পৃথিবীর কেন্দ্রে নতুন কোরের সন্ধান

আপডেট: February 26, 2023 |

ক্রাস্ট বা ভূত্বক, ম্যান্টেল, তরল বহির্কোর এবং নিরেট অভ্যন্তরীণ কোর পৃথিবীর চারটি স্তর। এটাই এতদিন বলে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে অভ্যন্তরীণ কোরের ভেতরে নতুন আরও একটি কোর রয়েছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা নতুন এই কোরটি অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দুজন ভূতত্ত্ববিদ বলছেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোরের কেন্দ্রে ৪০০ মাইল পুরুত্বের এক নিরেট লোহার বল রয়েছে। এ সম্পর্কিত নতুন কিছু প্রমাণও তারা তুলে ধরেছেন চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক গবেষণায়।

গবেষণাটির প্রধান গবেষক থান-সন ফাম বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে, অভ্যন্তরীণ কোরের তুলনায় নতুন কোরের ভেতরের অংশটি কিছুটা আলাদা। আমরা মনে করি, এই দুই জায়গায় অণুর বিন্যাস যেভাবে রয়েছে, তা কিছুটা ভিন্ন।

গবেষকেরা মূলত পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র আরও ভালোভাবে বোঝার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ কোর নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। এ চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো পৃথিবীকে মহাকাশের ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়াও বিশ্বে প্রাণের সঞ্চারের বিষয়টিকেও সম্ভব করেছে এই চৌম্বক ক্ষেত্র।

ভূ-পদার্থবিদদের অনুমান, নতুন এই কোরটি ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তৈরি হয়ে থাকতে পারে। নতুন গবেষণায় গবেষকরা বলছেন, বহির্কোরের তরল উপাদান ধীরে ধীরে কঠিন পদার্থে রুপ নেয়ার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কোরের ব্যাস বেড়েছে। আর এই প্রক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন এবং প্রবাহ তৈরি হয়। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আবার পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র উৎপন্ন হয়।

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোরের আবিষ্কার হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। ১৯৩৬ সালে ডেনমার্কের ভূতত্ত্ববিদ ইঙ্গে লেহমান আবিষ্কার করেন এটি। তিনি জানান, পৃথিবীর কেন্দ্রটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার হাজার মাইল গভীরে অবস্থিত এবং গোটা পৃথিবীকে ১০০ ভাগে ভাগ করলে, সেটি হবে এক ভাগেরও কম।

এত গভীরে অবস্থান এবং তুলনামূলক ছোট আকারের জন্য বিজ্ঞানীরা এটিকে নিয়ে গবেষণায় ব্যবহার করেন এক অভিনব পন্থা। সরাসরি পরিমাপের ঝামেলায় না গিয়ে তারা ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট শক ওয়েভের তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখেন।

এভাবেই ২০ বছর আগে ভূকম্পনের তথ্য ব্যবহার করে গবেষকেরা প্রথমবারের মতো পঞ্চম স্তরের অস্তিত্বের ব্যাপারে জানান। সেসময় অবশ্য পুরোটাই ছিল প্রস্তাবনা স্তরে। বর্তমানের মতো এত প্রমাণাদি ছিল না।

ফাম বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও তথ্য-উপাত্ত সামনে আসায় অভ্যন্তরীণ কোরের ভেতরেও আরেকটি কোরের ধারণাকে আরও দৃঢ় করেছে। এটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে তার গবেষণা। নজিরবিহীন পরিমাণ ভূকম্পনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন তারা।

ভূ-পদার্থবিদ জন টারডুনো এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে গবেষণাটি সম্পর্কে বলেছেন, নতুন একটি স্তর যে রয়েছে, সে বিষয়টি আরও উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে এসেছে নতুন তথ্য-উপাত্তে।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর