ধানের দাম কমেছে রাজশাহীতে , প্রভাব নেই চালে
রাজশাহীর বাজারে ধানের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে মণপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে। ভরা মৌসুমে ধান-চালের দাম বেশি হওয়ার কারণ উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেওয়ার পরপরই ধানের দাম কিছুটা কমলো। তবে চালের দামে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহের উপর ভিত্তি করে চালের বাজার নির্ধারিত হয়। এখন পর্যন্ত চালের সরবরাহ তেমন বাড়েনি। এ কারণে চালের দামও কমেনি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চালের দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে।
বুধবার (১ জুন) রাজশাহীর কয়েকটি উপজেলায় ধানের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোকামগুলোতে গত তিনদিন আগেও ধানের সরবরাহ অনেক কম ছিল। সে সময় প্রতিমণ আঠাশ ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১ হাজার ৩০০ থেকে সাড়ে ১ হাজার ৪০০ টাকা। জিরা বা মিনিকেট ধান বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ সাড়ে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। যা মঙ্গলবার (৩১ মে) ও বুধবার (১ জুন) মণপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। প্রতিমণ আঠাশ ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে সাড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা। জিরা বা মিনিকেট ধান বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।
ধানের পাইকারি ক্রেতারা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে ধান কাটারপর এ সময়ে মোকামগুলোতে প্রচুর ধান থাকে। এ কারণে ধানের দামও কম থাকে। কিন্তু এখন যে ধান বাজারে এসেছে তার পরিমাণ কম। এর মধ্যে চালের বড় বড় মিল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনে মজুদ করছেন।
পবা উপজেলার রবিউল ইসলাম নামের পাইকারি ক্রেতা বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। প্রতি হাটে ২০ থেকে ৩০ মণ কিনে সেটা শুকিয়ে বাজারে চাল বিক্রি করি। বড় মিল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনে নিচ্ছেন। এর মধ্যে ধানের সরবরাহ কম। এ কারণে বিগত মৌসুমে যে ধান প্রতিমণ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটা এখন সাড়ে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪৪৫, ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার (৩১ মে) থেকে মণপ্রতি ১০০ টাকা কমেছে।
এদিকে, ধানের দামের অজুহাতে নগরীর বাজারে বৃদ্ধি পাওয়া চালের দাম কমার কোনো আভাস নেই। বুধবার (১ জুন) নগরীর বাজারে প্রতিকেজি আঠাশ চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা। জিরা বা মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকা।
‘এপি চাউল ভাণ্ডার’-এর মালিক মিলন জানান, গত এক সপ্তাহে চালের দাম উঠানামা করেনি। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা দাম বেড়েছিল। সরবরাহ বাড়লে চালের দাম বাড়বে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে দাম দু’এক টাকা কমতে পারে।
পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ‘সততা চাউল ভাণ্ডার’-এর ম্যানেজার সোলাইমান আলী জানান, তারা ৮৪ কেজি বস্তার আঠাশ চাল ৫ হাজার টাকা এবং জিরা বা মিনিকেট চাল ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এটা নতুন চাল।
তাদের কাছে পুরোনো চাল নেই। পুরোনো চালের বস্তাপ্রতি আরও ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি। আর ধানের দাম কমেছে। এর প্রভাব এখনো চালের বাজারে পড়েনি। সামনে হয়তো কমতে পারে।
রাজশাহীতে বড় বড় মিল মালিকদের অনেকেই অবৈধভাবে মজুদ বাড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ফায়দা নিচ্ছেন এমন অভিযোগ ক্ষুদ্রব্যবসায়ী, চালের খুচরা বিক্রেতাসহ ক্রেতাদের। যার সত্যতাও স্বীকার করছেন রাজশাহী ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. দিলদার মাহমুদ। তিনি জানান, জেলায় বৈধ মিল রয়েছে ১৪৮টি। এর বাইরে অনেক মিল অবৈধভাবে আছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান।
তিনি আরও জানান, বুধবার (১ জুন) গোদাগাড়ির এমন দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বৈধ মিলগুলোর মধ্যেও অনেকে অবৈধভাবে মজুদ করে। বিভিন্ন সময় পর্যবেক্ষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু এসব রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এককভাবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।