বরিশালে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন

আপডেট: October 11, 2021 |

৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। নিরাপদ প্রজননের স্বার্থে এ সময়ের মধ্যে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময়, সংরক্ষন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইন অমান্য কারিকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

বরিশাল মৎস গভেষনা ইন্সটিটিউট বলছে, ২০২০ সালে ৭ লক্ষ ৪০ হাজার কেজি ডিম ছেরেছে। একটি মাছ একবারে ৩/৪ লক্ষ ডিম দেয়। ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মৌসুমি বরিশালের কীর্তনখোন, আড়িয়াল খাঁ, কালা বদর নদীতে ইলিশ ধরার হচ্ছে। পেশাজীবী জেলেরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এই সময় মুলত পেশাজীবি জেলেদের সারঞ্জাম ও মাছ শিকারের কৌশলের সাথে অপেশাদার বা মৌসুমি জেলেদের পেশী শক্তি এক হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরার লক্ষ্যে বরিশাল সদর উপজেলার শতাধিক মৌসুমি জেলে স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ ধরে থাকে। এরা নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ইঞ্জিন চালিত দ্রুতগামী নৌকা ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে মা ইলিশ শিকার করে থাকে। মাছ শিকারের সুবিধার্থে নৌকায় ডাবল ইঞ্জিন বসানো হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানায়, সুকৌশলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বিক্রেতা দোকানের বাইরে দামদর ঠিক করে দোকানের বাইরেই ক্রেতার হাতে জাল তুলে দিচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল বিক্রির জন্য উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য দালাল। মাছ সংরক্ষণ করার জন্য কর্কশিটের তৈরি বাক্স (বরফ দিয়ে মাছ রাখার বাক্স) দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়িদের মদদে বিভিন্ন পেশার মানুষ অধিক অর্থ লাভের আশায় নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বরিশালের দপদপিয়া খেয়াঘাট, ধনগবেঘনা, ত্রিশ গোডাউন, চরকাউয়া (হিরন নগর) মুক্তি যোদ্ধা পার্ক বরফকল, রসুলপুর, জনতার হাট, চরকাউয়া ইউনিয়ন, পলাশপুর, বেলতলা খেয়াঘাট, সায়েস্তাবাদ, কালিজিরা, চন্দ্রমোহন, চরবাড়িয়া, চরমোনাই, কাদা বদর, আড়িয়াল খাঁ, জুনাহার, শ্রীপুর, লাহারহাট ঘাট, এলাকায় এক শ্রেণির অসৎ মৎসজীবি ও মৌসুমী মৎস্য শিকারীরা ইলিশ মাছ ধরার অভিযোগ উঠেছে বলে ওইসব এলাকার বসবাসকারীরা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মৌসুমী জেলে জানান, সারা বছর সে অন্য পেশায় কাজ করলেও এ সময় নদীতে বড় আকারের বেশি মাছ ধরা পড়ায় নদীতে নেমে পড়ি। তবে প্রশাসনের হাত থেকে রক্ষা পেতে সোর্স ম্যানেজ করে চলি। প্রশাসন কখন অভিযানে নামবে সোর্সদের কাছ থেকে তা মোবাইলে জানতে পারি।

বিনিময়ে তাদের দেয়া ঠিকানায় পৌছে যায় ইলিশ। তবে বরিশালের চরমোনাই, সায়েস্তাবাদ, কালিজিরা, চন্দ্রমোহনসহ বিভিন্ন স্পটে মা ইলিশ নিধন রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ।

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। ইতিমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী নেতা ও জেলেদেরকে নিয়ে একাধিক সভা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ সময় ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকার জন্য জেলে পাড়াগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নিষিদ্ধ সময় কেউ ইলিশ শিকারে নদীতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। জেলার নদ-নদীতে প্রতিদিন ৩৫টি টিম টহল দেয়।

অভ্যন্তরীণ নদনদীতে এখন প্রচুর মা ইলিশ এসেছে। কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের সমম্বয়ে মা ইলিশ রক্ষায় আমরা অভিযান চালাচ্ছি। তবে কিছু জেলে মা ইলিশ ধরছে। আমরা তা বন্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর