প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে আপন নীড়ে, জাবি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ঈদযাত্রা


আমিনা হোসাইন বুশরা, জাবি প্রতিনিধি: রমজান শেষ হয়ে এলো বলে। এদিকে ঈদের আনন্দের সুবাতাস যেন এখনই বইতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি, কেনাকাটা।
তবে জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাসে সেই প্রস্তুতি একটু ভিন্নই বলা চলে। এখানে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি যাওয়াই যেন ঈদ আনন্দের মতো।
যতই রমজানের দিন ফুরিয়ে আসছে, ক্যাম্পাস যেন ততই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন প্রিয়জনদের ছেড়ে, আপনালয় ছেড়ে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা, ক্লাস, পরীক্ষা শেষে এবার বাড়ি ফেরার পালা।
মায়ের হৃদয়ের আহ্বান আর প্রিয় মানুষদের টান যেন সেই আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ২০ রমজানের পরে জাবি ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে বাড়ি ফেরার হিড়িক।
ব্যাগ গুছিয়ে বাস, ট্রেন ধরার এই যাত্রার মতো মধুময় যাত্রা যেন আর নেই।
শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়ি ফেরা মানেই এক অন্যরকম উৎসব। দীর্ঘদিন হল, ক্লাসরুম আর ক্যাম্পাসের সবুজে সময় কাটানোর পরে প্রিয়জনের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম।
শৈশবের স্মৃতি, ছেলেবেলার বন্ধু বা গ্রামের মেঠোপথ, সবই যেন ভীষণ আকাঙ্ক্ষিত। বাসে বা ট্রেনে দাঁড়িয়ে কিংবা জ্যামের বিড়ম্বনা আর দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি, সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে সেই বাড়ি ফেরার আনন্দ।
ট্রেন বা বাসের জানালায় বসে ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে মাখার সময় শুধু স্বপ্নেরা বাড়ি ফেরার গল্পই বুনে চলে। কারণ স্বপ্নের এবার বাড়ি ফেরার পালা। এই যাত্রায় সামান্য বিড়ম্বনাও যেন মধুর।
বাড়ির পথে বের হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নাবিলা বিনতে হারুন। যাবেন নারায়ণগঞ্জ।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর এবারই প্রথম বাড়ির বাইরে রমজানের দিনগুলো অতিবাহিত করেছি। ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় হলেই কাটাতে হয়েছে এবার।
বন্ধুদের সাথে ইফতার-সেহেরীতে ভালো সময় কাটালেও পরিবারের শূন্যতা অনুভব করেছি প্রতিটি ক্ষেত্রে। বিশেষ করে বসন্তের এই সময়ে ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা শীতলক্ষ্যার পাড় কে মিস করেছি সবচেয়ে বেশি।
তাই দীর্ঘ ছুটির পর বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। আশাকরি এবারের ঈদ অনেক ভালো কাটবে।’
৫১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মতিউল ইসলাম বাড়ি ফেরার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘পড়াশোনার কারণে বর্তমানে যেখানে থাকি সেখান থেকে বাড়ির দূরত্ব ৩৬০ কি.মি.। মন চাইলেও যখন তখন যাওয়া হয়ে উঠে না।
তাই বাড়িতে ফেরার সুযোগ আসলেই মনের মধ্যে এক অন্যরকম আবেগ কাজ করে। বাড়িতে পৌঁছানোর পর মায়ের দরদ মাখা হাসি, পরিবারের অন্য সবার উচ্ছ্বাস যেন সব ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর করে দেয়।
এত দীর্ঘ যাত্রাপথের ক্লান্তি নিয়ে তবুও বারবার আমি ছুটতে চাই সেই বাড়ির পথে,আমার আপন নীড়ে, আমার প্রিয় মায়ের কাছে।’
জাবির সবুজ ক্যাম্পাস ছেড়ে মায়ের কোলে ফেরার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে তুলুক ঈদ আনন্দকে। শৈশবের স্মৃতিমাখা মাটির গন্ধ নিতে ‘নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা’ নামক এই ঈদযাত্রা সুন্দর হোক- এই প্রত্যাশা সকলের।