বদিকে পিতা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন টেকনাফের এক যুবক

কক্সবাজার-৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন টেকনাফের এক যুবক (২৭)।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারি বিবাদিকে স্বশরীরে হাজির হয়ে জবানবন্দি দিতে বলেছেন।

মামলার বাদির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী  জানান, রোববার (১৩ ডিসেম্বর) টেকনাফের সহকারী জজ মো. জিয়াউল হকের আদালতে মামলাটি দায়ের হয়। যার নম্বর-১৪৯।

এজাহারে বদির ছেলে দাবি জানানো মোহাম্মদ ইসহাক (২৭) ঠিকানা উল্লেখ করতে গিয়ে পিতার নাম লিখেছেন, আব্দুর রহমান বদি। যাকে জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ঠিকানা লিখেছেন- টেকনাফ পৌর এলাকার কায়ুকখালী পাড়া। বদির পারিবারের এক সময়কার মিস্ত্রী মোহাম্মদ ইসলামের সংসারে লালিত-পালিত হয়েছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করেছেন ওই যুবক। পরে মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে বাদির মা সুফিয়া খাতুনের দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়।
বাদি বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিসিক শিল্প এলাকা সংলগ্ন দক্ষিণ মুহুরী পাড়ায় বসবাস করছেন।

বিবাদি আব্দুর রহমান বদি টেকনাফ পৌর এলাকার চৌধুরী পাড়ার মৃত এজাহার মিয়া ওরফে এজাহার কোম্পানির ছেলে। তিনি উখিয়া-টেকনাফ আসনের দুই বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতার চৌধুরী তার স্ত্রী।

মামলায় দুই নম্বর মূল-বিবাদি করা হয়েছে বদির চাচা পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে।

আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে বাদি মোহাম্মদ ইসহাকের দায়ের মামলা আমলে নিয়ে বিবাদির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত। আগামী ১৪ জানুয়ারি স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাববন্দি দিতে বলা হয়েছে। পিতৃত্ব প্রমাণের জন্য প্রয়োজনে বাদি-বিবাদি উভয়ের ডিএনএ পরীক্ষা করতেও বাদি আদালতের কাছে আবেদন করেছেন।’

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির প্রথম স্ত্রী সুফিয়া খাতুন মামলার বাদি মোহাম্মদ ইসহাকের মা। ৩০ বছর আগে সুফিয়ার বাবা আবুল বশরের বাড়ি টেকনাফ পৌর এলাকার ইসলামাবাদ ধুমপাড়ায় ছিল। তখন আবুল বশর সৌদি আরবে প্রবাসে থাকাকালীন সুফিয়ার মা খতিজা বেগম সন্তানদের নিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকতেন। ওই সময়ে তার বাড়ি কয়েকবার ডাকাতি সংঘটিত হয়। এ ব্যাপারে বদির পিতা তখনকার টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান এজাহার কোম্পানির কাছে সুফিয়ার পরিবার বিচার দেন।

আব্দুর রহমান বদির পিতা এজাহার কোম্পানির একাধিক স্ত্রী ছিলেন। তারা সন্তানদের নিয়ে আলাদা বাড়িতে থাকতেন। বদি এজাহার কোম্পানির প্রথম স্ত্রীর সন্তান। সন্তানসহ বদির মা তখন টেকনাফের অলিয়াবাদস্থ বাড়িতে থাকতেন।

১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল এজাহার কোম্পানির বাড়ির দারোয়ান এখলাস মিয়া ও অন্য দুজন অপরিচিত ব্যক্তির স্বাক্ষীর উপস্থিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের অজ্ঞাতসারে বদি সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে পড়ান বদির পিতার মালিকাধীন টেকনাফ পৌর এলাকাস্থ আবাসিক ‘হোটেল নিরিবিলির’ এবাদতখানার তখনকার ইমাম মৌলভী আব্দুস সালাম।

তবে পরবর্তীতে বিয়ের কাবিননামা রেজিস্ট্রির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ করেননি বদি। তাদের মধ্যে গোপন বিয়ের বিষয়টি বদির সৎ মা রহিমা খাতুন ও বড় বোন সামছুন্নাহার জানতেন।

বিয়ের পর থেকে বদি-সুফিয়া দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। এক পর্যায়ে সুফিয়া খাতুন সন্তান সম্ভাবা হন। ১৯৯৪ সালের ৪ এপ্রিল মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে সুফিয়া খাতুন দ্বিতীয় বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এজাহার কোম্পানিসহ অন্যান্য স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ওই বিয়েও পড়ান মৌলভী আব্দুস সালাম।

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে মামলার বিষয়ে জানতে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওই নম্বরে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

বৈশাখী নিউজফাজা