উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে আটকে পড়া ২৬ জনকে উদ্ধার

আপডেট: June 18, 2022 |

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় পানিতে আটকে পড়া ছয়টি পরিবারের ২৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ জুন) বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এ উদ্ধার তৎপরতায় নেতৃত্ব দেন ইউএনও ফারুক আল মাসুদ। উদ্ধার কাজে অংশ নেন ঝিনাইগাতী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা, জনপ্রতিনিধি, স্কাউট সদস্য ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) গভীর রাত থেকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর পানি উপচে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, বনকালি, চতল ও আহম্মদ নগর, ধানশাইল ইউনিয়নের ধানশাইল, বাগেরভিটা, কান্দুলী, বিলাসপুর ও মাদারপুর এবং কাংশা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর চরণতলা, আয়নাপুর, কাংশা গ্রামসহ ৩০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রামেরকুড়া এলাকায় মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে সকাল থেকে পানি প্রবেশ করে। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করা ছয়টি পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। ওই পরিবারগুলোতে বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী, শিশুসহ ২৬জন ছিল। দিনভর পানিতে আটকে থাকায় এবং পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই পরিবারগুলো অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

এমন পরিস্থিতে খবর পেয়ে ইউএনও ফারুক আল মাসুদ ঘটনাস্থলে যান এবং তার নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা, জনপ্রতিনিধি, স্কাউট সদস্য ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন।

এছাড়া দিনব্যাপী প্লাবিত এলাকাগুলো পরিদর্শন এবং খোঁজ-খবর নেন ইউএনও ফারুক আল মাসুদ, উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক, প্রকল্প বাস্তবান কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রাধা বল্লভ সরকার, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন, সদস্য মো. জাহিদুল হক মনিরসহ আরও অনেকে।

বৈরাগীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান (৬০) বলেন, আমার বাড়ির সবাই বেড়াইতে যাওয়ায় আমি বাড়িতে একাই ছিলাম। ভোরে হঠাৎ বন্যার পানিতে আমি আটকা পড়ি, ঘরের খাটও পানিতে ডুবে ছিল। সন্ধ্যার আগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কাউট সদস্য আশিক ও স্বেচ্ছাসেবী সোহান আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তাদের জন্য আমি হয়ত রেহাই পাইছি।

রামেরকুড়া এলাকার আক্কাস আলী বলেন, বন্যার পানিতে আমরা খুবই বিপদে পড়েছিলাম। পানির স্রোতে মনে হচ্ছিল আমার বাড়ি ভেঙে নিয়ে যাবে। এছাড়া খাবারের অভাবে আমার নাতনি চিৎকার করছিল। বিকেলে নাতনিসহ আমাদের সবাইকে ফায়ায় সার্র্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার করেন।

ঝিনাইগাতী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মান্নান বলেন, ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যার পানিতে আটকে পরিবার গুলোকে জনপ্রতিনিধিসহ স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ করা হয়েছে। আমাদের কাজে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন, সদস্য মো. জাহিদুল হক মনির ব্যাপক সহযোগিতা করেছে।

ইউএনও ফারুক আল মাসুদ বলেন, কিছু পরিবার পানিতে আটকে পড়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর