হাতীবান্ধায় নৌকা ও ঈগলে ভর দিয়ে অস্তিত্ব সংকটে জাতীয় পার্টি

আপডেট: December 31, 2023 |

রকিবুল হাসান রিপন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে নেতৃত্ব শূন্য জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীরা বিভক্ত হয়ে নৌকা ও ঈগল মার্কার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন।

প্রকাশ্যে সমর্থন ও ভোটের মাঠে কাজ করায় অস্তিত্ব সংকটে পরেছে হাতীবান্ধা উপজেলা জাতীয় পার্টি।

গত ২৫ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য এমজি মোস্তফা ও হাতীবান্ধা উপজেলা আহবায়ক আবুল কাশেম মিয়ার নেতৃত্ব বেশ কিছু নেতাকর্মী ধুবনী লাল স্কুল মাঠসহ বিভিন্ন জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধানের ঈগল মার্কার জনসভায় যোগদান করে জাতীয় পার্টির সমর্থন ঘোষণা করেন।

এছাড়া সকলকে ঈগল মার্কায় ভোট দিয়ে আতাউর রহমান প্রধানকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।

এরই প্রেক্ষিতে ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির অন্য একটি গ্রুপ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহবায়ক আরিফ শাহরিয়ার সিজার, সাবেক সদস্য সচিব কে এ এম শরিফুল ইসলাম রুবেল, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য রেজাউল করিম বাগ, উপজেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি আসাদুজ্জামানসহ কিছু নেতাকর্মী সংবাদ সম্মেলন করে নৌকা মার্কায় সমর্থন ঘোষণা করেন।

লালমনিরহাট-১ আসনে ৪ বারের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম জয়নুল আবেদীন সরকারের আমলে শক্ত অবস্থান ছিল জাতীয় পার্টির।

নীতি নির্ধারকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে তিনি দল পরিবর্তন করলে জাতীয় পার্টির দূর্গ ভাঙ্গতে শুরু করে।

অনেক চরই উতরাই পেরিয়ে পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল হাল ধরে সকল কর্মকাণ্ড ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে রংপুর-৪ আসনে মনোনয়ন দেয় পার্টি।

এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান হাবিবুল হক বসুনিয়া। যিনি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মতো জনপ্রিয়তা বা সাংগঠনিক দক্ষতার কোনটিই তার নেই।

তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেন তিনি। পার্টির নীতি নির্ধারকদের দক্ষতা ও দূরদর্শিতার অভাবের ফলে দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়ে আস্থার সংকট তৈরী হয়েছে জাতীয় পার্টিতে।

লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম) সহ রংপুর অঞ্চল বরাবরই জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও, ১৯৯৬ সালের পর থেকে এই এলাকায় কমতে থাকে দলটির আসন সংখ্যা।

এখন জাতীয় পার্টির ঘাঁটিতে শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ। বিশ্লেষকদের মতে জনগণের কাছাকাছি থাকতে না পারায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে জাতীয় পার্টি। অন্যদিকে, বিরোধী দলে থাকতে না পারলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে দলটি।

বিগত সময়ের নির্বাচনি ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে রংপুর বিভাগের ৩৩ টি আসনের অধিকাংশই দখলে ছিলো জাতীয় পার্টির।

তবে ৯৬ এর পর থেকে কমতে থাকে দলটির আসনের সংখ্যা আর শক্ত অবস্থান তৈরি করে আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আসন কমে উল্লেখযোগ্য হারে।

জাতীয় পার্টির নেতাদের সকাল এবং বিকেলে কথার যে অসঙ্গতি, এটার কারণেই তাদের মধ্যে একটি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

জাতীয় পার্টি যদি বিরোধী দলে থাকতে পারে, তাহলেই তারা এই অঞ্চলে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারবে। আর না হলে একসময় এই দলটি অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে।

হাতীবান্ধা উপজেলা জাতীয় পার্টির বিভক্ত, নৌকা ও ঈগল মার্কার প্রার্থী কে সমর্থন বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য রেজাউল করিম বাগ বলেন, এম জি মোস্তফার মত ব্যক্তির কারনে দলের বিভক্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

ওনার নেতৃত্বে যারা জাতীয় পার্টির নাম ভাঙ্গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধানের ঈগল মার্কার জনসভায় গিয়েছে তাদের ব্যক্তিত্ব নেই কারন এমজি মোস্তফা একজন বিতর্কিত লোক যিনি জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিল।

সেখানে আখের গোছাতে না পেরে আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে লালমনিরহাট জেলা কমিটির ৮৭ নম্বর সদস্য হন।

হাতীবান্ধা জাতীয় পার্টির কোন কমিটি নেই কিন্তু তিনি পার্টির কিছু লোককে প্রলোভিত করে ঈগল মার্কার নির্বাচন করে নিজের অর্থনৈতিক সুবিধাসহ জাতীয় পার্টির বদনাম করার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির সাবেক আহবায়ক আরিফ শাহরিয়ার সিজার বলেন, আমাদের হাতীবান্ধা উপজেলায় জাতীয় পার্টির কোন কমিটি নেই।

কিছু মানুষ নিজেকে জাতীয় পার্টির নেতা পরিচয় দিয়ে ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। জাতীয় পার্টি ঈগলকে সমর্থন দেয়নি।

যে সব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচন করছেন সেখানে আ’লীগ জাতীয় পার্টিকে সম্মান দেখিয়ে আমাদের পক্ষে কাজ করছেন। লালমনিহাট-১ আসনে জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থী নেই।

সেহেতু আমরা নৌকাকে সমর্থন করছি। সাধারণ জনগণকে তাদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য এমজি মোস্তফা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে লালমনিরহাট-১ আসনের মানুষ সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আগে এই আসনটি জাতীয় পার্টি দখলেই ছিল।

পরে আওয়ামীলীগ দখলে নিলেও এই দুটি উপজেলায় কোন উন্নয়ন হয়নি। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনায়  আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি।

লালমনিরহাট-১ আসনে জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি, সাংগঠনিক ভাবে হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছেন তারা।

তবে পার্টির তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা মনে করেন দলের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ক্রমেই দুর্বল হয়ে অস্তিত্ব  বিলীনের পথে জাতীয় পার্টি।

স্থানীয় নেতাদের গ্রুপিং এবং অন্য দলের প্রার্থীর জনসভায় যোগ দিয়ে  জাতীয় পার্টির ভোটারদের বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। এতে পার্টির কর্মী সমর্থকের মধ্যে ভাঙ্গনের শুর উঠেছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর