পাইলট রুটের পরিধি বাড়িয়ে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত করা হচ্ছে

সময়: 7:42 pm - January 19, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 4 বার

গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় প্রস্তাবিত পাইলট রুটের পরিধি বাড়িয়ে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ১৫তম সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য জানান তিনি।

ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আগে ঘাটারচর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পাইলট রুট চালুর সিদ্ধান্ত ছিল। সে মোতাবেক কমিটি কার্যক্রম শুরু করার পর সার্বিক বাস্তবতায় দেখা যায় যে, ঘাটারচর থেকে শুধু মতিঝিল পযর্ন্ত রুট নির্ধারণ করা হলে এটি ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। এ জন্য পাইলট রুটের পরিধি বাড়িয়ে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত করা হচ্ছে।

বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে একশ কোটি টাকার বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এই বরাদ্দ  হতে বর্তমানে চলাচলকারী বাসগুলোর আধুনিকায়নের জন্য মালিকদের মতামতের ভিত্তিতে সহজ সুদে ঋণের মাধ্যমে এই টাকা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে মালিকেরা যাতে এই ঋণ পান সে ব্যাপারে দ্রূত ডিটিসিএ চিঠি লিখবে।

ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, এই রুটে কম্পানির মাধ্যমে বাস কিভাবে চলবে, কতগুলো বাস চলবে, কতগুলো প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত থাকবে, আয় কিভাবে বণ্টন হবে, কিভাবে পরিচালিত হবে -সামগ্রিক বিষয় নিয়ে নীতিমালা হবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অংশীজনদের নিয়ে বসে নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করবে। আগামী সভার আগেই খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করলে কম্পানি গঠনের দিকে আমরা এগিয়ে যাবো।

এই রুট চালুর ক্ষেত্রে যাত্রী ছাউনি এবং বাস-বেসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণে কিছু জমির প্রয়োজন হবে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, অবকাঠামোগুলোর কাজ যাতে শেষ করা যায়, এজন্য আগামী সভায় সংশ্লিষ্টদের আগামী সভায় ডাকা হবে।

‌বর্তমানে নির্ধারিত পাইলট রুটে যে সব বাস চলাচল করে তার তথ্যগত কিছু ভুল আছে উল্লেখ করা ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, দীর্ঘদিন এই তথ্যগুলো হালনাগাদ করা হয়নি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পাইলট রুটের তথ্যগুলো হালনাগাদ করবে এবং সামগ্রিকভাবে পুরো ঢাকার কোন রুটে কোন বাস চলছে, কতগুলো বাস চলছে এই সংক্রান্ত তথ্যাদি বিআরটিএ আগামী ৯০ দিনের মধ্যে হালনাগাদ করবে।

এখন এই রুটে যাদের বাস চলছে, অন্যরা যারা এই রুটে বাস চালাতে চায় সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করা হবে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে বাস মালিকেরা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে বসবেন। আয় এবং ব্যায়ের হিসেব যাতে ঠিকমতো হয় এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরি হবে। নীতিমালার আলোকে প্রাইলট এই প্রকল্পে জয়েন্ট ভ্যানচার এগ্রিমেন্ট (জেভিএ) হবে। এরপর এটাকে একটা পূর্ণঙ্গ কম্পানিরূপে চালু করব। যাতে করে সুষ্ঠুভাবে, শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যবস্থাপনা আসে।

এই রুটে চলাচলকারী বাসে যাত্রীদের জন্য ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব বিআরটিসিকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র তাপস বলেন, রাত ১২টার পর সড়কে যাতে বিআরটিসির বাস না থাকে গত সভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে অনেকদূর অগ্রগতি হয়েছে। জায়গা সংকুলন না হওয়ায় কিছু বাস এখনো সড়কেই থাকছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিআরটিসিকে সকল বাস নিজস্ব ডিপো বা টার্মিনাল বা তাদের জায়গায় রাখার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার আশপাশে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল করার জন্য ১০টি জায়গায় প্রস্তাব করা হয়েছিল উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এর মধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ আমরা কয়েকটি জায়গা পরিদশর্ন করেছি। সরেজমিন পরিদর্শনে পর আমরা বাটুলিয়াতে একটি জায়গা নির্ধারণ করেছি। সেখানে আন্তঃজেলা একটি টার্মিনাল হবে। মূলত উত্তরাঞ্চলের যে বাসগুলো আছে সেখানে এসব বাস থাকবে। উত্তরাঞ্চলের বাসের জন্য সাভারের হেয়ায়েতপুরে দুটি জায়গা দেখে একটি নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে  দক্ষিণাঞ্চলের বাসের জন্য কেরানীগঞ্জের বাঘাইরে একটি এবং কাঁচপুর এলাকায় আরেকটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই চারটি জায়গায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল স্থাপন করলে ঢাকা শহরের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, সায়েদাবাদ, গাবতলী এবং মহাখালী টার্মিনালগুলোকে সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। বাকি চারটি টার্মিনাল সারা দেশের যে বাসগুলো ঢাকামুখী যাতায়াত করে, তাদের জন্য নির্ধারিত থাকবে। এ বিষয়ে শিগগিরই সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বরাবর পত্র দেওয়া হবে।

সবায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো – একটি শৃংখলাবদ্ধ ব্যবস্থাপনার মধ্যে সকল বাসকে নিয়ে আসা। স্বাধীনতার পর থেকেই ধীরে ধীরে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করি, আমরা যেভাবে একটি একটি করে পরিকল্পনা করছি, সেগুলো বাস্তবায়ন এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নত বাংলাদেশের উন্নত রাজধানী গড়ে তুলতে সক্ষম হব। সেজন্যই আমাদেরকে বাস রুট ফ্রেঞ্চাইজি বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ সময় ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে একটি শৃংখলাবদ্ধ গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কমিটির ১৬তম সভা আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস।

বৈশাখী নিউজএপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর