শিবগঞ্জে নারী আনসার সদস্য হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন: মুল আসামি গ্রেফতার

আপডেট: October 26, 2023 |
inbound8263457179573312624
print news

শাহজাহান আলী, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বগুড়ার শিবগঞ্জ থানাধীন পৌরসভার অন্তর্গত বানাইল এলাকায় নিজ ঘরে আনসার সদস্য আশা দেবী মহন্তের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মুল আসামি নয়ন ইসলাম(২৩) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জানা যায়,সনাতন ধর্মের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা চলাকালে গত ২৩ অক্টোবর রাত্রি অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় শিবগঞ্জ পৌরসভাধীন বানাইল উত্তরপাড়া সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য কর্মরত আনসার ভিডিপি সদস্য আশা দেবী (৩১) স্বামী-শ্রী ভজন মোহন্ত, সাং-বানাইল, থানা-শিবগঞ্জ, জেলা-বগুড়া পোশাক পরিবর্তনের জন্য তার নিজ বাড়িতে যায়।

পরবর্তীতে রাত্রি অনুমান সোয়া ১টার দিকে আশা দেবীর শ্বাশুড়ী ও জা বাড়িতে গিয়ে মেইন গেটের দরজা লাগানো অবস্থায় পায়।

ডাকাডাকি করে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ওই বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে আশা দেবীর ঘরে প্রবেশ করলে তারা আশা দেবীর মৃত দেহ ঘরের মেঝেতে সোফার পার্শ্বে গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় ও পাশে একটি মোবাইল চার্জারের ক্যাবল পড়ে থাকতে দেখতে পায়।

পরবর্তীতে লোকজনদের সহায়তায় তাকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই রাত্রি অনুমান ১১.৫০ ঘটিকার সময় তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

এ মৃত্যু সংক্রান্তে ২৪ অক্টোবর বুধবার শিবগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।

চাঞ্চ্যল্যকর এই হত্যা মামলাটির মূল রহস্য উদঘাটন, হত্যার সাথে জড়িত আসামি গ্রেফতারের জন্য তাৎক্ষনিক বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিপিএম, পিপ এম এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় মোঃ স্নিগ্ধ আখতার, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), বগুড়া এবং সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার তানভীর হাসান এর তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রউফ, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ জিল্লুর রহমান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিঃ)/মোঃ ইব্রাহীম হোসেন, শিবগঞ্জ থানা, বগুড়াসহ জেলা গোয়েন্দা শাখা, বগুড়ার একটি চৌকস টিম কাজ শুরু করে।

পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষন পূর্বক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৫ অক্টোবর বুধবার রাত্রি অনুমান ০১.১৫ ঘটিকার সময় মোঃ স্নিগ্ধ আখতার, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), বগুড়া এবং সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার তানভীর হাসান মহোদয় এর তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রউফ, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ জিল্লুর রহমান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিঃ)/মোঃ ইব্রাহীম হোসেন, শিবগঞ্জ থানা, বগুড়াসহ জেলা গোয়েন্দা শাখা, বগুড়ার একটি চৌকস টিম শিবগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চ্যল্যকর নারী আনসার- ভিডিপি সদস্য আশা দেবী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযুক্ত আসামি মোঃ নয়ন ইসলাম (২৩) পিতা-মোঃ রমজান আলী,সাং বানাইল পশ্চিমপাড়া, থানা-শিবগঞ্জ, জেলা-বগুড়াকে তার নিজ বাড়ি হতে গ্রেফতার করে ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত নয়ন ইসলাম জানায় যে, মৃত আশা দেবী ও অভিযুক্ত নয়ন প্রতিবেশী।

প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে আশা দেবীর সাথে অভিযুক্ত নয়ন এর মাঝে মধ্যেই দেখা সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা হতো। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

এভাবে চলাকালে তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হয়। গত ০৩ (তিন) মাস পূর্বে অভিযুক্ত নয়ন অন্য একজন নারীকে বিয়ে করে।

তারপর থেকে আশা দেবীর সাথে আসামি নয়ন মেলামেশা করা বন্ধ করে দিলে এটি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও দ্বন্দ তৈরী হয়।

তখন অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীকে হত্যার পরিকল্পনা করে । অভিযুক্ত নয়ন ভেবেছিল, তার ও আশা দেবীর সম্পর্কের কথা কেউ জানে না।

পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটনার দিন ২৩ অক্টোবর রাত্রি অনুমান ১০:০০ ঘটিকার সময় ডিউটিরত অবস্থায় আশা দেবী মন্দির থেকে পোশাক পরিবর্তন করার জন্য নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তারা পাম্পের গেটের সামনে আশা দেবীর সাথে অভিযুক্ত নয়ন এর দেখা হয়।

আশা দেবী তার বাড়ির দিকে রওনা দিলে অভিযুক্ত নয়নও আশা দেবীর পিছে পিছে তার বাড়ির দিকে যায় । এক পর্যায়ে আশা দেবী বাড়িতে প্রবেশ করে মেইন গেইট বন্ধ করে দেয় ।

ঐ সময় আশা দেবীর বাড়িতে কেউ ছিল না। সবাই পূজা মন্ডপে ছিল। সেই সুযোগ বুঝে অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীর বাড়ির পিছনের ইটের প্রাচীর টপকিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে আশা দেবীর শয়ন ঘরে প্রবেশ করে।

তখন পূজায় যাওয়ার জন্য আশা দেবী তার পরিহিত আনসার- ভিডিপি’র পোষাক পরিবর্তন করছিল। অভিযুক্ত নয়নকে আশা দেবীর শয়ন ঘরে দেখে রাগ করে।

পরবর্তীতে অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীকে ফুসলিয়ে তার সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক করে। অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীর বিছানায় শুয়ে থেকে কিভাবে তাকে হত্যা করা যায়।

সেই চিন্তা করতে করতে অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীর দুই হাত পিছন দিক হতে মুঠি করে ধরে খাটের পাশে সোফায় থাকা মোবাইল চার্জারের ক্যাবল দিয়ে আশা দেবীর মুখের মধ্যে পেচিয়ে পাশে থাকা ওড়না দ্বারা আশা দেবীর গলায় শ্বাস রোধ করে হত্যা করে এবং তার মৃত দেহ সোফার পাশে ফেলে রেখে অভিযুক্ত নয়ন বাড়ির পেছনের ইটের প্রাচীর টপকিয়ে পালিয়ে যায়।

চাঞ্চল্যকর এই ক্লু-লেস হত্যা মামলার গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত নয়নকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়।

বিজ্ঞ আদালতে অভিযুক্ত নয়ন হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছে ।

বগুড়া এর শিবগঞ্জ থানার এফআইআর নং-৪২ তারিখ-২৪ অক্টোবর ২০২৩; জিআর নং-৫০৮ ২৪ অক্টোবর ২০২৩।

উক্ত ঘটনা সংক্রান্ত আজ বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপির ১২ টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সম্মানিত পুলিশ সুপার বগুড়ার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম, পিপিএম প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ সময় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর