যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ যুবক আহমদ আরবারি হত্যা মামলার জুরি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু

আপডেট: October 19, 2021 |

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ২৫ বছর বয়সি কৃষ্ণাঙ্গ যুবক আহমদ আরবারিকে গুলি করে খুন করেন তিন শ্বেতাঙ্গ।

আহমদ তখন জগিং করছিলেন। অভিযুক্তদের প্রথমে গ্রেফতার করেনি স্থানীয় পুলিশ। কিন্তু এ ঘটনার আড়াই মাস পর আরবারিকে গুলি করার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় নড়েচড়ে বসে তারা। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।

৭ মে গ্রেফতার করা হয় তিন অভিযুক্ত- ৬৪ বছর বয়সি গ্রেগরি ম্যাকমাইকেল, তার ৩৪ বছরের ছেলে ট্র্যাভিস এবং তাদের প্রতিবেশী ৫০ বছর বয়সি উইলিয়াম ব্রায়ানকে।

তিনজনের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা রুজু করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ড হতে পারে। সোমবার মামলার জুরি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে শুনানি-পর্ব শুরু হবে।

কেন খুন করা হয়েছিল আহমদকে? অন্যতম অভিযুক্ত, সাবেক পুলিশ গ্রেগরি ম্যাকমাইকেল প্রথমে দাবি করেছিলেন, সেই সময়ে তাদের এলাকায় চুরির ঘটনা খুব বেড়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাওয়া সিকিউরিটি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দুষ্কৃতির যে চেহারা স্থানীয়রা দেখেছিলেন, আহমদ নাকি সে রকমই দেখতে।

জর্জিয়ার তৎকালীন আইন অনুযায়ী, যে কোনো সাধারণ মানুষ এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারে। ম্যাকমাইকেলরা আরবারিকে গ্রেফতারই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আরবারি তাদের বাধা দেন— এমনকি তাদের কিল-চড়ও মারেন। গ্রেগরির কাছে বন্দুক ছিল। ‘আত্মরক্ষা’র জন্যই তিনি গুলি ছোড়েন।

এপ্রিলে আহমদকে গুলির ভিডিওটি প্রকাশ্যে এলে দেখা যায়, গ্রেগরির দাবি ঠিক নয়। ভিডিওটি তুলেছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত উইলিয়াম ব্রায়ান।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ফুটপাত ধরে জগিং করছেন আহমদ, আর গাড়িতে চেপে তাকে অনুসরণ করছেন বাবা-ছেলে গ্রেগরি ও ট্র্যাভিস।

একটু দূরে, আরেকটি গাড়িতে রয়েছেন ব্রায়ান। ভিডিওটি তিনিই করছিলেন। অনুসরণ করতে করতে আহমদকে কটূক্তি করে যাচ্ছিলেন গ্রেগরিরা।

কিছুক্ষণ এ রকম চলার পর গাড়ি থেকে নামেন তিনজন। আহমদকে ঘিরে ধরেন তারা। চারজনের মধ্যে প্রচণ্ড কথা কাটাকাটি হতে থাকে। একপর্যায়ে আহমদকে ধাক্কা মারেন গ্রেগরি।

তাকে পাল্টা মারার চেষ্টা করে আহমদ। তার পরে গ্রেগরি বন্দুক বের করে পর পর তিনবার আহমদকে গুলি করেন। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি। তখন গাড়িতে উঠে চলে যান বাকি তিনজন।

কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে আহমদকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ময়নাতদন্তে জানা যায়, খুব কাছ থেকে করা দুটি গুলি আহমদের হৃদযন্ত্র এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছিল। আর একটি গুলি লেগেছিল তার হাতে। ঘটনার সময় আহমদ কোনো রকম নেশা করেননি, এ কথাও জানা যায় ময়নাতদন্তে।

আহমদ-হত্যার ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর অভিযুক্তদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, এই অভিযোগে উত্তাল হয়েছিল ব্রুন্সউইক। পরিস্থিতি সামলাতে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

পরিস্থিতি আরও পাল্টে যায় ২৫ মের পর। মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাঁটুর চাপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান আরেক কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড।

নির্বিচারে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে মুখর হয় গোটা যুক্তরাষ্ট্র। সেই আন্দোলনের আঁচ লাগে আহমদ-মামলাতেও। শুধু তাই নয়, এ বছর মে মাসে জর্জিয়ার ‘অ-পুলিশি গ্রেফতার’ আইনটিও বাতিল করে দেওয়া হয়।

এই আইনের বলেই আহমদকে গুলি করেছিলেন ম্যাকমাইকেল। এ বছর আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টুইট করেছিলেন, একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রাণের ভয় না করে জগিং করতে পারবেন— এটিই তো কাম্য!

আহমদের বাবা ৫৮ বছর বয়সি মার্কাস আরবারির কথায়, আমার ছেলেকে মারার একটিই কারণ ছিল- সে কৃষ্ণাঙ্গ!

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, শুনানির প্রত্যেক দিন আদালতে হাজির থাকবেন।

মার্কাস বলেন, ধর্মের অনুশাসন আমাকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দিচ্ছে না। কিন্তু আমার ভেতরে প্রচণ্ড রাগ জমা হয়েছে। আশা করব, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর