জমে উঠছে সিলেটের ঈদবাজার

আপডেট: March 24, 2025 |
Untitled 2
print news

ফাহিম আহমদ, সিলেট প্রতিনিধি: ঈদের কেনাকাটায় জমে ঊঠেছে সিলেটের বিভিন্ন শপিংমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। নগরীর শুকরিয়া মার্কেট, আল হামরা, ব্লু ওয়াটারসহ সব মার্কেট ও শপিংমলে ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত প্রায় সবগুলো দোকান। কেউ নতুন জামা-কাপড় কেনায় ব্যস্ত, আবার কেউ বা এখনো পরখ করছেন। নারীরা কসমেটিকসের দোকানে ভিড় করছেন। কারো হাতেই যেন সময় নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ক্রেতারা বলছেন, এবারের ঈদে জামা-কাপড়, জুতা, কসমেটিকসহ সব জিনিসের দাম একটু বেশি। গতবারের তুলনায় এবারের ঈদের বাজারে কোনো কোনো পণ্যে ১৫ থেকে ২৫ পার্সেন্ট দাম বেশি রাখা হচ্ছে। কিছু কিছু দোকানে জামা-কাপড়ের দাম সহনীয় বলে জানান ক্রেতারা। তবে অনেক ক্ষেত্রে জামা-কাপড়ের কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম বেশি রাখা হচ্ছে।

নগরীর শুকরিয়া মার্কেটে ঈদের বাজার করতে এসেছেন আফসানা জান্নাত মিম। জামা-কাপড় আর কসমেটিকসের শপিং ব্যাগ নিয়ে মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ঈদের বাজার নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, পরিবারের বড় সদস্য আমি। বাবা নাই। মা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

তাই ভাইবোনদের জন্য ঈদের বাজার করতে এসেছি। এবারে ঈদ বাজারে বাজেটের চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি। তবে না কিনে তো উপায় নেই। ছোট ভাইবোনদের জন্য ঈদে কিছু না কিছু কিনতে হয়। গতবার ঈদে বোনের জন্য যে ধরনের জামা ১ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম, এবার প্রায় সেইম কাপড়ের ভিন্ন ডিজাইনের কাপড়ের দাম পড়ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা।

জুতার দোকানের অবস্থা আরও খারাপ। ব্র্যান্ডের জুতার দাম ফিক্সড করা থাকে, দামাদামির কোনো সুযোগ নেই। তুলনামূলক দাম বেশি লিখে ট্যাগ লাগিয়ে রেখেছে। যে জুতা গতবার কিনেছি ১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে, সেই জুতা এবার ২ হাজার ১০০ টাকার ওপরে। সবকিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুবই হিমশিম খাচ্ছি।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম হাসান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো. আজিজুল করিম বলেন, এখনো পুরোপুরি ঈদের বাজার জমে ওঠেনি। তবে ক্রেতাসমাগম বেড়েছে। বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় দাম বেড়েছে। তাই গতবারের চেয়ে একটু দাম বেশি। তবে দোকান খরচ, লোকজনের বেতন-ভাতা দিয়ে ব্যবসায়ীদের তেমন একটা লাভ হয় না। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাস শেষে তেমন একটা প্রফিট থাকছে না।

তার মতে, যখন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। তখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হবে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়বে। প্রবাসীরা দেশে যত বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবে, তত আমাদের দেশের অর্থনীতি চাঙা হবে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীরা সব সময়ই ক্রেতাবান্ধব। তারা আগে ক্রেতার সুবিধা-অসুবিধায় লক্ষ রাখেন। কেউই অতিরিক্ত মুনাফালোভী নন। মাঝেমধ্যে কেউ যদি পণ্যের দাম বেশি রাখেন আর আমরা তার খবর পাই, তাহলে তাকে সাবধান করি।

এতে তিনি সংশোধন না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুপারিশ করি। আমরা চাই না ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হোক। এবারের ঈদের বাজারে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে আশা করছি।

নগরীর কুমারপাড়ায় বাবার সঙ্গে প্রথম ঈদের বাজার করতে এসে আলোঝলমল দোকান আর রাস্তাঘাট দেখে বেজায় খুশি আহসান সাদিক। আনন্দের অনুভূতি ব্যক্ত করে আহসান সাদিক জানায়, ‘এবার প্রথম ঈদের বাজার করতে এসেছি। অনেক আনন্দ লাগছে।

দোকানগুলো অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শার্ট-টিশার্ট ও প্যান্টগুলোর ডিজাইন অনেক সুন্দর। জুতাগুলোতে আছে বাহারি ডিজাইন। কোনটা রেখে কোনটা কিনি তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। বাবার সঙ্গে বাজারে এসে অনেক ভালো লাগছে।’

সিলেট মহানগরীর নয়াসড়ক এলাকায় অবস্থিত চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশনের ম্যানেজার কবির খান বলেন, ক্রেতাদের সমগাম বেড়েছে। বিক্রি ভালোই হচ্ছে। তবে ভারতীয় কাপড় না থাকায় টাকার অঙ্ক কম হচ্ছে। জামা-কাপড়ের কাঁচামালের দাম বাড়ায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। তাই এর প্রভাব এবারের ঈদের বাজারে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, টিশার্ট, ফতোয়া ও মেয়েদের রেডি থিপিস, টুপিস, শাড়ি, কসমেটিকসহ সব ধরনের জামা-কাপড় আমাদের প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। প্রকারভেদে বিভিন্ন দামের জামা-কাপড় রয়েছে।

সিলেট নগরীর ফ্যাশন-সচেতন তরুণীদের অন্যতম পছন্দের ‘মাহা’ ফ্যাশন হাউজে ঈদের বাজার করতে এসেছেন আদিবা জান্নাত। তিনি বলেন, প্রতি ঈদের কেনাকাটা ‘মাহা’ ফ্যাশন হাউজে করি। মাহার যে কালেকশন আছে, তা সিলেটের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। মাহার ড্রেস, শাড়ি মানে ও ডিজাইনে অনন্য।

মাহার ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদির সাইদুল জানান, প্রতিটি উৎসবেই আমাদের বেচাকেনা ভালো হয়। ক্রেতারা মাহায় কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। শাড়ির মধ্যে কাতান, বেনারসি বেশি চলছে। দেশি শাড়ির দাম ৯০০ থেকে ৮ হাজার টাকা। কাতান মিরপুরি ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। লেহেঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। মাস্তানি ড্রেস সাড়ে ৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য ড্রেসের দাম পড়বে ৭ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলার মহাসচিব ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বাজার তত জমে উঠছে। এবারের ঈদের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তার পরও সবাইকে সাবধান থেকে বেচাকেনা করতে হবে, যাতে করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদ সামনে রেখে মহানগরীর প্রতিটি মার্কেট, শপিং মল, রাস্তাঘাটে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রতিটি মার্কেট, শপিংমলে সাদা পোশাকে পুলিশ রয়েছে। নগরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে ঈদের বাজার ও ঈদ উপভোগ করতে পারে, তার জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ থাকবে, বেড়াতে গেলে বাসা-বাড়ি ভালো করে তালা দিয়ে যাওয়ার জন্য এবং রাস্তাঘাটে চলাচলে সচেতনতা অবলম্বন করার জন্য।

২৪ মার্চ ২০২৫

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর