ব্যক্তিগত আবেগে কাঁদলেন নাজমুল হোসেন শান্ত

আপডেট: May 10, 2024 |

 

ঝরঝর করে কাঁদছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অনুশীলন করতে গতকাল বিকেলে জিম্বাবুয়ে দলের মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আসা এবং বাংলাদেশ দলের সেই পর্ব সেরে চলে যাওয়ার মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা সেটি। বাংলাদেশ অধিনায়ককে কাঁদতে দেখে তাঁর আশপাশের পরিবেশও ভারী হয়ে উঠল অনেকটা।

এরই মধ্যে আফ্রিকান দলটির বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নেওয়া বাংলাদেশের আজ ব্যবধান আরো বাড়ানোর মিশনে নামার আগের দিন নাজমুলের কান্নায় কৌতূহলী হয়ে ওঠার কারণ আছে যথেষ্টই।

যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তাঁর ব্যক্তিগত আবেগের বিস্ফোরণই কান্না হয়ে ঝরেছে। ওই সময়টায় মা দিবস সামনে রেখে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি বিশেষ অডিও-ভিজ্যুয়ালের কাজ করছিল বিসিবির সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগ। সেটির দৃশ্য ধারণের সময়ই মাকে নিয়ে বলতে গিয়ে কাঁদলেন নাজমুল। পরে অবশ্য সামলে নিতেই পরিবেশ হালকাও হলো কিছুটা।

কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের খেলার ধরন, বিশেষ করে ব্যাটিং নিয়ে যে আলোচনা বিদ্যমান, তাতে পরিবেশটি এখনো বেশ ভারীই হয়ে আছে। সেটিকে হালকা করার উপাদানও সরবরাহ করতে পারছেন না ব্যাটাররা। আরো সমস্যা হয়ে গেছে একই সময়ে আইপিএলও চলছে বলে। সেখানে যখন এক্সপ্রেসওয়ের গতিতে রানের চাকা ছুটছে, তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মহাসড়কে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ঢিমেতাল! আগের রাতেই লখনউ সুপার জায়ান্টসের ১৬৫ রান মাত্র ৯.৪ ওভারে তাড়া করে জেতা সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ব্যাটিং আসন্ন কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ‘টেমপ্লেট’ই হয়ে উঠেছে।

তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একের পর এক জয়ে বর্তমান উজ্জ্বল হলেও বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যৎ তেমন আলোকিত বলে মনে হচ্ছে না। আজ সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুরে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি সামনে রেখে গতকাল দুপুরে দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা তাসকিন আহমেদও টের পেলেন সেটি। এই ম্যাচ নিয়ে যতটা না, তার চেয়ে আইপিএল নিয়েই বেশি জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হলো তাঁকে। আইপিএলের ব্যাটিং দেখার পর এই সংস্করণে নিজেদের ‘ব্যাক বেঞ্চার’ বলে মনে হয় কি না, শুনতে হলো এমন বিব্রতকর প্রশ্নও।

তিন ম্যাচের মধ্যে একটিতেই আগে ব্যাটিং করে কোনোমতে ১৫০ পার করা দলকে নিয়ে এ রকম ‘রিভিউ’ অবান্তরও নয়।

তাসকিন যদিও নানাভাবে বোঝাতে চাইলেন যে আইপিএল আর বিশ্বকাপের খেলার ধাঁচ এক হবে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন কন্ডিশন এবং উইকেট আইপিএলের মতো রানের উদ্দাম গতি ছুটতে দেবে না বলেও বিশ্বাস তাঁর। তবে এর সবই সম্ভাবনার কথা। এর উল্টোটাও বরং হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বড় রানের জন্য পরিচিত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রানের বল্গা হরিণ ছোটাতে না পারায় সন্দেহের অবকাশ তো থেকে যায়ই।
অবশ্য এই ম্যাচের বাংলাদেশ পুরো শক্তি নিয়েই নামছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান আর সৌম্য সরকারদের শেষ দুই ম্যাচের দলে যোগ দেওয়াটা দলীয় ভারসাম্যে ভিন্নতাও এনেছে। নেমে পড়ার আগে সাকিব কাল লম্বা সময় ব্যাটিং অনুশীলনে মজে থাকলেন। বোঝাই যাচ্ছে যে দলের রানের গতি বাড়াতে ভীষণ সচেষ্ট এই অলরাউন্ডারও। তা ছাড়া সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতে এখন পুরোপুরি বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতেও মনোনিবেশ করার সুযোগ এসে গেছে। তবু তাসকিনের সতর্কতাও আছে, ‘আসলে যতই কথা হচ্ছে জিম্বাবুয়ে নিয়ে, আবার যদি একটি ম্যাচ হেরে যাই, তখন কিন্তু আবার অন্য রকম কথা হবে!’

তাই বলে ব্যাটারদের স্ট্রাইক রেট নিয়েও তো কথা থেমে নেই। এ ক্ষেত্রে তাসকিনের নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে, ‘তুলনা করলে আইপিএলের (ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর চেয়ে) একটু দুর্বল (জিম্বাবুয়ে), তবে আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলেই জিততে হচ্ছে কিন্তু।’ সিরিজ জেতা হয়ে যাওয়ার পর এবার সেই ‘ভালো’র সীমানা বাড়ানোর সুযোগও হয়ে উঠেছে শেষ ম্যাচ দুটি। ব্যাটারদের ব্যাটে রানের দুরন্ত গতিই হয়তো পারে নেতিবাচক আলোচনায় ভারী হয়ে থাকা বাতাসটাকে হালকা করতে। গতকাল বিকেলে কান্নায় ভেঙে পড়া নাজমুল অ্যান্ড কোং কি দেশ ছাড়ার আগে সেই ভরসা জোগাতে পারবেন? প্রমাণ উপস্থাপন না করা পর্যন্ত অবশ্য সংশয় দূর হওয়ার নয়!

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর