দুর্গোৎসব বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব  : শ্রাবণী রায়

আপডেট: October 22, 2023 |
inbound3301221648594733145
print news

ইমাম হাছাইন পিন্টু, নাটোর প্রতিনিধি: আজ রবিবার (২২ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী। আজ সকাল ৯টা শান্তি ভারতী সংঘ মন্দিরে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা শুরু হয়।

অষ্টম তিথিতে পূজা সূচনায় পূজা সহ অঞ্জলি দেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায়

অঞ্জলি শেষে গুরুদাসপুর বাসীসহ সবাইকে দুর্গা উৎসবে শুভেচ্ছা সহ গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় বলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা দুর্গোৎসব বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। শারদীয় দুর্গোৎসবের মূলমন্ত্র হচ্ছে অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা।

সমাজের অন্যায়, অবিচার, অশুভ ও অসুরশক্তি দমনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ পূজা হয়ে থাকে।
আবহমান কাল থেকে হিন্দু সম্প্রদায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে নানা আয়োজনের মাধ্যমে দুর্গাপূজা উদ্যাপন করে আসছে।

এই শারদীয় উৎসব আজ একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক, উদারনৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে দুর্গোৎসব সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন আরও দৃঢ় করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অষ্টমীর দিনে সকাল ১১টায় নাটোরের গুরুদাসপুর চাঁচকৈড় পৌরসদরে শান্তি ভারতী সংঘ অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা।

অষ্টমীর দিন বিশেষ আকর্ষণ থাকে কুমারী পূজা এবং সন্ধিপূজায়। বিকাল সোয়া ৫টা থেকে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

অষ্টমীতে সকাল থেকেই পূজা হবে, অঞ্জলি প্রদান করা হবে। বিকালে সন্ধিপূজা হবে। সন্ধিপূজা দুর্গাপূজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এটি অসুরকে বধ করার সন্ধিক্ষণ।

হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়।

শ্রীরাম কৃষ্ণের কথামতে, কুমারী পূজার বিষয়ে বলা হয়েছে, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য।

শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দতে পীঠ নায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে তাকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।

নির্বাচিত কুমারীকে মহাষ্টমীর দিন ভোরে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। তাকে সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা ও হাতে ফুল দেওয়া হয়।

কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শপাচারে (ষোলো উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ সময় চারদিকে শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি আর দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে।

কুমারী পূজার তাৎপর্য প্রসঙ্গে পুরোহিত বলেন, আজ অনেক চিন্তাশীল মানুষ অনুভব করছেন, আধুনিক পৃথিবীতে সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংকট নিরসন করে অগ্রগামী হতে হলে মাতৃজাতির প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।

জগতের অনেক স্থানে নারীকে সম্মান দেওয়া হয় পত্নীরূপে বা সহকারিণীরূপে। কিন্তু নারীর সবচেয়ে মহিমময় রূপ তার মাতৃরূপ। তাই এই মহাষ্টমী তিথিতে আমরা জগতের সব মাতৃজাতিকে উদ্দেশ্য করে কুমারী মাতাকে প্রণাম জানাই। তার মাধ্যমে আদ্যাশক্তিকে আমাদের প্রণাম নিবেদন করি।

অশুভ শক্তিকে শোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দুসম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। যদিও দেবী আসার ঘণ্টা বেজে যায় মহালয়ার দিন থেকেই।

সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন– বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা।

শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন— দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

এ বছর ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দুর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে আর আগামী মঙ্গলবার দশমীর দিন বিদায় নেবেন এই একই বাহনে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর