ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের হুমকি সারাদেশে
ইন্টারনেট খাতে ভ্যাট জটিলতার সমাধান করতে না পারলে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের হুমকি দিয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি। শনিবার (৪ জুলাই) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই হুমকি দিলো সেবাদাতারা। একইসঙ্গে চলতি জুলাইয়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
চলমান করোনা মহামারীকালে যখন যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে ভার্চুয়াল মাধ্যম এবং ইন্টারনেটে মানুষের নির্ভরতা অনেক বেড়েছে, ঠিক তখনই এলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের হুমকি। এ বিষয়ে আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, “ভ্যাট জটিলতার সমাধান না হলে সীমিত আকারে সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।”
তবে ঠিক কখন থেকে তা কার্যকর হবে নির্দিষ্ট করে না জানিয়ে তিনি বলেন, “সুবিধামতো সময়ে দুই থেকে এক ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখব। কবে কখন এই কর্মসূচি নেওয়া হবে তা সংগঠনের নেতাদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
তবে চলতি মাসে যে তাদের এই হুমকি কার্যকর হচ্ছে না- সে বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যায় আইএসপিএবি সভাপতির কথাতেই। আমিনুল হাকিম বলেন, “জুলাই মাসের মধ্যে দাবি না মানা হলে এ কর্মসূচিতে যাব আমরা।”
তিনি আরও বলেন, দাবি মানা না হলে ইন্টারনেট বন্ধের এ কর্মসূচি ধাপে ধাপে অর্থাৎ প্রতিমাসে বা সপ্তাহে সপ্তাহে চলমান থাকবে।
আমিনুল হাকিম বলেন, ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) খাতে ১৫% আরোপিত ভ্যাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো এই ৫% ভ্যাট ইন্টারনেট গ্রাহক থেকে আদায় করে, আর ১৫% ভ্যাট আইএসপিগুলো ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাত থেকে আদায় করে থাকে। ফলে ৫% ভ্যাট গ্রাহক থেকে আদায় করা হলেও আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএনকে ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে ১৫% হারে। সবমিলে আইএসপিগুলোকে ভ্যাট বাবদ খরচ দিতে হচ্ছে প্রায় ৩৫%।
আমিনুল জানান, বর্তমানে সারা দেশে ৮০ লাখের বেশি বাড়িতে তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহক। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও বিল আদায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেলেও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাতে ১৫% ভ্যাট নির্ধারিত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা খাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ইন্টারনেটের প্রতিটি স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ৫% ভ্যাট আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর।
“কিন্তু এর কয়েক মাসের ব্যবধানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে পুনরায় ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং অন্যান্য স্তরে ১৫% ভ্যাট আরোপ করায় বিষয়টিতে আবারও আগের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% বৃদ্ধি পাচ্ছে”, বলেন আমিনুল।
ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাতে ১৫% ভ্যাট আরোপকে ‘বৈষম্যমূলক’ এবং মূসক আইনের ‘পরিপন্থি’ বলেও মনে করছে আইএসপিএবি।
ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইএসপিএবির প্রস্তাব তুলে ধরে আমিনুল বলেন, “ইন্টারনেটের সকল ক্ষেত্রে ৫% অথবা ০% হারে ভ্যাট আরোপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে (ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য ১৫% ভ্যাট) জটিলতা নিরসন হবে। একইসঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও দূর হবে। এর ফলে সর্বস্তরের ইন্টারনেট গ্রাহক ও দেশের জনসাধারণ অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসতে পারবেন।”
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও দেশের সকল শ্রেণির জনগণের কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেটে ভ্যাট জটিলতা নিরসন করে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপের পরিবর্তিত কাঠামোটি অর্ন্তভুক্ত করার অনুরোধ জানায় আইএসপিএবি।
বৈশাখী নিউজ/ বিসি