করোনার সময়ে শ্বাসকষ্ট রোগীদের করণীয়
বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে কোভিড-১৯। এটা একটি ভাইরাস সংক্রমণ। করোনাভাইরাস পরিবারের একটি নতুন সদস্য এই সংক্রমণ সৃষ্টি করে।
সংক্রমণটির অন্যতম প্রধান উপসর্গ হচ্ছে শ্বাসকষ্ট। এই শ্বাসকষ্ট হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। দেশে সংক্রমণটিতে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সকল রোগী হাসপাতালে সেবা নিতে পারবেন এমনটা নাও হতে পারে।
এ কারণে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ ভিত্তিক ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। এখানে শ্বাসকষ্টে ঘরোয়া করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, কিন্তু শ্বাসকষ্ট তীব্র পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বলে মনে হলে অথবা ৩০ মিনিট বিশ্রামের পরও শ্বাসকষ্ট অব্যাহত থাকলে অথবা এর সঙ্গে বুকে ব্যথা করলে যথাসম্ভব হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করতে হবে।ডিপ বেলি ব্রিদ নিন: এটাকে ডায়াফ্রাগম্যাটিক ব্রিদিংও বলে। ডিপ বেলি ব্রিদ সম্পর্কে হয়তো আগে শুনেছেন। এই শ্বাস ব্যায়াম আপনাকে শুধু শিথিলই করবে না, শরীরের চাপ কমাতেও সাহায্য করবে।
নর্থশোর ইউনিভার্সিটি হেলথ সিস্টেমের ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনের ফিজিশিয়ান গীতা মেকার-ক্লার্ক বলেন, ‘এধরনের শ্বাসক্রিয়া সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে ধীর করতে সহায়তা করে। সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম মানসিক চাপ ও বিপদের সময় ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্সকে সচল করে।’ পেটের ওপর একটি হাত রেখে গভীর ও ধীরস্থিরভাবে নাকের মাধ্যমে শ্বাস টানুন। এ সময় পেট প্রসারিত হবে। শ্বাস ছেড়ে দিলে পেট আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবে। শ্বাসগ্রহণের চেয়ে শ্বাসত্যাগের সময়-দৈর্ঘ্য বেশি হবে। এভাবে দুই মিনিট পুনরাবৃত্তি করুন।
পার্সড লিপ ব্রিদিং চর্চা করুন: শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে আনার আরেকটি উপায় হচ্ছে পার্সড লিপস ব্রিদিং। এই শ্বাস ব্যায়ামটি করতে প্রথমে ঘাড় ও কাঁধকে শিথিল করুন। এবার দুই পর্যন্ত গুণে নাক দিয়ে শ্বাস নিন। তারপর দুই ঠোঁটের মধ্যখানে সামান্য ফাঁক রেখে চার পর্যন্ত গুণে ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করুন। ডা. মেকার-ক্লার্ক বলেন, ‘পার্সড লিপস ব্রিদিং ফুসফুসে আটকা থাকা বায়ু ছেড়ে দিতে সহায়তা করে।’ এই ব্যায়াম নিয়মিত চর্চা করলে ফুসফুস শক্তিশালী হবে ও কার্যকরভাবে কাজ করবে।
সামনের দিকে তির্যকভাবে বসুন: শ্বাস নিতে সমস্যা হলে অনেকে কুঁজো হয়ে হাঁটুর ওপর মাথা রাখেন অথবা পিঠ বাঁকা করে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু এসময় এটা সঠিক শারীরিক ভঙ্গি নয়। ডা. মেকার-ক্লার্কের মতে, এতে শ্বাসনালী শিথিল হয় না। তিনি ফরওয়ার্ড পজিশনে বসতে পরামর্শ দিচ্ছেন, অর্থাৎ মেরুদণ্ড সোজা রেখে সামনের দিকে তির্যক হয়ে বসতে হবে। তিনি বলেন, ‘ফরওয়ার্ড পজিশনে বসলে পিঠ বাঁকা করে দাঁড়ানোর তুলনায় দীর্ঘ ও গভীর শ্বাস নেয়া সম্ভব হয়। চেয়ারে বসে সামনের দিকে তির্যক হোন। সবচেয়ে ভালো হয় এসময় কপালকে টেবিলের ওপর লাগিয়ে বসলে- এতে ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশি শিথিল হবে।’
দেয়ালে কপাল ঠেসে দাঁড়ান: শ্বাসকষ্টে বসার মতো উপযুক্ত জায়গা না পেলে বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে শক্ত ও স্থির কিছুতে কপাল ঠেসে তির্যকভাবে দাঁড়ানো। এর জন্য সর্বোত্তম হচ্ছে দেয়াল। ডা. মেকার-ক্লার্ক বলেন, ‘দেয়ালে কপাল ঠেসে তির্যক হয়ে দাঁড়ালেও শরীর ও শ্বাসনালী শিথিল হবে।’
যোগব্যায়াম চর্চা করুন: শ্বাসকষ্টে যোগব্যায়ামের শিথিলকারক শারীরিক ভঙ্গিও সহায়ক হতে পারে। আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিশিয়ানসের বার্ষিক সভায় উপস্থাপিত প্রাথমিক গবেষণা অনুসারে, শ্বাসকষ্টে যেসব রোগী যোগব্যায়াম করেছেন তাদের ফুসফুসীয় কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই গবেষণায় ২৯ জন রোগী তিন সপ্তাহ ধরে যোগব্যায়াম করেন। এর ফলে তাদের শ্বাসক্রিয়া ও ফুসফুসের কার্যক্রম উন্নত হয়েছে।
গরম পানির ভাপ নিন: ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে শ্লেষ্মা জমে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। ডা. মেকার-ক্লার্কের মতে, এ অবস্থায় গরম পানির ভাপ নিলে উপকার পাওয়া যায়। গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েল অথবা পিপারমিন্ট অয়েল মেশান। এসব তেল শ্বাসনালী পরিষ্কারকরণে সহায়তা করে। ডা. মেকার-ক্লার্ক জানান, ‘ইউক্যালিপটাসে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বিরোধী উপাদান রয়েছে।’
আদা চা পান করুন: নাকবন্ধ জনিত শ্বাসকষ্টের একটি কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা হচ্ছে আদা চা। ডা. ক্লার্ক বলেন, ‘আদা চা পানে শ্লেষ্মা বের হয়ে আসে ও শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়।’ পানিতে আদা কুচি দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। স্বাদ আনতে মধু মেশাতে পারেন। এই চা মনকেও সতেজ করবে।
তথ্যসূত্র: দ্য হেলদি
বৈশাখী নিউজ/ জেপা