মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে তারা বাংলাদেশকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম । কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই। সব ধর্মের মানুষ সৌহার্দ ও সম্প্রীতির সঙ্গে টিকে থাকবে।
মঙ্গলবার গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে পিরোজপুর মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। দলীয় চিন্তা চেতনা ভিন্ন থাকতে পারে কিন্তু জাতীয় চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতীয় পতাকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সম্পূরক শব্দ। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্যে আমাদের সবার এক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পরে এদেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদকে সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে গোলাম আজমকে বাংলাদেশে আসার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। খান এ সবুরকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা হয়। মাওলানা আবদুর রহিমের ইসলামিক ডেমোক্রেটিক দলকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। আ. আলীম, শাহ আজিজকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা হয়। এভাবেই কিন্তু ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়ে যায়। পাকিস্তানী ধ্যান ধারণা এ দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। আর বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। সেই সব কলঙ্কজনক অধ্যায় গোটা জাতিকে এমন অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল যে সেখান থেকে আমরা ফিরে আসবো অনেকে কল্পনা করেনি।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরে এসে ২১ বছর রাজপথে থাকা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে বহাল করে। আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান বৃদ্ধি করেছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভাব অনটন দূর করে সব মানুষের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা শিক্ষার অধিকারকে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আজকে শেখ হাসিনা মানবতার জননী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। শেখ হাসিনা বিশ্বের সৎ এবং পরিশ্রমী অন্যতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, এমন একটি পরিস্থিতিতে আবার আমরা লক্ষ করছি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক উগ্র বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের সম্প্রতিকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে। জাতির জনকের ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেয়ার মতো হুংকার দিচ্ছে। কুষ্টিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলি কিন্তু হঠাৎ করে আসার কারণ নেই। যখনই আমরা বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ মুজিববর্ষ পালন করছি। যখন আমরা বিজয়ের মাসে উপনীত হয়েছি তখন হঠাৎ করে এসব ঘটনার কারণ কী? ভাস্কর্য হচ্ছে চেতনার প্রতীক।
তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, আসুন পিরোজপুর মুক্ত দিবসে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেব না।
বৈশাখী নিউজ/ বিসি