মেট্রোরেলে ঢিল : শনাক্ত হয়নি আসামি, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল

আপডেট: March 19, 2024 |

মেট্রোরেলে ঢিল ছুড়ে কাচ ভাঙার ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় এক বছর। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে, ঘটনার সত্যতাও মিলেছে। তবে প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি অভিযুক্ত অজ্ঞাতনামা আসামি ভবনের ছাদ থেকে হঠাৎ ঢিল ছুড়ে মারায় কেউ আসামি সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যও দিতে পারেনি।

এরই মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে রাজধানীর কাফরুল থানা পুলিশ। চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ এসব তথ্য উল্লেখ করেছে।

২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে মেট্রোরেল লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। ওই ঘটনায় ১ মে মেট্রোরেলের লাইন অপারেশন শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল কাদের বাদী হয়ে রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন। ঢিল ছোড়ায় মেট্রোরেলের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি কাফরুল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল বাতেন আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সোমবার (১৮ মার্চ) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল ইসলাম পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেন।

মেট্রোরেলে ঢিল ছোড়ার ঘটনা প্রাথমিকভাবে সত্য প্রতীয়মান হয়েছে

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার অভিযোগ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এর ৩৫ ও ৪৩ ধারাসহ দণ্ডবিধি ৪২৭ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রতীয়মান হয়েছে। কিন্তু মামলা হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কলাকৌশলে তদন্ত অনুসন্ধান করি এবং সংঘটিত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো ট্রেন রেক-৪-এ স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণসহ ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

ঢিলকাণ্ডে মেট্রোরেলের ১০ লাখ টাকার ক্ষতি বলে দাবি কর্তৃপক্ষের

আসামি শনাক্ত করার মতো সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি বাদী-মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

প্রতিবেদনে পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন জানান, মামলার বাদী জিজ্ঞাসাবাদে বারবার জানান, ঘটনার সময় ট্রেনটি চলন্ত অবস্থায় থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামি দূর থেকে হঠাৎ ঢিল নিক্ষেপ করে। সে কারণে মেট্রো ট্রেন রেক-৪ এর অভ্যন্তরের সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে বাদীপক্ষ ঘটনায় জড়িত আসামি শনাক্ত করার মতো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি। অভিযুক্ত অজ্ঞাতনামা আসামি ভবনের ছাদ থেকে হঠাৎ ঢিল নিক্ষেপ করায় স্থানীয় লোকজন কেউ আসামি সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।

সিসি ক্যামেরা চেক করেও আসামি শনাক্ত করা যায়নি

প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলা হওয়ার পর থেকে কলা-কৌশলে ব্যাপক তদন্ত অনুসন্ধানের পরও এখন পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু জিজ্ঞাসাবাদে বাদী বা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সংঘটিত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো ট্রেন রেক-৪ এর অভ্যন্তরে স্থাপিত সিসি ক্যামেরা চেক করে ঘটনায় জড়িত আসামি শনাক্ত করার মতো কোনো তথ্য দিতে পারেনি, সেহেতু মামলাটি আরও তদন্ত করে ভবিষ্যতে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হবে

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, মামলাটির তদন্ত অহেতুক মুলতবি না রেখে ভবিষ্যতে ঘটনায় জড়িত আসামি শনাক্ত ও গ্রেফতার করা সম্ভব হলে বা ঘটনা উদঘাটন করার মতো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে পুনরুজ্জীবিত করা হবে মর্মে আপাতত মামলাটি নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে তদন্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য ধারা-৩৫/৪৩ মেট্রোরেল আইন, ২০১৫; তৎসহ 427 The Code, 1860, তাং-২২-০২-২০২৪ দাখিল করলাম।

ভবনের ছাদ থেকে ছোড়া ঢিলে জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়

ঢিল ছোড়ায় ক্ষতি প্রায় ১০ লাখ, মামলায় একাধিক আসামি

জানা গেছে, মেট্রোরেলের একটি কোচ আগারগাঁও থেকে উত্তরা-উত্তর স্টেশনে যাওয়ার পথে কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে ৩০ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। ঢিলটি মেট্রোরেলের জানালায় আঘাত হানে। ঘটনাস্থলের পাশে বহুতল ভবন রয়েছে। কোনো দুর্বৃত্ত পূর্বপাশের কোনো ভবন বা ছাদ থেকে ঢিল ছুড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঘটনায় ওই বছরের ১ মে মেট্রোরেলের লাইন অপারেশন শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল কাদের মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এর ৩৫ ও ৪৩ ধারাসহ দণ্ডবিধি ৪২৭ ধারায় কাফরুল থানায় মামলা করেন। মামলায় একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মেট্রোরেলের প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাফরুল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল বাতেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেট্রোরেলে ঢিল ছোড়ার ঘটনাটি সত্য বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিভিন্ন কলা-কৌশল ব্যবহার করেও আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।’

কাফরুল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আলম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের ঢিল ছোড়ার মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আদালতও প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেছেন।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর