জন্মদিনটা স্পেশাল কারণ হৃদয়টা ধকধক করছে

আপডেট: May 13, 2021 |

এতদিন জন্মদিন মানে আমার কাছে ছিলো একটা মন খারাপের দিন। কারণ মহামূল্যবান এই জীবন থেকে আরেকটা বছর চলে যাওয়া যেটা নিয়ে আনন্দের কিছু নাই। কিন্তু এবারের জন্মদিনটা আসলেই অনেক স্পেশাল হয়ে থাকবে । কারণ প্রথমত পৃথিবীর এই মহা বিপর্যস্ত করোনা মহামারীর কঠিন সময়ে মহান আল্লাহ এখনো আমাকে সুস্থ রেখেছেন হৃদয়টা ধকধক করছে আর তার দুনিয়ায় প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি যেটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মানে সেরা বার্থডে গিফট বলতে পারেন। আর দ্বিতীয়ত এবার প্রথম সমগ্র মুসলিম জাহানের খুশির ঈদ আর আমার জন্মদিনটা একসাথে এসেছে যার জন্য নিশ্চয়ই আমি সৌভাগ্যবান ।

প্রতিবার আমার জন্মদিন কাটে পথ শিশু এতিম বাচ্চা আর রাস্তার অসহায় মানুষদের সাথে। তাদের জন্য নতুন জামা কাপড় বা পেট ভরে যে যেটা খাইতে চায় সেটা তাদেরকে গিফট করে শুধুমাত্র তাদের মুখের নিষ্পাপ হাসিটার জন্য । তাদের হাসিতেই আমি জীবনে বেচে থাকার মানে খুজে পাই। আমার আত্মার শান্তির খোরাক হচ্ছে এই পাশবিক পৃথিবীর সমস্ত নির্যাতন নিপীড়িত মজলুম অসহায় মানুষের মুখের একখন্ড রৌদ্রজ্বল হাসি। আত্মীয় স্বজন মামা চাচা ফুপু এরা আমাদের পারিবারিক প্রাপ্য ধন সম্পদের হক আত্মসাৎ করে খাওয়ার কারণে ছেলেবেলা থেকেই অভাব অনটনের মাঝে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে প্রচন্ড মানসিক নিপীড়নের মাঝে অন্যায় অবিচার সবকিছু সহ্য করে বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হয়েছে।

যার কারণে একজন ক্ষুধার্ত অসহায় শিশুর কষ্ট কান্না না পাওয়া সব আবদার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা ভালোবাসা কিংবা ছেড়া জামা কাপড় পড়া রাস্তার মানুষের না বলা যত যন্ত্রণা সব আমি অনুভব করতে পারি। তাই তারা সবসময় আমার কাছে স্পেশাল এবং তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারলে নিজের অন্তরাত্মায় প্রচন্ড শান্তি লাগে । আফসোস এবার করোনা বিপর্যয়ের কারণে তাদের সাথে স্পেশাল সময় কাটাতে পারছি না কিংবা তাদের জন্য বিশেষ ভাবে তেমন কিছুই করতে পারছি না তবে যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করেছি ঈদে অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করার।

ভবিষ্যতে পৃথিবীতে নির্যাতিত নিপীড়িত মজলুম শিশু এবং অসহায় মানুষদের জন্য স্বাভাবিক ভাবে বেচে থাকার অধিকার আদায়ের একটা আন্তর্জাতিক সংস্থা করার স্বপ্ন আছে । যেমন জন সিনা তার Make A Wish ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর অসুস্থ বাচ্চাদের ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করে থাকে তাদের স্বপ্ন পূরণের কাজ করে থাকে ঠিক তেমন কিছু একটা করার ইচ্ছা রয়েছে। বাংলাদেশে করোনা আসার আগে আমার অনস্ক্রিনের শেষ কাজটা ছিলো প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট চ্যানেল এনটিভি ইন্টারন্যাশনালের দেশের অন্যতম লিডিং ফ্যাশন প্রোগ্রাম Style And Trends এর লিড মডেল হিসাবে পারফর্ম করেছিলাম।

এত বিশাল একটা কাজের জন্য এনটিভির সম্মানিত সিনিয়র প্রোগ্রাম প্রডিউসার জনাব কাজী মোস্তফার কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আমাকে এমন একটা আন্তর্জাতিক মানের প্লাটফর্মে পারফর্ম করার যোগ্য মনে করার জন্য । পরবর্তীতে করোনা মহামারীর আগ্রাসনের কারণে আমার নেশা পেশা স্বপ্নের শোবিজে কাজ আপাতত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে না আসা পর্যন্ত অফ রেখেছি । কারণ আমার চোখের সামনে বহু পরিচিত মানুষের করোনা আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যেতে দেখেছি । এমন নয় যে আমি মৃত্যুকে ভয় পাই । না কখনো নয় । আপনি জন্ম নিলে আপনাকে মরতে হবেই। কারণ মৃত্যু অনিবার্য চিরসত্য। আমি আসলে আমার কারণে অন্যের মৃত্যুর দায়বদ্ধতার পাপ নিয়ে মরতে চাই না । এই করোনা এমন একটা অভিশপ্ত রোগ যেটায় আপনি একা আক্রান্ত হয়ে মারা যাবেন তা কিন্তু নয়। বরং একজন আক্রান্ত ব্যক্তি আরো একশোর অধিক মানুষকে আক্রান্ত করে মারা যাচ্ছে । আর এই একশো জন্য মানুষের মাঝে সবাই যে সুস্থ হতে পারবে সেটা কিন্তু না । যারা যারা মারা যাবে তাদের ফ্যামিলি আছে সন্তান আছে ।

এখন একটা পরিবারের উপার্জনক্ষম কোনো মানুষ যদি আমার কারণে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে সেই পরিবার পরিপূর্ণ ভাবে ধবংস হয়ে যাবে । আর এইটা উন্নত বিশ্বের দেশ না যে একটা অসহায় পরিবারের খাওয়া পড়া পড়াশোনা বা ভবিষ্যতের সব দায় দায়িত্ব সরকার নেবে । এইটা বাংলাদেশ লুটপাটের দেশ । এখানে মরলে অনেক মানুষের কাফনের কাপড় কেনার টাকা থাকে না । তাই আমি এত মানুষের মৃত্যুর দায়ভার তাদের পরিবার ধবংসের পাপ নিতে পারবো না । মৃত্যুর পর আমার আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে আমাকে । কারণ আল্লাহ ও তার রাসূলে পাক হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা [ সা : ] পবিত্র আল কোরআন সহ সব হাদিসে পৃথিবীতে মহামারী আসলে কি করণীয় সবকিছুর দিক নির্দেশনা স্পষ্ট করে দিয়ে দিয়েছেন । আল্লাহ তার সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব পবিত্র আল কোরআন নাজিল করেছিলেন মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান স্বরূপ । যেখানে আসমান জামিন ইহকাল পরকাল সহ একজন মানুষ পৃথিবীতে কিভাবে জীবনযাপন করবে তার সবকিছুর সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়া রয়েছে । সেখানে আপনি কি করলে বা কোন দোয়া পড়লে সুস্থ থাকবেন অথবা সুস্থ হতে পারবেন / কোন দোয়া পড়লে খারাপ জ্বীন পরী আর খারাপ মানুষের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাবেন/কোন দোয়া পড়লে বা কি করলে দুনিয়া ও আখিরাতে ভালো থাকতে পারবেন মানে মানবজাতির অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সবকিছুর সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে রাখা আছে । কারণ মানুষ যেনো তাদের স্বীয় কর্ম এবং কর্ম ফলের জন্য অন্যকে দায়বদ্ধ করতে না পারে । এই যে মানুষ করোনার সময় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিয়ে করছে অনুষ্ঠান করছে মার্কেট করছে পার্টি করছে আর বলছে আল্লাহ যা কপালে লিখেছে সেটাই হবে ! অথচ আল্লাহ বলেছেন যে কোনো মূল্যে জান বাচানো ফরজ কাজ।

সেখানে আমরা মাস্ক না পড়ে হাত না ধুয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে আল্লাহর কোরআনে দেয়া মহামারীর থেকে বাচার দোয়া না পড়ে উলটা করোনার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে বলছি যে আল্লাহ রক্ষা করবেন ? এই সম্পর্কে নবীজির একটা বিখ্যাত হাদীস আছে এমন যে একট আরব বেদুইন তার উট কে না বেধে রেখে নিজ কাজে চলে যাচ্ছিলো । তখন নবীজি সেটা দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি উট কে না বেধে এভাবে খোলা রেখে চলে যাচ্ছো কেনো ? আরব বেদুইন উত্তর দিলো যে তার আল্লাহর উপর ভরসা আছে কিছু হবে না ! নবীজি এই কথা শুনে বললেন যে আগে উটটা কে বাধো তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করো । তাহলে যেখানে আমাদের নবীজি আমরা যার উম্মাত তিনি নিজেই নির্দেশ দিচ্ছেন যে আগে সঠিক কর্ম করো তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করো সেখানে আমাদের ভুল কর্মের জন্য দায়ী কে হবে? আমি মানুষের কথা না হয় বাদ দিলাম । আমি যদি অবহেলার কারণে করোনা আক্রান্ত হই তাহলে আমার তো পরিবার আছে আমার একজন মা আছে যার এজমার সমস্যা আছে। এখন আমার ভুলের কারণে করোনা আক্রান্ত হয়ে আমি যদিও সুস্থ হয়ে যায় কিন্তু আমার মায়ের যদি কিছু হয়ে যায় ? আমি কি তখন এই অপরাধবোধ নিয়ে বেচে থাকতে পারবো ? এইজন্য আমি করোনাকে ভয় পাই।

আমার আপনাদের মতন করোনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার এত সাহস নাই । তবে আপনি যদি ডাক্তার হন বা মানুষের সেবা দানের কাজে কর্মে নিয়োজিত অথবা মহামারী থেকে বাচার দোয়া পড়ে মাস্ক পরিধান করে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার পরেও আক্রান্ত হয়ে মারা যান সেটা শহীদের মর্যাদার অধিকারী হবেন নিশ্চিত । কারণ জান বাচানো ফরজ কাজ এবং আপনি সেটার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন । আর আল্লাহ নিশ্চয়ই কারোর সাথে অবিচার করেন না । আরেকটা কথা না বললেই না যে আমাদের ইসলামে জাকাতের কাপড় বলে কিছু নাই । ইসলামে মহান আল্লাহর বিধান বা স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে তুমি যা খেতে পারো না তুমি যা পড়তে পারো না সেটা অন্যকে দিও না । মানে আপনি যেসব কাপড় পড়তে পারেন না আপনার পরিবার কে পড়াতে পাড়েন না বা যেসব খাবার নিজেরা খেতে পারেন না সেসব অন্য মানুষকে দিতে পারবেন না । তারা গরীব হতে পারে কিন্তু আল্লাহর সৃষ্ট মানুষ একজন আশরাফুল মাখলুকাত । এসব অমানবিক কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে । মানে গরীব মানুষের কবর তাদের আল্লাহ তাদের বেহেশত কি ধনীদের চাইতে আলাদা হবে ? এইজন্য আমাদের প্রিয় নবীজি হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা [ সা : ] স্পষ্ট করে বলে গেছেন যে গরীবরা ধনীদের ৫০০ বছর আগে বেহেশতে যাবে।

ধনীর সম্পদের উপর গরীবের হক স্বয়ং আল্লাহ পাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন । আর আপনি যদি ভাবেন যে এই দুনিয়ার সব অর্থ সম্পদ আপনার তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন । আসমান জমীনের এবং গায়েবী যা কিছু রয়েছে সবকিছুর একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ । এইটা আল কোরআনের কথা । আর অনিবার্য মৃত যখন আসবে তখন এসব কিছুই ছেড়ে খালি হাতে রবের দরবারে ফিরে যেতে হবে । আর সাদকা / যাকাত / সাদকায়ে জারিয়া বা দানের মহত্ত্ব সম্পর্কে নবিজির একটা বিশেষ হাদিস রয়েছে এমন যে আপনি যদি একটা শস্যের দানা পরিমাণ দান করেন তাহলে সেই দানা থেকে যে বিশাল গাছের সৃষ্টি হবে আর সেই গাছ যতদিন মানুষ কে ফল দিবে ছায়া দিবে এবং অক্সিজেন দেবে তার সব সোয়াব মৃত্যুর পরেও আজীবন আপনার পূণ্যের খাতায় লিপিবদ্ধ করা হবে । তাই এত বিশাল মহৎ কাজ কে ছোটো হিসাবে ভুল করেও দেখবেন না দয়াকরে । এই দেশে বহু মানুষ বহু পরিবার বিপদে থাকে না খেয়ে থাকে তাদেরকে জাকাতের টাকা দিয়ে এমন একটা সাহায্য করে দিন যাতে এসব পরিবার আজীবন কিছু করে খেয়ে বাচতে পারে।

তাহলে তারা যতদিন বেচে থাকবে আপনার জন্য বেহেশতের রাস্তা ঠিক ততটা মসৃণ হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ । আমি এই করোনার মাঝে অনলাইন ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত বিজনেস প্লাটফর্ম আলীবাবা আমাজনের মতন FIESTAS নামের একটা ছোট্ট সুপারমার্কেট শুরু করেছি যেখানে আপনাদের জীবনের প্রয়োজনীয় দেশি বিদেশি যাবতীয় জিনিসপত্র সারা দেশে এবং বিদেশে হোম ডেলিভারি সার্ভিস দেয়া হয়। করোনা বিপর্যয়ের মাঝে সারা দেশের মানুষজন যাতে ঘরে বসে কোনো ধরনের অনলাইন প্রতারণার শিকার না হয়ে নিশ্চিন্তে নিজেদের প্রয়োজনীয় সবকিছু কেনাকাটা করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে নিয়ে কাজটা করা । পাশাপাশি আপনারা এখান থেকে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহীর আম আর লিচু সংগ্রহ করতে পারবেন।

কারণ আমরা দক্ষিণাঞ্চল খুলনার মানুষ কিন্তু কর্ম সূত্রে রাজশাহীতে বসবাস করা হয় । আসলে মন খুলে অনেকদিন কথা বলা হয় না । তাই জন্মদিনের স্পেশাল মূহুর্তে মন খুলে সব কথা বলে ফেললাম । আর যে গাছ আপনাদেরকে বেচে থাকার জন্য অক্সিজেন দিচ্ছে সেই গাছ সামান্য টাকার লোভে কেটে উজার করে নিজেদের অকাল মৃত্যু ডেকে আনবেন না দয়াকরে । মধ্যপ্রাচ্যে তেল বিক্রি করে গাছ লাগায় আর আপনারা গাছ কেটে কেটে দেশটাকে মরুভূমি বানিয়ে দিচ্ছেন হাস্যকর । সাত বছর ধরে বলে আসছি গাছ লাগান মানুষ বাচান । যাইহোক বুঝবেন একদিন যেদিন ইন্ডিয়ার মতন অক্সিজেনের অভাবে রাস্তায় পড়ে মরে থাকবেন । সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন । আল্লাহর সৃষ্টি গরীব অসহায় মানুষদের সাহায্য করবেন । তাদের প্রতি সহনশীল আচরণ করবেন । কারণ এসব মানুষের দোয়া এবং ভালোবাসা হচ্ছে আপনার আখেরাতের একমাত্র সম্পদ । আর এই করোনা মহামারী থেকে সমগ্র মানবজাতির নাজাতের জন্য নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাসের স্থান থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন।  আল্লাহ হাফেজ ।

সামীর রূহাণী
তরুন লেখক ও মডেল।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর