দেশে কাল আসছে চীনের বিশেষজ্ঞ টিম
৮ জুন দেশে আসছে ১০ সদস্যের চীনের চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ টিম। ২২ জুন পর্যন্ত টানা ১৪ দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন তারা। করোনা মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন এই চীনের প্রতিনিধি দল। সেই সঙ্গে দেশে অবস্থানকালে তারা কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবেন।
ঢাকায় অবস্থানকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রায় ২৮টি বৈঠকে অংশ নেবেন। এসব বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পুলিশ প্রধান ও করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্যরা ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগীরা পর্যায়ক্রমে অংশ নেবেন।
টিমের নেতৃত্ব দেবেন চীনের স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেপুটি মহাপরিচালক। প্রতিনিধি দলের বেশির ভাগ সদস্য চিকিৎসক। টিমে থাকবেন সংক্রামক ব্যধি বিশেষজ্ঞ, ল্যাব এক্সপার্ট, ভাইরোলজিস্ট ও ভাইরাসকবলিত উহান প্রদেশের কয়েকটি হাসপাতালের পরিচালক।
সূত্র বলছে, তারা চিকিৎসক ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। যা কাজে লাগিয়ে করোনা রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হবে।
চীনা প্রতিনিধি দলের সফরসূচি থেকে জানা যায়, ৮ জুন ঢাকায় আসার পর পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বিমানবন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন। ৯ জুন প্রথম মিটিং হবে সকাল ১০টায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে আয়োজিত এ মিটিংয়ে দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করবেন। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশের করোনা পরিস্থিতি ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। যাতে করে চীনের প্রতিনিধি দলটি পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পায়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে পরবর্তী ১৪ দিনের একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। এ পরিকল্পনায় কি কি অন্তর্ভুক্ত করা যায় সে সম্পর্কে চীনা প্রতিনিধি দলের মতামত নেয়া হবে।
সফরসূচি অনুযায়ী দুপুরের খাবার বিরতির পর আরেকটি লম্বা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে। বৈঠক চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। উভয়পক্ষ করোনা মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। এর মাধ্যমে একটি সংক্রমণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নির্ধারণের চেষ্টা করা হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সফরের দ্বিতীয় দিন ১০ জুন চীনের প্রতিনিধি দলটি সকাল ১০টায় সরেজমিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করবে। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকে তারা কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। এর মাধ্যমে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কিভাবে আরও উন্নত করা যায় তার একটি পথনির্দেশ পাবেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর দুপুর ২টায় প্রতিনিধি দলের বৈঠক হবে আইইডিসিআরের সঙ্গে।
সেখানে করোনা রোগীদের খুঁজে বের করা ও কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হবে। চীনা প্রতিনিধি দল আইইডিসিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেবে।
এরপর ১১ জুন সফরের তৃতীয় দিন প্রতিনিধি দল যাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে। সেখানে আরেক দফা বৈঠকের পর বিকালে তারা বৈঠক করবেন জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে। ১২ জুন শুক্রবার কোনো বৈঠক হবে না। ৫ম দিন সকাল ১০টায় প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পরিদর্শন করবে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। এরপর দুপুর ২টায় যাবে বসুন্ধরা ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে। সেখানে আয়োজিত এক বৈঠকে করোনা চিকিৎসায় ফিল্ড হাসপাতালের ভূমিকা ও সেখানে কোন ধরনের চিকিৎসকদের নিয়োগ করতে হবে সে সম্পর্কে একটি রূপরেখা দেবে প্রতিনিধি দল। বিকাল ৪টায় তারা যাবেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শনে। করোনা-পরবর্তী বিমান পরিচালনা, যাত্রী ব্যবস্থাপনা ও বিমানবন্দর জীবাণুমুক্তকরণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মতামত দেবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
৬ষ্ঠ দিন সকাল সাড়ে ৯টায় আইজিপি’র সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচি রয়েছে। এ সময় চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের ডিফেন্স এটাচি উপস্থিত থাকবেন। করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে সামগ্রিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন তারা। এরপর প্রতিনিধি দলটি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করবে। এদিন দুপুর ২টায় দেশে কর্মরত বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী, জাতিসংঘ ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে করোনা মহামারী মোকাবেলায় উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে আরও কি ধরনের সহযোগিতা করতে পারেন সে সম্পর্কে আলোচনা হবে। এছাড়া চীনা প্রতিনিধি দলটি তাদের এই সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্রিফ করবেন। করোনা থেকে উত্তরণে সামনের দিনগুলোতে করণীয় সম্পর্কেও মতামত দেবেন তারা।
সফরের ৭ম দিন দেশের সব জেলা হাসপাতালের পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক ও ল্যাবপ্রধানদের সঙ্গে একটি অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। করোনা চিকিৎসায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে চীনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বিকালে জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে ভাইরোলজিস্টদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারের নিরাপত্তা, সক্ষমতা ও পরীক্ষার মান সম্পর্কে আলোচনা করবেন অংশগ্রহণকারীরা।
৮ম দিন মুগদা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করবে চীনা প্রতিনিধি দল। এ সময় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসা সম্পর্কে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলবেন তারা। বিকালে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিএমএ’র (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) বিভাগীয় সমন্বয়কারীদের সঙ্গে তাদের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
পরদিন ১৭ জুন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠক করবে চীনা প্রতিনিধি দল। মাঠ পর্যায়ে করোনা মোকাবেলায় চীনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন তারা। এদিন দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে চীনা প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কৌশল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেবে। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে চীনের অর্জিত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ব্রিফ করবেন তারা। বিকালে প্রতিনিধি দলটি করোনা ডেডিকেটেড আরেক হাসপাতাল জেডএইচ শিকদার কার্ডিয়াক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার পরিদর্শন করবেন।
সফরের ১০ম দিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাবে চীনা প্রতিনিধি দল। সেখানে তারা করোনা চিকিৎসার ব্যাপারে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। তাছাড়া করোনা রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আরও কিভাবে উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে কথা বলবেন তারা। এরপর প্রতিনিধি দল আর্মড ফোর্সেস ইন্সটিটিউট অব প্যাথলজি বিভাগ পরিদর্শন করবেন। বিকালে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতি ও বেসরকারি চিকিৎসক সমিতির নেতারা মতবিনিময় করবেন।
১২ জুন সকালে আশকোনায় কোয়ারেন্টিন সেন্টার পরিদর্শন করবে প্রতিনিধি দল। কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে তারা বিশেষজ্ঞ মতামত দেবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় তারা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন। করোনা হটস্পট এলাকার হাসপাতাল হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন তারা।
১৩ জুন চীনা প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে অবস্থানকালীন প্রাপ্ত ধারণা ও করোনা মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তাদের মতামত গণমাধ্যমে তুলে ধরবেন। একই সঙ্গে সরকারের করণীয় সম্পর্কে তারা সুপারিশ দেবেন। গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ স্বাস্থ্য বিভাগীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, জাতীয় কারিগরি কমিটি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। বিকালে চীনা প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
২২ জুন চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
বৈশাখী নিউজ/ জেপা