আফগানিস্তানের নতুন সরকারে কে কোন দায়িত্ব পেলেন

আপডেট: September 8, 2021 |

৩৩ জন মন্ত্রিসভার সদস্যের সমন্বয়ে গতকাল (৭ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানের নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে তালেবান।

এ সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাকে নেতৃত্ব দেবেন মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ, এবং উপ-প্রধান হিসেবে থাকবেন গোষ্ঠীটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার।

মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ, ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী

দীর্ঘদিন ধরে তালেবানের শক্তিশালী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা ‘রেহবাড়ি শুরা’ বা নেতৃত্ব পরিষদের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন আখুন্দ। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের শেষ শাসনের সময় তিনি প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অন্যান্য তালেবান নেতার মতো, আখুন্দও তার প্রতিপত্তি অর্জন করেন আন্দোলনের একচ্ছত্র প্রথম নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের সান্নিধ্যে থেকে।

এর আগে, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে তাকে ওমরের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।

তালেবানের একটি সূত্র জানায়, তাদের আন্দোলনের মধ্যে আখুন্দ অত্যন্ত সম্মানীয় একজন ব্যক্তি। বিশেষ করে দলটির সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তাকে বেশ সম্মানীত একজন হিসেবে দেখে থাকেন।
তালেবানের জন্মস্থান কান্দাহারের বাসিন্দা তিনি।

তবে, আখুন্দের সঠিক বয়স নিয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। কিছু পর্যবেক্ষক তাকে ষাটের দশকের মাঝামাঝি বা সম্ভবত তার চেয়েও বেশি বয়স্ক বলে মনে করেন। একজন ধর্মীয় ব্যক্তির চেয়ে রাজনৈতিক হিসেবে তার পরিচিত বেশি এবং নেতৃত্ব পরিষদের উপর তার নিয়ন্ত্রণের কারণে সামরিক বিষয়েও মতামত রাখতে পারেন তিনি।

আবদুল গনি বারাদার, ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী

বারাদার এককালে মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ‘বারাদার’ কিংবা ‘ব্রাদার’ ডাকনামটি ওমরই তাকে দিয়েছিলেন।

আফগানিস্তানে তালেবানের শেষ শাসনামলে তিনি উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

জাতিসংঘের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তালেবান সরকার পতনের পর জোট বাহিনীর ওপর হামলার জন্য দায়ী একজন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বারাদার।

এর আগে তিনি ২০১০ সালে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দোহায় তালেবানদের রাজনৈতিক কার্যালয়ের নেতৃত্ব দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনার অন্যতম প্রধান একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।

আমির খান মুত্তাকি, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মূলত পাকটিয়ার বাসিন্দা মুত্তাকি নিজেকে হেলমন্দ এর বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন।

মুত্তাকি বিগত তালেবান সরকারের সময় সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। শান্তি কমিশন ও আলোচনা দলের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করে কাতারে পাঠানো হয় তাকে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় বসতেন তিনি।

তিনি কোনো জঙ্গি কমান্ডার বা ধর্মীয় নেতা ছিলেন না। তালেবান সূত্রে জানা যায়, মুত্তাকি মূলত দাওয়াত ও নির্দেশনা কমিশনের চেয়ারম্যান।

আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য চলা লড়াইয়ের সময় তিনি বিবৃতি এবং বক্তৃতার মাধ্যমে একজন মধ্যমপন্থী হিসেবে কাজ করেন।

শহরাঞ্চলে যুদ্ধ এড়াতে তালেবানের সাথে কথা বলার জন্য প্রাদেশিক রাজধানীতে লুকিয়ে থাকা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

কাবুল পতনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, মুত্তাকি পানশির প্রদেশকেও শান্তিপূর্ণভাবে যুদ্ধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানান।

মোল্লা ইয়াকুব, ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র ইয়াকুব মূলত ২০১৫ সালে তার বাবার উত্তরাধিকারী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তার বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে মোল্লা আখতার মনসুরকে নিযুক্ত করা কাউন্সিল বৈঠক থেকে ক্ষিপ্রতার সাথে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত এর সমাধান হয়েছিল।

এখনো বয়স ত্রিশের গোঁড়ায় থাকা ইয়াকুবের নেই তালেবানের প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রের কমান্ডারদের মত অভিজ্ঞতা। কিন্তু তার বাবার নামের প্রতিপত্তির কারণে কান্দাহারের আন্দোলনে একটি অংশের আনুগত্যের আদেশ দেন তিনি।

গত বছর তালেবান সামরিক কমিশনের সার্বিক প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয় তাকে। তখন থেকে আফগানিস্তানে সকল সামরিক অভিযানের তত্ত্বাবধান করেছেন এবং তালেবানের তিনজন উপ‑নেতার একজন ছিলেন। তার সাথে বাকি দুজন ছিলেন বারাদার ও সিরাজউদ্দিন হাক্কানি।

যদিও কিছু পশ্চিমা বিশ্লেষক তাকে আপেক্ষিক মধ্যপন্থী হিসেবে বিবেচনা করেন, তালেবান কমান্ডাররা বলেছেন যে তিনি কাবুল পতনের আগের সপ্তাহগুলোতে সামরিক অভিযান জোরদার করার জন্য দায়িত্বরত নেতাদের মধ্যে একজন।

সিরাজউদ্দিন হাক্কানি, ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

২০১৮ সালে তার পিতা জালালুদ্দিন হাক্কানির মৃত্যুর পর প্রভাবশালী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি নেতা হিসেবে উপনীত হন।

আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সবচেয়ে কার্যকর সোভিয়েত-বিরোধী মিলিশিয়া হিসেবে বিবেচিত আধা-স্বায়ত্তশাসিত এ গোষ্ঠীকে জোট বাহিনীর ওপর মারাত্মক কিছু হামলার জন্য দায়ী করা হয়।

তবে তালেবান কাঠামোর মধ্যে হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঠিক অবস্থান নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এ নেটওয়ার্কটিকে একটি বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নাম দেয়।

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কমিটি আরও জানায়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে আইনবিহীন সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এই দলটি মাদক উৎপাদন ও বাণিজ্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

আত্মঘাতী হামলায় জড়িত থাকা এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ব্যক্তিদের মধ্যে হাক্কানি একজন। এছাড়া, তাকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পুরস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

জাবিউল্লাহ মুজাহিদ, ভারপ্রাপ্ত উপ-তথ্যমন্ত্রী

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গোষ্ঠীটির নানা কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ করে আসছেন তালেবানের দীর্ঘদিনের মুখপাত্র মুজাহিদ। তার টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিয়মিত তিনি আত্মঘাতী হামলার বিবরণ পোস্ট করতেন।

গত মাসে কাবুলের পতনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলন না করা পর্যন্ত তার কোনো ছবি জনসমক্ষে প্রকাশিত হয় নি।

তাছাড়া, কয়েক বছর ধরে আমেরিকান সামরিক গোয়েন্দারা বিশ্বাস করত যে তালেবানের মিডিয়া অপারেশন আদতে বেশ কয়েকজন পরিচালনা করতেন, এবং তাদের মধ্যে মুজাহিদও একজন।সূত্র- ডন ভায়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর