বাংলাদেশকে হারিয়ে টেষ্টে সিরিজ জিতল ভারত
কানপুরে প্রথম ইনিংসে ভারতের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের পর বাংলাদেশের পরাজয় ছিল সময়ের ব্যাপার। পঞ্চম দিনে এক সেশনের বেশি সময় বাকি থাকতেই আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেললো ভারত। বাংলাদেশের দেওয়া ৯৫ রানের লক্ষ্য ১৭.২ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় রোহিত শর্মার দল। জয় পায় ৭ উইকেট। আর তাতে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জিতে বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করলো তারা।
ম্যাচের চার ইনিংসে খেলা আড়াইদিন। ওভারের হিসেবে ১৭৩.২ ওভার। ২ উইকেটে ২৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ শুরুতেই হারায় প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হককে। সেই ধাক্কা সামলে ৫৫ রানের জুটি গড়েন সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত।এরপর শুরু ব্যাটিং ধ্বস। লিটন দাস ফেরেন ২ রানে, শূন্যে সাকিব আল হাসান। টিকতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। একপ্রান্তে লড়াই করে যাওয়া মুশফিকুর রহিমকে ফেরান বুমরাহ। তাতেই ৫৫ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।রান তাড়ায় নেমে দ্রুত রোহিত (১০) ও গিলের (৬) উইকেট হারায় ভারত। নাকি পথটা সহজ করে দেন জয়সওয়াল ও কোহলি। ৪৫ বলে ৫১ রান করেন জয়ের কাছে গিয়ে আউট হন জয়সওয়াল। ভিরাট কোহলি অপরাজিত থাকেন ২৯ রান করে।দুই ইনিংসে ঝড়ো ব্যাটিং করে ম্যাচের সেরা জয়সওয়াল। চেন্নাইয়ের সেঞ্চুরি ও সিরিজে ১১ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা রবিচন্দ্রন অশ্বিন।টেস্ট সিরিজ শেষে দুই দল এখন খেলবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। রোববার (৬ অক্টোবর) গোয়ালিয়রে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিয়ে শুরু হবে সিরিজ।
রোহিত শর্মাকে ফেরানোর পর শুভমান গিলকে বেশিক্ষণ টিকতে দিলেন না মিরাজ। ৬ রানে তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই অফস্পিনার।মিরাজের বল আঘাত করে গিলের প্যাডে। জোরালো আবেদনে আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার। কিন্তু ব্যাটে বল লেগেছে মনে করে রিভিউ নিয়েছিলেন গিল। তাতে কাজ হয়নি। রিভিউতে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষেই গেছে।
গিলের বিদায়ের পর উইকেটে এসেছেন বিরাট কোহলি। ভারতের রান ৪১/২।বাংলাদেশের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতের যে পরিকল্পনা ছিল সেই অনুযায়ী ব্যাটিং করছিলেন রোহিত শর্মা। কিন্তু বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন ভারতীয় দলপতি।
মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ওভারের প্রথম বলে লং লেগে হাসান মাহমুদকে ক্যাচ দিয়েছেন রোহিত। আউটের আগে ৭ বলে করেছেন ৮ রান।এমন বল যে কোনো বোলারের জন্যেই স্বপ্নের। ব্যাটারের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। সেই দুঃস্বপ্নই মুশফিকুর রহিমকে উপহার দিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। গুড লেংথে বলটা ছিলো স্লোয়ার, সেই সঙ্গে অফ কাটার। মুশফিক বুঝতেই পারলেন না। কিছু বুঝার আগেই উড়িয়ে নিয়ে গেল মিডল স্টাম্পের বেল!
৬৩ বলে ৭ চারে ৩৭ রান করেছেন মুশফিক। তার আউটের সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ ওভারে ১৪৬ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ৯৫ রান। দুই সেশন ব্যাট করে ৯৫ রান করতে পারলেই বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিবে রোহিত শর্মার দল।
ভারতের হয়ে সমান তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ, অশ্বিন ও জাদেজা। ১টি উইকেট নিয়েছেন আকাশ দীপ।
টিকতে পারলেন না তাইজুল ইসলামও। জসপ্রীত বুমরাহর বল ডিফেন্স করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন এই টেল এন্ডার ব্যাটার। ১১ বল খেলেও কোনো রান করতে পারেননি তাইজুল।ক্রিজে নতুন ব্যাটার খালেদ আহমেদ। অন্য প্রান্তে মুশফিকুর রহিম।জসপ্রীত বুমরাকে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম উপহার দিয়ে বিদায় নিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। গুড লেংথের বলটি মিরাজের ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটকিপার ঋষভ পন্তের গ্লাভসে।কানপুর টেস্টই সম্ভবত সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। তবে ব্যাট হাতে মনে রাখার মতো কিছুই করতে পারলেন না সাকিব। দ্বিতীয় ইনিংসে তো কোনো রান না করেই ফিরতে হয়েছে সাজঘরে। তিবিও জাদেজার শিকার।জাদেজা শুরু থেকেই বাড়তি টার্ন পাচ্ছিলেন। সেটা কাজে লাগিয়েই সাকিবের সামনে ফাঁদ পাতেন। তার টার্ন বল বুঝতে না পেরে ব্যাটের খোঁচায় জাদেজাকেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই অলরাউন্ডার।
কানপুরে পঞ্চম দিনে স্পিনাররা সুবিধা পাবেন সেটা বুঝা গিয়েছিল চতুর্থ দিনেই। পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের ভালো শুরুর পর আঘাত হানেন জাদেজা। সেই ধারাবাহিকতা এখন অব্দি ধরে রেখেছেন ভারতীয় স্পিনার। শান্তর পর লিটনকেও ফেরালেন তিনি।
লিটনকে অফ স্টাম্পের বাইরে বল করছিলেন জাদেজা। সেই সঙ্গে যোগ করেন বাড়তি টার্ন ও বাউন্স। বলের লাইন লেংথ লিছুই পড়তে পারেননি লিটন। বল তার গ্লাভসে চুমো খেয়ে জমা হয় পন্তের হাতে।
১ রান করেই ফিরেছেন লিটন। ৬ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯৪। লিড ৪২ রানের
ভালো শুরু করে ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম। খেলছিওলেন দারুণ। সকাল থেকেই বেশ সাবলীল দেখাচ্ছিল তাকে। কিন্তু ফিফটি তুলে নিতেই বিপদ স্পর্শ করলো সাদমানকে।
ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট ফিফটি করেই আকাশ দীপের বলে স্লিপে জয়সওয়ালকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন এই ওপেনার। ১০১ বলে ১০ চারে ঠিক পঞ্চাশ করেছিলেন সাদমান।
রিভার্স সুইপে আউট শান্ত
দারুণ খেলছিলেন নাজমুল। সাদমানের সঙ্গে গড়েছিলেন ৫৫ রানের জুটি। এমন পরিস্থিতিতে জাদেজার বলে রিভার্স সুইপ খেলতে চাইলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব্যাটে বলে হয়নি, বল আঘাত করল স্টাম্পে। বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৯১ রান।
সাতসকালে মুমিনুলের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখনো লিড থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ। সেই অবস্থা থেকে দলকে লিড এনে দেন সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
প্রথম সেশনে এখন পর্যন্ত খেলা হয়েছে ৯ ওভার। মুমিনুলের উইকেট হারালেও রান উঠেছে ৩১। ভারতের ৫২ রানের লিড টপকে বাংলাদেশের লিড এখন ৫ রানের। বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৫৭ রান।
সুইপে আউট মুমিনুল
পঞ্চম দিনের শুরুটা বাংলাদেশ করেছিল সুইপ দিয়ে। সেই সুইপ করতে গিয়েই আবার বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন উইকেট। অশ্বিনের করা দিনের দ্বিতীয় ওভারে এক স্লিপ রেখে ফিল্ডিং সাজান রোহিত। যেটি ছিল মূলত ফাঁদ!
অশ্বিনের লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলটিতে পছন্দের সেই সুইপ খেলতে গিয়ে মুমিনুল ধরা পড়লেন সেখানেই। দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন লোকেশ রাহুল। ক্রিজে এসেছেন নাজমুল হোসেন।
রোমাঞ্চের অপেক্ষায় কানপুর
কানপুর টেস্টে মূল রোমাঞ্চটা ছরাবে আজ পঞ্চমদিন। চতুর্থ দিনে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৩৩ অলআউট হয়েছে। এরপর ভারত ব্যাটিংয়ে নেমে মারকাটারি ব্যাটিং করে মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ২ উইকেটে ২৬ রান তুলে দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। এখনো ভারতের চেয়ে তারা পিছিয়ে ২৬ রানে। আজ তাই জমজমাট হতে যাচ্ছে দিনের খেলা।
বাংলাদেশ ভারতকে কত রানের লক্ষ্য দিতে পারে এবং ভারতই বা সেটা পেরোতে পারে কি না অথবা বাংলাদেশকে ভারত অলআউট করতে পারবে কি না- সব উত্তরের রোমাঞ্চটা থাকছেই।
বাংলাদেশ: ২৩৩/১০ ও ১৪৬/১০
ভারত: ২৮৫/৯ ও ৯৮/৩
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজ ভারত ২-০ ব্যবধানে জয়ী