ফরিদপুরের বোয়ালমারীর কুমার নদে নৌকা বাইচ দেখতে মানুষের ঢল


তারেকুজ্জামান, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার তেলজুড়ী এলাকার কুমার নদে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ ও গ্রামীণ মেলা।
সারা বছর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকে ওই এলাকা ও আশ পাশের এলাকার বাসিন্দারা।
নৌকা বাইচ দেখতে জেলার ও পাশর্^বর্তী জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাজারো মানুষের ঢল নামে কুমার নদীর পাড়ে।
শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নন, নৌকা বাইচ দেখতে আর মেলা থেকে হরেক রকম পশরা কিনতে আশেপাশের এলাকা থেকেও হাজারো নারী পুরুষ ছুটে আসেন তেলজুড়ী বাজারে।
ওই গ্রামের মেয়েদের জামাইরা শ্বশুরবাড়ি আসেন এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে, পরিবার-পরিজন নিয়ে মেতে ওঠেন আনন্দে।
প্রতি বছর ৯ আশ্বিন (২৬ সেপ্টেম্বর) বসে এই মেলা ও নৌকা বাইচের আসর। এবছর ১২৩ তম এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন ওই এলাকার কৃতি সন্তান কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট লিয়াকত শিকদার।
নৌকা বাইচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিশিষ্ট জন, জন প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে তিনদিন ব্যাপী গ্রামীন মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় মিষ্টির দোকান, খেলনা, বিভিন্ন খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে উঠে স্থানীয় ও আশ পাশের উপজেলার বাসিন্দারা।
নৌকা বাইচের পাশাপাশি কুমার নদীতে হাজারো মানুষ ট্রলার নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে এই উৎসব।
একই উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল মেলায়। সেখানে নানা রকম মিষ্টি, জিলাপি, দানাদার, লবঙ্গ লতিকা সহ নানা রকম খাবারের পসরা বসে। সেখানে বেচাকেনাও হয় ভালো।
নৌকা বাইচ ও মেলায় ঘুরতে আসা গৃহবধু নাজমা আক্তার জানান, প্রতি বছরে এই দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকি বাবার বাড়ি আসার জন্য।
স্বামী, সন্তানকে সাথে নিয়ে এসেছি নৌকা বাইচ দেখতে। খুব ভালো লেগেছে। মেলায় ঘুরেছি, অনেক কিছু কিনেছি।
মেলায় আসা দশম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আক্তার জানান, বান্ধবীদের নিয়ে নৌকা বাইচ দেখেছি, খুব ভালো লেগেছে। মেলায় ঘুরেছি, অনেক কিছু কিনেছি। খাবার খেয়েছি, অনেক আনন্দ পেয়েছি।
মেলায় মিষ্টির দোকান নিয়ে বসেছেন অনীল সাহা। তিনি বলেন, এই নৌকা বাইচ ও মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর অপেক্ষা করি। মেলায় দোকান দিয়েছি।
দোকানে রসগোল্লা, আমৃত্তি, দানাদার সহ বিভিন্ন মিষ্টি সামগ্রী রেখেছি। বেচাকেনাও খুব ভালো হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, একদিনের জন্য নৌকা বাইচ হলেও মেলা চলে তিন দিন। এই মেলায় বেচাকেনা করে লাভ হয় অনেক।
খেলানার দোকানী আরশাদ মোল্লা বলেন, মেলায় এসেছি ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। তিন দিন থাকবো, বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। কাস্টমার যা চাচ্ছে তা দিতে পারছি।
নৌকা বাইচ ও মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি এ এফ এম লিটু সিকদার জানান, শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই নৌকা বাইচ ও গ্রামীন মেলা।
ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। এবছর ১২৩ তম আয়োজন করা হয়। এটি একটি উৎসবে পরিনত হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ আশ পাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এই উৎসবে অংশ নেয়।
নৌকা বাইচ ও মেলার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লিয়াকত শিকদার।
তিনি বলেন, নৌকা বাইচ আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। এই বাংলায় হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করে। সকলে সম্প্রীতির মধ্যে দিয়ে বসবাস করি।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র নৌকা বাইচ নয়, জারী, সারি লোক সাংস্কৃতির জন্য এই বাংলা প্রসিদ্ধ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই লোক সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার হয়েছে।
এই সংস্কৃতির উপর এর আগে বিভিন্নভাবে আঘাত এসেছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়েতের সময় এই সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, সম্প্রীতিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে এসেছি আমরা।
লিয়াকত শিকদার বলেন, আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি, এই আলোকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা গনতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে আমাদের সংস্কৃতি নিরাপদ থাকবে।
আমাদের বাঙালি সমাজ নিরাপদ থাকবে। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত উজ¦ল থাকবে। তাই আমি অনুরোধ রাখবো দল মত নির্বিশেষে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারকে পুরনায় ক্ষমতায় আনতে হবে।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, গ্রামীণ জনপদের এই ঐতিহ্য যেন টিকে থাকে বহুদিন। বাঙালি সাংস্কৃতির এই আয়োজন সফল হোক প্রতি বছর, এটি তাদের কামনা।
জয়নগর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ কৃষ্ণ বিশ^াস জানান, নৌকা বাইচ ও মেলাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জয়নগর পুলিশ ফাড়ি, ডহরনগর ফাড়ি ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি আরো জানান, নৌকা বাইচ একদিনে শেষ হলেও, মেলা চলবে তিন দিনব্যাপী। মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমরা সব সময় এখানে থাকবো যাতে মানুষ আনন্দমুখর পরিবেশে বাড়ি ফিরতে পারে।