বিক্ষোভ দেখানো নারীদের চুপ করিয়ে দিচ্ছে তালেবান

দ্বিতীয় মেয়াদে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসার পর দেশটির নারীদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে তালেবান। সেই সঙ্গে তালেবানের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো নারী ও মানবাধিকার কর্মীদের জোরপূর্বক চুপ করিয়ে রেখেছে তালেবান, এমন অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার লন্ডনভিত্তিক এনজিও ‘দ্য ডেমোক্রেসি ফোরাম’ আয়োজিত ‘তালিবানের অধীনে নারী/মানবাধিকারের সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ কথা বলেন তারা। এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ওয়েবিনারে আফগানিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন, আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস এবং দ্য ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার সংকলিত এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে ফোরামের সভাপতি লর্ড ব্রুস বলেন, তালেবানরা গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে যে মানবাধিকার অর্জন করেছিলো তা ক্রমাগত ধ্বংস করছে।

যদিও দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের সময় তালেবান বলেছিলো যে তারা নারীবিদ্বেষী কোন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে না এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে না। তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের কথায় আশ্বস্ত না হলেও এগিয়ে গিয়েছিলো চীন পাকিস্তান৷ তার তালেবানের বিজয়ে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করে। এ বিষয়ে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ডক্টর সি ক্রিস্টিন ফেয়ার বলেন, উইঘুর ইস্যুতে তালেবান চুপ থাকবে সেই শর্তে গোষ্ঠীটির ব্যপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করছে বেইজিং। এ ছাড়া দেশটির বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিরল ধাতুর খনিও তাদের আকৃষ্ট করেছে।

ওয়েবিনারে চীন ও পাকিস্তান ইস্যু নিয়ে আফগানিস্তান ও সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. নূরলহাক নাসিমিও কথা বলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও ইরান আফগানিস্তানের জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তিনি আশা করেছিলেন যে, চীন একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না। কিন্তু তারা তাই করেছে। বর্তমানে মানবিক বিপর্যয়ে আফগান জনগণ। আসন্ন শীতে এই বিপর্যয় আরও বাড়বে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

ইকুয়ালিটি ফর পিস অ্যান্ড ডেমোক্রেস্যার প্রতিষ্ঠাতা এবং আফগানিস্তানের সাবেক খনি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী নার্গিস নেহান বলেন, তালেবান গত ২০ বছর আগে যেমন ছিলো তারা তেমনি আছে। কিন্তু এই ২০ বছরে পাল্টে গেছে আফোগান সমাজ, নারী ও তরুণরা। তারা সুযোগ পেলেই রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তালেবানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। দিন দিন এটা বড়বে এবং তালেবানের জন্য এটা চ্যালেঞ্জিং হবে। আর সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে অন্যান্য গোষ্ঠীও তালেবানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে বলে মন্তব্য করেন নার্গিস নেহান।

এ ছাড়া তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, যারা আফগানদের ফেলে গেছে, তারা দেশটির নারী, মানবাধিকারকর্মী ও নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াবে, কারণ তাদের সেই বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নারীদের প্রতি তালেবানের এমন দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা কর‍তে গিয়ে সমাজ বিজ্ঞানী সিপ্পি আজারবাইজানি মোগাদ্দাম বলেন, তিনি তালেবানের প্রথম শাসনামলে তাদের পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, তালেবান নারীদের বাইরে আসতে না দিলেও ঘরে যে তাদের নির্যাতন করে এমনটা নয়। তারা কেবল মনে করে- নারীরা বাইরে গেলে ফেতনা সৃষ্টি হয়। তারা মেয়েদের স্কুলেও যেতে দেয়, যদি সেটা পুরুষদের দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকে। নারীদের প্রতি তালেবানের এমন মনোভাবের ক্ষেত্রে, আজারবাইজানি -মোগাদ্দাম তালেবানদেরকে অন্যান্য ইসলামী সমাজের সাথে তুলনা করেছেন। যেমন- পাকিস্তান, ইরান, সৌদি আরব; যারা নারীদেরকে একটি বিভ্রান্তিকর, দূষিত প্রভাব হিসাবে দেখে। ফলে, পাবলিক প্লেস থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখে, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

এমন পরিস্থিতিতে সাবেক আফগান কূটনীতিক নাজিফা হকপাল বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রসংশা কুড়িয়েছ। হকপাল বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তাদের সক্রিয় সমর্থন করা। এ ছাড়া আফগানের ওপর তাদের নজর রাখা উচিত। দেশটিতে মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত, বিশেষ করে নারীর অধিকারের বিষয়ে তাদের তৎপর থাকা উচিত। এতে তালেবানকে কিছুটা হলেও জবাবদিহি করানো যাবে বলে মত দেন সাবেক এই কূটনীতিক। সূত্র: এএনআই

বৈশাখী নিউজ/  জেপা