দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহত ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন ।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৩তম বাজেট। ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার এ বাজেট দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহত বাজেটও বটে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১০ সাল থেকে বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর করোরোপ করা হয়েছিল। তবে মামলার কারণে আদায় হয়নি। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় এখন নতুন করে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে বলেন, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রযোজ্য সাধারণ করহার হ্রাস করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ থেকে উদ্ভূত আয়ের ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করা হয়েছিল। মহান এ সংসদে আমি এ করহার অর্থ আইনের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাখাতে ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করছি। যা বর্তমান ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
যেসব পণ্যের দাম কমছে
এবারের বাজেটে কিছু পণ্যের ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, আগাম কর অথবা সম্পূরক শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ফলে কোভিড-১৯ টেস্ট কিট, পিপিই এবং ভ্যাকসিন, তাজা ফল, মুড়ি, ক্রোকারিজ সামগ্রী, হাইব্রিড গাড়ি এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন ইউডার (নিড়ানি) ও উইনোয়ারের (ঝাড়াইকল) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে থ্রেসার মেশিন, পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার, অপারেটেড সিডার, কম্বাইন হারভেস্টর, রোটারি টিলার, নিড়ানি ও ঝাড়াইকলের আমদানি পর্যায়ের আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
স্পিনিং মিলে ব্যবহৃত পেপার কোনের ওপর বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কোভিড-১৯ টেস্ট কিট, পিপিই এবং ভ্যাকসিন আমদানি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। ব্যবসায়ী পর্যায়ে ফলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই ফলের দাম কমতে পারে।
উৎপাদন পর্যায়ে মুড়ির ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাই প্যাকেটজাত মুড়ির দাম কমতে পারে। সিসিভেদে মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। তাই মাইক্রোবাসের দাম কমতে পারে। হাইব্রিড গাড়ির সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। তাই জ্বালানি বান্ধব গাড়ির দাম কমতে পারে।
গ্রামাঞ্চলে মানুষের স্যানিটেশন সুবিধা আরও সুলভ করার লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ‘লং প্যান’-এর ওপর থেকে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অটিজম সেবার কার্যক্রমের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর প্রযোজ্য সমুদয় ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার উৎপাদনের লক্ষ্যে কতিপয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেক্ট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার, প্রেসার কুকারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেক্ট্রিক ওভেনের উৎপাদন পর্যায়ের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দামও কমতে পারে।
বৈশাখী নিউজ/ এপি