শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বাইডেন, দেবেন হুঁশিয়ারি

আপডেট: March 19, 2022 |
print news

ইউক্রেন যুদ্ধের চতুর্থ সপ্তাহে এসে দেশটির শহরগুলোতে রুশ সৈন্যদের অগ্রযাত্রা খানিকটা স্তিমিত মনে হলেও চীনের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলেছে, যুদ্ধে মস্কোকে সামরিক সহায়তা দিতে পারে চীন। তবে রাশিয়ার আগ্রাসনের সমর্থনে কোনো পদক্ষেপ নিলে তার দায় বেইজিংকে বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার (১৮ মার্চ) চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি স্পষ্ট করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

রয়টার্স লিখেছে, মারিওপোলের অবরুদ্ধ বন্দরে বোমায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপে বেঁচে যাওয়াদের উদ্ধার অভিযানে যখন ইউক্রেইনের উদ্ধারকর্মীরা ব্যস্ত, সে সময়ই রাজধানী কিইভে ফের রুশ গোলাবর্ষণ হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা শান্তি আলোচনার জন্য ফের মিলিত হলেও তারা বলছেন, তাদের মতের ব্যবধান এখনও দুস্তর। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা এখন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে নানা বিপত্তি ও পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামান্যই নমনীয় হয়েছেন। রাশিয়ার অর্থনীতিতে অনবরত আঘাত মোকাবিলায় তার সরকার এখন চীনের দিকে তাকিয়ে আছে।

যুক্তরাষ্ট্র এ সপ্তাহে কিয়েভের জন্য ৮০ কোটি ডলারের নতুন সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এর বিপরীতে বেইজিং ‘ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য’ সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে রাশিয়াকে সরাসরি সহায়তার কথা বিবেচনা করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্লিংকেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, শুক্রবার (১৮ মার্চ) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে স্পষ্ট করবেন, রাশিয়ার আগ্রাসন সমর্থন করে যে কোনো পদক্ষেপ নিলে বেইজিং তার দায় বহন করবে এবং আমরা এর জন্য আরও খরচ করতে দ্বিধা করব না।

ইউক্রেনের রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে অস্বীকার করেছে চীন। একে তারা ‘হামলা’ হিসেবেও বর্ণনা করেনি। চীন বলেছে, তারা ইউক্রেইনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে, কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগেরও কারণ রয়েছে, যার সমাধান করা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে চায়। কিন্তু মস্কোকে চীনের সামরিক সহায়তা ওয়াশিংটন এবং বেইজিংকে দুই বিপরীত মেরুতে নিয়ে যাবে।

দূরত্ব কমছে না

ইউক্রেনের শহরগুলো দখলের ক্ষেত্রে চলমান যুদ্ধ ধ্বংসাত্বক চিত্র নিয়ে আসছে। ইউক্রেন বলছে, রুশ সেনারা স্কুল, হাসপাতাল এবং সাংস্কৃতিক অবকাঠামোগুলোতে হামলা করছে। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বলেছে, এখন পর্যন্ত যুদ্ধে ২ হাজার ৩২ জন বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৮০ জন নিহত ও ১ হাজার ২৫২ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের হিসাবে, নারী ও শিশুসহ প্রায় ৩২ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) মানবিক সহায়তার করিডোরের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৮১০ জনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, যা বুধবারের (১৬ মার্চ) তুলনায় অনেক কম। চলমান যুদ্ধে দুই পক্ষের আলোচনার চতুর্থ দিনে উভয় দেশের প্রতিনিধরা ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যুক্ত হন। তবে ক্রেমলিনের ভাষ্য, এখনও তারা চুক্তিতে পৌঁছানোর পর্যায়ে যাননি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, আমাদের প্রতিনিধি দল ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আমাদের প্রতিনিধিরা… চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করার জন্য প্রস্তুত; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা ইউক্রেনের পক্ষ থেকে সেরকম আগ্রহ দেখি না। মস্কো-এর আগে বলেছে, তারা একটি ফর্মুলায় রাজি হওয়ার কাছাকাছি পর্যায়ে ছিল, যা ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাখবে।

ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, আলোচনা জটিল ছিল। আমাদের অবস্থান ভিন্ন। আমাদের জন্য মৌলিক বিষয়গুলো অলঙ্ঘনীয়। রয়টার্স জানিয়েছে, আলোচনা চালিয়ে গেলেও ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করতে রাজি নয় এবং রাশিয়ার হুঁমকিও মেনে নেবে না। তারা তাদের অবস্থানেই অটল রয়েছে।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর