ভারত নির্ভরতা কমাতে তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনছে মালদ্বীপ


নিজের সমুদ্রসীমায় নজরদারি চালাতে ও প্রতিবেশী ভারতের ওপর নির্ভরতা কমাতে তুরস্ক থেকে আধুনিক রিকন ড্রোন কিনছে মালদ্বীপ। তবে, সামরিক সেই ড্রোন অস্ত্রবাহী কিনা, তা এখনো নিশ্চিত করেনি মালদ্বীপ বা তুরস্কের প্রশাসন। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সমুদ্রসীমায় নজরদারি চালাতে মুইজ্জু প্রশাসন তুরস্কের সঙ্গে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চুক্তি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারত নির্ভরতা কমাতে তুরস্কের সাথে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চুক্তি করেছে মালদ্বীপ। ওই অর্থ ব্যয়ে তিনটি ড্রোন কিনছে তারা। এর আগে মালদ্বীপ জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর (এমএনডিএফ) সাথে সমুদ্রসীমায় নজরদারির কাজ করতো ভারত। তারা সেজন্য দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে একটি ‘ডরনিয়ার বিমান’ ও দুটি ‘ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার’ উপহার দিয়েছিল।
বিমানটি নজরদারিতে ব্যবহৃত হলেও বাইরের দ্বীপগুলো থেকে রাজধানী মালের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও রোগী পরিবহনের কাজেও ব্যবহৃত হতো। তুরস্ক থেকে আনা নতুন ড্রোনগুলো ডর্নিয়ার বিমানের স্থলে প্রতিস্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে মালদ্বীপ সমুদ্রের গভীরে আরো নজরদারীর সক্ষমতা লাভ করবে।
এছাড়া মালদ্বীপের বর্তমান সরকার ফার্মাসিউটিক্যালের উৎসকে বৈচিত্র্যময় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এরই অধীনে তারা তুরস্ক থেকে প্রধান খাদ্য সামগ্রী আনার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও থাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলোকে কভার করার জন্য সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা প্রসারিত করা হচ্ছে।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ক্ষমতায় এসেই মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় প্রভাব দূর করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। ইতোমধ্যে তিনি চীন সফর করেছেন। ওই সফর থেকে ফিরেই আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে তার দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের চলে যেতে বলেছেন।
এ নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই তুরস্ক থেকে সামরিক ড্রোন কেনার চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ হলো।
ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্রসীমায় নজরদারির যে কাজ এত দিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা করে এসেছেন, নতুন সরকার সেই কাজ এখন থেকে নিজেরাই করবে।
এদিকে, মালদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার না করতে সমাধান খুঁজছে ভারত। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন সমাধানের আভাস মেলেনি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মালদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহারের অর্থ হলো ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়া। পাশাপাশি কৌশলগত জায়গাটি চীনের হাতে তুলে দেয়া। অবশ্য ভারত চেষ্টা করছে, সে দেশকে উপহার দেয়া একটি বিমান ও দুটি হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যদি সামান্য কয়েকজন সামরিক সদস্যকে রাখা যায় সেই বোঝাপড়ায় আসতে। তবে, সেই সম্ভাবনা খুবই কম বলে মত বিশ্লেষকদের।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে মালদ্বীপের উপমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কটূক্তির জেরে টানাপোড়েন চলছে দুদেশের সম্পর্কে। এর পর থেকে সময় যত যাচ্ছে তিক্ততা যেন ততই বাড়ছে।
সূত্র : দি মালদ্বীপ জার্নাল