প্রতিবছর অপুষ্টির শিকার বিশ্বে প্রতি ৯ জন মানুষের মধ্যে ১ জন

আপডেট: September 29, 2020 |

সারাবিশ্বে প্রতিবছর ১ বিলিয়ন টনেরও বেশি উৎপাদিত খাবার নষ্ট হচ্ছে এবং অপুষ্টির শিকার হচ্ছে বিশ্বে প্রতি ৯ জন মানুষের মধ্যে ১ জন । একদিকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে ২০১৪ সালের পর থেকে পৃথিবীতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে-এমন বাস্তবতায় খাদ্য নষ্ট ও অপচয়রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশেও ২২ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদন পরবর্তী সময়ে নষ্ট হয়।
আজ মঙ্গলবার প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খাদ্য নষ্ট এবং অপচয়’ শীর্র্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও)-এর সহযোগিতায় এই ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির বিভিন্ন দিক নিয়ে আয়োজিত ৫টি ওয়েবিনার সিরিজের তৃতীয় ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, শস্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়ে থাকে। এর বাইরেও খাদ্য নষ্ট হয় বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে।
তিনি আরো বলেন, খাদ্য নষ্ট ও অপচয় ফুড চেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি নেতিবাচক অর্থনৈকি তাৎপর্য সৃষ্টি করে থাকে। প্রকৃত অর্থে খাদ্য নষ্ট ও অপচয় শুধু উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা নয় বরং উন্নত দেশগুলোও একই সমস্যার সম্মুখীন।
এফএও’র মিটিং দ্যা আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের সিনিয়র এসডিজি স্পেশালিস্ট (খাদ্য নষ্ট ও অপচয়) আগাপি হারুতিয়ানায়ন বলেন, সারা বিশ্বে প্রতিবছর উৎপদান, পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায়ে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয় যার আর্থিক মূল্য দাড়ায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে কি পরিমাণ খাদ্য অপচয় হচ্ছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। তিনি আরো বলেন, যখন খাদ্য নষ্ট হয় তখন আসলে খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সম্পদ যেমন পানি, ভূমি, বিদ্যুৎ, শ্রম, পুজি ইত্যাদিরও অপচয় হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ওয়েবিনারে বলেন, ক্রান্তীয় ফল ও ধান উৎপাদনের দিক দিয়ে বিশ্বের প্রথম ১০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। ক্রান্তীয় ফল উৎপাদনের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ এবং ও ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে চতুর্থ। অধ্যাপক কামরুল বলেন, খাদ্য নষ্ট ও অপচয় সম্পর্কে বাংলাদেশে হালনাগাদ কোন তথ্য-উপাত্ত নেই। তবে এ বিষয়ে একটি গবেষণা চলমান আছে। তবে ২০১০ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদন পরবর্তী সময়ে ২২ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উৎপাদন পর্যায়ের কাছাকাছি ধাপগুলোতে খাদ্য বেশি ও ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্য কম নষ্ট হয়ে থাকে; অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোতে উল্টোচিত্র পরিলক্ষিত হয়। সেখানে বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্য বেশি নষ্ট হয়ে থাকে। অধ্যাপক কামরুল মনে করেন খাদ্য নষ্ট ও অপচয়রোধে বাংলাদেশকে অবকাঠামো গড়ে তোলা, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্যাকেজিং ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন- এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন ও ইইউ ডেলিগেশন টু বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা) আশুন্তা তেস্তা অংশগ্রহণ করেন।ওয়েবিনারে মিটিং দ্যা আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের চীফ ট্যাকনিকাল অ্যাডভাইজর নাওকি মিনামিগওসি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পিআইবি সিনিয়র প্রশিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আবদুল মান্নান অনুষ্ঠানটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর