আজ চিত্রনায়িকা ববিতার জন্মদিন

আপডেট: July 30, 2020 |

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতার জন্মদিন সেমাবার (৩০ জুলাই)। বর্তমানে তিনি রয়েছেন কানাডা। ববিতার ছেলে অনিক সেখানে ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা, শিক্ষকতা এবং গবেষণা কর্মে ব্যস্ত। তাই তারও ছুটে আসা সব সময় সম্ভব হয় না। গত রমজানের ঈদটা মা দেশে আর পুত্র বিদেশে একাকী কাটিয়েছেন। একটা চাপা কষ্ট ভর করেছিলো দুজনের মনেই।

তবে নিজের জন্মদিনে সেই কষ্টটাকে আর বাড়তে দিলেন না ববিতা। ছুটে গেছেন ছেলের কাছে। সেখানে কোরবানির ঈদও কাটাবেন। জন্মদিন প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, আজ তেমন কোনো পরিকল্পনাই নেই।

কারণ আমার ইচ্ছা ছিল দেশেই সবার সঙ্গে জন্মদিনের সময়টা কাটানোর। কিন্তু গত দু’বছর ধরে জন্মদিনে আমার একমাত্র সন্তান অনিকের সঙ্গে থাকা হয় না। তাই এবার আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম জন্মদিনের সময়টা অন্তত ছেলের কাছে থাকব। আমি আছি টরেন্টোতে। আমার চাচাতো বোনেরা আছেন ওয়াটারলুতে। সেখান থেকে তাদের আসাটা অনেক কষ্টের। তাই আমার জন্মদিনকে ঘিরে অনিক যা করবে, তাতেই খুশি আমি।

ববিতার পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বি. জে. আরা ছিলেন একজন চিকিৎসক।

বাবার চাকরি সূত্রে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন। তবে তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে।

তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়বোন সুচন্দা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বড়ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোটবোন গুলশান আখতার চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোটভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা। তার চলচ্চিত্রে শুরুটা হয়েছিল ষাটের দশকের শেষ দিকে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী পপি (ববিতার ডাক নাম) ‘সংসার’ ছবিতে রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নির্মাতা ছিলেন জহির রায়হান। ছবিটি মুক্তি পায়নি। জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে ‘জ্বলতে সুরুজ কা নিচে’ নামে একটি উর্দু ছবির কাজ শুরু করেন। মাঝপথে থেমে যায় এই ছবিটিরও কাজ। এরপর জহির রায়হান রাজ্জাক ও ববিতাকে নিয়ে তৈরি করেন চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’। আর এটিই ছিল ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। তারপর থেকেই ঢাকাই ছবিতে এই নক্ষত্রের উত্থান। আজও তিনি আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন অভিনয়ে।

ববিতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। তিনি পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়ে রেকর্ড করেন। ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রে ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেঙ্গল ফ্লিম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান।

এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হতো। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় ববিতাকে।

ববিতা অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে অশনি সংকেত, রামের সুমতি, নিশান, মন্টু আমার নাম, প্রতিজ্ঞা, বাগদাদের চোর, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, চ্যালেঞ্জ, হাইজ্যাক, মায়ের জন্য পাগল, টাকা আনা পাই, স্বরলিপি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর