বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আজ

আপডেট: September 10, 2022 |

আজ ১০ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করো’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। বিশ্বে আত্মহত্যা প্রতিরোধে ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম।

বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৩ হাজার থেকে ৬৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। গত এক যুগে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুহার প্রতি লাখ মানুষে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৬ জন।

আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন একযোগে দিবসটি পালনে কাজ করছে। ২০১১ সালে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ এ দিবসটি পালন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক নির্যাতন, কলহ, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষা-প্রেমে ব্যর্থতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রাত্যহিক জীবনের অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয় ও মাদক ইত্যাদি কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।

২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ৮ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। সংস্থাটির মতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। এছাড়া এর প্রায় ১৫ থেকে ২০ গুণ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

দীর্ঘদিন ধরেই তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় কাজ করে আসছে আঁচল ফাউন্ডেশন। আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সংগঠনটি শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী। ৭৬ জন কলেজপড়ুয়া, ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এবং ৪৪ জন মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ছিলেন।

শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যটি প্রকাশ করে সংগঠনটি। দেশের স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ জরিপ করা হয়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। মোট আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১৯৪ জনই স্কুলশিক্ষার্থী। একইসাথে ১৪-১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার রয়েছে শীর্ষ স্থানে। জরিপ অনুযায়ী এ বয়সী আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ১৬০। অবাক করার বিষয় হলো ৭ বছরের শিশুও আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত আট মাসে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জনই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে ছেলে ৬০ শতাংশ এবং মেয়ে ৪০ শতাংশ। কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে ৭৬ জন এ পথ বেছে নিয়েছে, যার মধ্যে ৪৬.০৫ শতাংশ ছেলে এবং ৫৩.৯৫ শতাংশ মেয়ে।

সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী গত আট মাসে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩২.৯৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬৭.০১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

এদিকে এ সময়ের মধ্যে মাদ্রাসাপড়ুয়া ৪৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার করে। এদের মধ্যে ৩৯.২৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬০.৭১ শতাংশ মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।

সংগঠনটি ১৫০টা জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করেছে। ২০২১ সালে ১০১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

আত্মহত্যাকারীদের অবস্থান বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকায় গত ৮ মাসে শতকরা ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর