পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারক গ্রেফতার

শাহজাহান আলী, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বগুড়ায় ডিবি পুলিশের অভিযানে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রতারক চক্রের মোঃ জাকির হোসেন (৫৫) নামের এক প্রতারককে গ্রেফতারসহ তার হেফাজতে হতে আত্নসাৎকৃত ৩ (তিন) লক্ষ টাকা জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

একটি প্রতারক চক্র কর্তৃক বগুড়াসহ অন্যান্য জেলায় পুলিশ ও সরকারি দপ্তরে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং পুলিশের অফিসার মিথ্যা পরিচয় প্রদান করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে বগুড়া সদর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হলে বগুড়া জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আক্তারের তত্তাবধানে ডিবি বগুড়ার ইনচার্জ (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ এর নেতৃত্বে ২৩মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিভিন্ন সময় বগুড়া ডিবির একটি চৌকস টিম বগুড়া সদর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তির নাম ও পরিচয়ঃ
মোঃ জাকির হোসেন(৫৫).পিতা মৃত-আব্দুস সালাম, মাতা-
জাহেরা বেগম,সাং চক সেকেন্দার,থানা-গাবতলী,জেলা-বগুড়া এ/ পি বাসা নং ৯৮/ ক,ওয়াড নং১৯,জলকর,থানা-কোতয়ালী জেলা-রংপুর। এসময় গৃফতারকৃত জাকির হোসেনের নিকট থেকে উদ্ধারকৃত আলামত হলো-১, পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষার প্রবেশ পত্রের ফটোকপি।২, জব্দকৃত ৩,০০,০০০/(তিন লক্ষ) টাকা।

বগুড়ার ডিবি’র (ওসি)সাইহান ওলিউল্লাহ জানান,গ্রেফতারকৃত আসামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,আসামী জাকির হোসেন তার সহযোগী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, পিতা-অজ্ঞাত, সাং- কাপাসিয়া, থানা-গোবিন্দগঞ্জ, জেলা-গাইবান্ধা এবং মোঃ সানা(৪০) পিতা-অজ্ঞাত,সাং- রাণীরপাড়া, থানা- সোনাতলা,জেলা-বগুড়াসহ আরো অজ্ঞাত আসামীদের সহিত যোগাসাজসে পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিলো।

মামলার বাদী মোঃ ইকবাল হোসেন(৫৫), পিতা-মৃত- আলহাজ্ব হবিবর প্রামাণিক,সাং বুজরুক মাঝিড়া, থানা- সদর,জেলা-বগুড়া এর ছেলে বগুড়া জেলার পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ, ডিসেম্বর-২০২২ এর প্রার্থী হিসাবে আবেদন করলে উক্ত বিষয়টি বাদীর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় আসামী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানতে পেরে তার বাড়িতে যান এবং বলেন যে, আমার পরিচিত লোক আছে তিনি আপনার ছেলেকে পুলিশের চাকরি পাইয়ে দিবে বিনিময়ে তাদের সর্বমোট ১৪(চৌদ্দ লক্ষ) টাকা দিতে হবে।

বাদী জানান যে আমার ছেলে মেধাবী।তার এমনিতেই চাকুরী হয়ে যাবে। তাছাড়া বর্তমানে পুলিশের চাকরি নিতে কোনো টাকা লাগে না। উক্ত কথা শোনারপ পরে আসামীগণ বাদীকে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন ও ভীতি প্রদর্শন করেন।

কোনো উপায়ন্তর না দেখে বাদী আসামীগণকে বলে আমাকে দুই এক দিন সময় দেন আমি ভেবে আমানাদেরকে জানাবো। পরবর্তীতে বাদীর ছেলে শারীরিক মাপ,কাগজপত্র যাচাই, শারীরিক, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।

উক্ত খবর পেয়ে আসামী আব্দুর রাজ্জাক অপর দুই আসামীসহ ভুক্তভোগীর নিকট আসে এবং প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে আসামী মোঃ জাকির হোসেন ভুক্তভোগীকে জানান তিনি পুলিশের বড় অফিসার তিনি চাইলেই বাদীর ছেলেকে পুলিশের চাকরি পাইয়ে দিতে পারবে এবং চাইলে চাকরি হতে বাদও দিতে পারবে।

আসামীগণ বাদীকে জানান যে টাকা ছাড়া তার ছেলেকে মেডিকেল টিস্টে বাদ দেওয়া হবে এবং আজকের মধ্যে তাদের ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে চাপ প্রদান এবং ভয়ভীতি প্রর্দশন করেন।

পরবর্তীতে আসামীদের প্রচন্ড চাপ ও ভয়ভীতির কারণে বাদী ভীত সম্ভ্রস্ত হয়ে গত ২১-০৩-২০২৩ তারিখে বগুড়া সদর থানাধীন পাকুরতলা, চন্ডিহারা মহাসড়ক সংলগ্ন থ্রী স্টার নামক হোটেলের সামনে আনুমানিক বিকাল ৪ টার দিকে আসামীগণকক নগদ ৫,০০ ০০০/( পাঁচ লক্ষ) টাকা এবং মোট ১৪,০০,০০০/চৌদ্দ লক্ষ) টাকার স্বাক্ষরসহ চেক এবং ভুক্তভোগীর ছেলের লিখিত পরীক্ষার প্রবেশ পত্রের ফটোকপি প্রদান করতে বাধ্য হন।

বাকী টাকা পরিশোধ করলে আসামীগণ বাদীর নিকট হইতে নেওয়া ১৪ লক্ষ টাকার স্বাক্ষরিত চেক ফেরত দিবেন বলে জানান।পরবর্তীতে বাদরী সন্দেহ হলে বাদী আসামীদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তারা কেউ পুলিশ অফিসার নন।সকলেই প্রতারক চক্রের সদস্য।

তখন বাদী বুঝতে পারেন যে,তিনি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন।

এ সংক্রান্তে বাদী বগুড়া সদর থানায় আসানীদের বিরুদ্ধে একটি এজহার দায়ের করেন ও বগুড়া সদর থানায় মামলা রুজু করা হয়।

এরপর টিম ডিবি বগুড়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামী জাকির হোসেনকে বগুড়ার সপ্তপদী মার্কেটের নিকট থেকে গ্রেফতার করে এবং তার নিকট থেকে আত্নসাৎকৃত ৩ (তিন) লক্ষ টাকা ও নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে।

আসামী জাকির হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে অন্যান্য পলাতক আসামীদের সহায়তা অর্থ আত্নসাৎ এর বিষয়টি স্বীকার করে।

ডিবির ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী জাকিরকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে।

বাকি অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতার সংক্রান্ত অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।