রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশ
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বুধবার দুপুরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু এবং জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনসহ বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজভূমি রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের অসহযোগিতা ও বিদ্যমান অন্যান্য সমস্যাগুলো তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করেন। রোহিঙ্গা সঙ্কটের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের দায়বদ্ধতার ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কেও মহাসচিবকে অবহিত করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করার বিষয়ে জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের মহাসচিবের অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততার অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী।
জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার কারণে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তবে বরাবরের মতোই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উদারতা ও মানবিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের সক্রিয় কার্যক্রমের জন্য সাধুবাদ জানান আন্তোনিও গুতেরেজ। তিনি বলেন, আসন্ন ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে বাংলাদেশের সক্রিয় এবং ফলপ্রসূ অংশগ্রহণের দিকে তাকিয়ে আছে জাতিসংঘ। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ যে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে সে জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ এ বৈঠকে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
একইদিন সন্ধ্যায় জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া এর সাথেও একটি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াদি উঠে আসে বৈঠকের আলোচনায়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
ল্যাক্রুয়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অব্যাহত অংশগ্রহণ ও সাফল্যের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও বেশি নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণ করবে মর্মে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল তাঁর প্রত্যাশার কথা জনান। এছাড়া মহাসচিবের অ্যাকশন ফর পিসকিপিং এজেন্ডায় বাংলাদেশের সার্বিক সহায়তার বিষয়টি স্মরণ করে তিনি এ এজেন্ডার বাস্তবায়নে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে জানান, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে নারী শান্তিরক্ষী বৃদ্ধি করছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। এছাড়া মহাসচিবের অ্যাকশন ফর পিসকিপিং এজেন্ডায় একটি ‘চ্যাম্পিয়ন কান্ট্রি’ হিসেবে বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে কাজ করবে মর্মে নিশ্চয়তা দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
জাতিসংঘের পিসকিপিং অপারেশনের উচ্চ পর্যায়ের পদে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অনুরোধ জানালে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এটি বিবেচনার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কারিগরী সহায়তা, সর্বাধুনিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ এবং মিনিষ্টার ড. মো. মনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন