বগুড়ায় ডাকঘরে চাঞ্চল্যকর হত্যার একমাত্র আসামি গ্রেপ্তার

আপডেট: May 4, 2023 |

শাহজাহান আলী, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বগুড়ার প্রধান ডাকঘরের অফিস সহায়ক প্রশান্ত হত্যাকাণ্ড এবং চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় একমাত্র আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (০৩ মে) দিনব্যপী অভিযান চালিয়ে নওগাঁর সাপাহারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আাসামি শফিকুল ইসলাম নওগাঁ জেলার সাপাহারের পশ্চিম কমরডাঙ্গা এলাকার মৃত-আব্দুস সালামের ছেলে। এসময় তার কাছ থেকে ৬টি মোবাইল এবং ডাকাতির সময় পরিহিত র্শাট,প্যান্ট,জুতা ও ব্রেসলেট উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চুরি,ছিনতাই, ডাকাতিসহ মোট ৯ টি মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী তিনি তার নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান নিশিত করেন।

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল মধ্যরাতে নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালনকালে খুন হন অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্য। নিহত প্রশান্ত বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া হিন্দুপাড়া এলাকার প্রাণকৃষ্ণ আচার্য্যের ছেলে।

পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গত ১২ মার্চ মোটরসাইকেলযোগে নওগাঁ থেকে বগুড়ার আসেন শফিকুল ইসলাম। বগুড়ায় আসার পর তিনি তার মোটরসাইকেল বগুড়া জেলা ডাকঘরে পার্কিং করতে যায়।

লোকজন পোস্ট অফিস থেকে টাকা তুলে বের হচ্ছে এমন দৃশ্য দেখে তার মাথায় পোস্ট অফিসের ভোল্ট ভেঙে টাকা লুন্ঠন করার পরিকল্পনা জাগে।তিনি তখন পোস্ট অফিসের ভিতরে যান এবং ভোল্ট রুম, সিসি ক্যামেরার অবস্থানসহ বিভিন্ন স্হান পর্যবেক্ষন করেন।

পরে ১৫ই মার্চ আবারো বগুড়ায় এসে শফিকুল ইসলাম নিউমার্কেট থেকে হোন্ডা গ্লাভস, ট্রাউজার, গেঞ্জি এবং থানার পিছন থেকে বাবু মেশিনারিজ থেকে গ্রিল/ ভোল্ট কাটার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং এসএস পাইপের একটি খন্ড কেনেন।পরে টাকা কম পড়ে যাওয়ায় ওইদিন শহরের জিরো পয়েন্ট তিনমাথায় ইসলামি ব্যাংকের বুথ থেকে ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন এবং ডাকাতির জন্য কেনা মালামাল নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শফিকুল ২০ এপ্রিল আবারো বগুড়ায় আসে। সন্ধ্যা থেকে রাতগভির হওয়া পর্যন্ত ঘুরে বেড়ায়। ওইদিন মধ্যরাতে পোস্ট অফিসের ওয়াল টপকে ভিতর প্রেবেশ করে এক কোনায় আপেক্ষা করতে থাকে।

পরেরদিন সকালে পোস্ট অফিসের গার্ড বাথরুমে গেলে শফিকুল তার যন্ত্রপাতির ব্যাগ নিয়ে তিতরে ঢোকে এবং সিঁড়ি ঘরে লুকিয়ে থাকে। এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে গার্ড হাতমুখ ধৌত করতে গেলে শফিকুল ভোল্ট রুমের দিকে যায় এবং জানালার গ্রিল ভেঙে ভোল্ট রুমে প্রবেশ করে।

শফিকুল ভোল্ট রুমে প্রবেশ করে ভোল্ট রুমের সিসি টিভির ক্যামেরার লাইন কেটে দেয় এবং ভোল্ট কাটে। কিন্তু টাকার বাক্স দুরে থাকায় টাকা নিতে পারে না। পরে সবকিছু ওইখানে রেখে সন্ধ্যার দিকে মূলগেট টপকে বাইরে বের হয়ে তার নওগাঁর ভাড়া বাসায় চলে যায়।

একদিন নওগাঁর ভাড়া বাসায় অবস্থান করে রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান।

পরের দিন ঈদের নামাজ পড়ে বাড়িতেই অবস্থান করে।ঈদের পরের দিন বিকালে শফিকুল মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে আবারও নওগাঁর ভাড়া বাসায় আসেন এবং সেখানে মোটরসাইকেল গ্যারেজে রেখে বাস যোগে রাত ৯টার দিকে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে শহরের শহরের চারমাথায় এসে নামে।

চারমাথা থেকে সিএনজি যোগে সাতমাথায় আসে।সাতমাথায় নেমে মধ্যরাত পর্যন্ত পোস্ট অফিসের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। রাত ২টার দিকে শফিকুল চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে ওয়াল টপকে পোস্ট অফিসের ভিতরে প্রবেশ করে।কিন্তু কেঁচিগেট লাগানো থাকায় পোস্ট অফিসের বারান্দার গ্রিলের দুইটি পাতি রেঞ্জ দিয়ে ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে।

সেখানে কর্তব্যরত গার্ড জেগে থাকায় শফিকুল কার্টুন ও বস্তার আড়ালে ঘন্টাখানিক অপেক্ষা করে। এক সময় সতর্কতার সাথে সিসি টিভির ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে সোজা ভোল্ট রুমে চলে যায়। ভোল্ট রুমের টাকার বাক্স কাছে নিয়ে আসায় তাতে কিছু না থাকায় সে অন্য ২/৩ টা রুমের তালা কেটে ভেতর থেকে একটি লম্বা রড নিয়ে আসে। রুমের তালা কাটার শব্দে কর্তব্যরত গার্ড প্রশান্ত জেগে যায় এবং প্রশান্তের সাথে শফিকুলের ধস্তাধস্তি হয়।

তার কাছে থাকা এসএস পাইপ দিয়ে প্রশান্তের মাথায় আঘাত করে ও গলা চেপে ধরে থাকে এতে ঘটনাস্থলেই প্রশান্ত মারা যান।

শফিকুল পুনরায় ভোল্ট রেমে গিয়ে ওই,রড দিয়ে ভোল্ট রুমে থাকা র‍্যাকটি কাছে নিয়ে এসে র‍্যাকে থাকা ৮ (আট) লাখ টাকা তার কাছে থাকা ব্যাগে তুলে নেয়ে।

পরে সকাল ৭ টার দিকে শফিকুল নিহত গার্ডের পকেটে থাকা কেঁচিগেটের চাবি বের করে নিয়ে,ল ভিতরের গেট এবং মূল গেটের তালা খুলে বাইরে বের হয়ে বাইর থেকে মূল গেটে তালা দিয়ে হয়।পরবর্তীতে শহিদুল সাতমাথা জিরো পয়েন্ট থেকে অটোরিকশা যোগে চারমাথা যায়।এরপর চারমাথা হতে বাস যোগে নওগাঁয় যায়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, নওগাঁয় গিয়ে সদর উপজেলায় অবস্হিত জলিল মার্কেটের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে তার একাউন্টে দুই লাখ এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে তার একাউন্টে তিন লাখ ৭৬ হাহার টাকা জমা রেখে,নওগাঁর ভাড়া বাসায় যান।পরে সেখানকার গ্যারেজ থেকে তার মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি সাপাহারে চলে যায়।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার বলেন,গ্রেফতারকৃত আসামি একজন পেশাদার চোর, ডাকাত এবং ছিনতাইকারী। তিনি এর আগে ২০১৯ সালে ডিএমপি বনানী থানা এলাকায় জনতা ব্যাংকের ভোল্ট কেটে টাকা লুন্ঠন করার সময় ধরা পড়েছিল।

তাছাড়া তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় দোজানঘর চুরি,বিভিন্ন স্হানে ডাকাতি,ছিনতাইসহ পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতও ডাকাতি ও ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে জেল খেটেছে বলে স্বীকার করেছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিকে আদালতে পাঠানো হবে।আর এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা আরও তদন্ত করা হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ট্রাফিক) হেলেনা আকতার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম, সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী, ডিবির ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ, শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানীসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর