাকা নগদ পুরস্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। খেলায় ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন বাচোর স্টুডেন্ট ক্লাবের লাইসার ইসলাম।

পুরো টুর্নামেন্টের ধারা ভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করেন মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর