সোনিয়া ও রাজীব গান্ধীর প্রেম-পরিণয় যেন রূপকথার গল্প!

আপডেট: December 12, 2020 |

সোনিয়া গান্ধী,ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের সভানেত্রী। তার পুরো নাম এদভিগ এনতোনিয়া এ্যালবিনা সোনিয়া মাইনো। তিনি একজন ইতালীয় বংশোদ্ভূত একজন নারী। কিন্তু বিয়ে করেছিলেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধীকে।

কিন্তু কীভাবে পরিচয় হল তাদের? চলুন জেনে নেওয়া যাক:-

দুটো দেশ ভিন্ন সংস্কৃতি হলেও সেদিন দুজনের প্রেম হয়েছিল। সেই প্রেম থেকে পরিণয়টা যেন রূপকথার গল্প। কিন্তু তাদের জীবনে গল্পের শেষ মোড়টা অবশ্যই মর্মান্তিক। রাজীব এবং সোনিয়া গান্ধীর প্রেম পরিণয় ঘিরে রয়েছে আবেগময় এবং উষ্ণতার কাহিনি।

১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে থাকাকালীন এক রেস্তোরাঁয় রাজীব প্রথম দেখেছিলেন সোনিয়াকে। হাতখরচের অর্থ জোগাড় করতে এক গ্রিক রেস্তোরাঁয় পার্ট টাইম কাজ করতেন তখন সোনিয়া মাইনো। রাজীবের ভাল লাগে তাই তিনি ওই রেস্তোরাঁর মালিক এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বলেন সোনিয়ার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে।

সেই মতো ব্যবস্থা হয় তবে শোনা যায় এমন ব্যবস্থা করে দিতে ওই রেস্তোরাঁ মালিক মোটা টাকাই নিয়েছিলেন রাজীবের কাছ থেকে। তারপর হাতের কাছে থাকা ন্যাপকিনে ছোট্ট একটি কবিতা লিখে সবচেয়ে দামী পানীয়সহ তা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সোনিয়াকে।

তারপর আস্তে আস্তে পরিচয় থেকে প্রেমের দিকে ঝোঁকা। ওই সময় তারা মাঝে মাঝে একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যেতেন এবং শোনা যায় তাদের একসঙ্গে দেখা প্রথম ছবিটি নাকি সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি।

পরিচয়ের পর সোনিয়া জানতে পারেন রাজীব হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বড় ছেলে। লন্ডনেই মায়ের সঙ্গে সোনিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন রাজীব। ইন্দিরা তখন লন্ডনে গিয়েছিলেন নেহরু এক্সিবিশনে।

সেই সময় ইন্দিরা সোনিয়াকে জানিয়েছিলেন, বিয়ে করার আগে সোনিয়া যেন ভারতে এসে ক’দিন থেকে যান। কারণ ভিন্ন সংস্কৃতি কতটা সোনিয়া মানিয়ে নিতে পারবেন সেই কথা ভেবেই এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সোনিয়াকে। অবশেষে ৬৭ সালের শেষের দিকে রাজীব দিল্লিতে ফেরেন। আর ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে দিল্লি আসেন ২১ বছরের সোনিয়া। অবশ্য ততদিনে ইন্দিরা গান্ধী বুঝে গিয়েছেন রাজীব এবং সোনিয়া তাদের সম্পর্কের বিষয়ে সিরিয়াস। ফলে তিনি আর তখন বিয়ে দিতে দেরি করেননি।

তবে তাদের সম্পর্ক নিয়ে অবশ্য কিছুটা অমত ছিল সোনিয়ার বাবা স্টেফানো মাইনোর। তিনি রাজীবকে অপছন্দ করেননি। কিন্তু তার আপত্তি ছিল কোনও রাজনৈতিক পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে।

সোনিয়া ভারতে এসে উঠেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বচ্চন পরিবারে। বিয়ের আগে শুধু দিল্লিতে বচ্চনদের বাড়িতে থাকাই নয় বিয়ের মেহেন্দি হয়েছিল সেখানেই। অমিতাভ বচ্চনের বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন এই বিয়েতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। অবশেষে ২৫ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ে হয়।

পরের দিন হায়দরাবাদ হাউসে তাদের বিয়ের রিশেপশনে হাজির ছিলেন রাজনীতি ব্যবসায়ী জগতের মহারথীদের পাশাপাশি সেলিব্রিটিরাও। এই বিয়েতে মত ছিল না বলে আসেননি সোনিয়ার বাবা। তিনি না আসলেও বিয়েতে এসেছিলেন সোনিয়ার মা ও অন্য আত্মীয় পরিজন। বিয়ের পরে নতুন সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছিল সোনিয়ার।

ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে শাড়ি পরা থেকে শুরু করে হিন্দি ভাষা শেখা, সব কিছুই ধীরে ধীরে রপ্ত করেন তিনি। রাজনীতিতে ঢোকার তেমন কোনও ইচ্ছা ছিল না রাজীবের। কিন্তু এমন পরিবারে জন্ম এবং নিয়তি নির্দেশ অমান্য করে কার সাধ্য। পাইলট হিসেবে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব।

একে একে জন্ম হল রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কার। বেশ চলছিল রাজীব সোনিয়ার সাংসারিক জীবন। তখন মা ইন্দিরার সঙ্গে ছোট ভাই সঞ্জয় পুরোদমে জড়িয়ে রয়েছেন রাজনীতিতে। কিন্তু ১৯৮০ সালে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল সঞ্জয় গান্ধীর। এরপর ইন্দিরা রাজনীতিতে নিয়ে এলেন রাজীবকে।

তারপর ১৯৮৪ সালে দেহরক্ষীর হাতে ইন্দিরার মৃত্যুর পর দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দেখতে চাইল রাজীবকেই প্রধানমন্ত্রীর আসনে। ১৯৮৯ সালে তিনি ক্ষমতা হারান।

তবে ১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামবুদুরে নির্বাচনী জনসভায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হল রাজীব গান্ধীর। তার এমন মর্মান্তিক অকাল মৃত্যুতে ইতি ঘটে রাজীব সোনিয়া দাম্পত্য জীবনের। সোনিয়ার এদেশে এমন পরিবারে বিয়ে হয়েছে যাদের বার বার অপঘাতে মৃত্যু ঘটনা ঘটছে।

তবু তিনি পুত্র কন্যা নিয়ে ভারতেই থেকে গেলেন। না চাইতেও জড়িয়ে গেলেন ভারতের রাজনীতিতে। যদিও বিদেশিনী বলে অনেক সময় তাকে নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করেছেন। তাই কংগ্রেস ক্ষমতায় আসলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি ঠিকই, তবে তার হাতেই রয়েছে কংগ্রেসের ক্ষমতার লাগাম। সূত্র: ফ্রিপ্রেস জার্নাল

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর