অনুশোচনা নেই আওয়ামী লীগে, যে অপেক্ষায় তারা

আপডেট: November 15, 2024 |
inbound6776540985830166178
print news

বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর তিন মাস পরেও নিজেদের কৃতকর্মের বিষয়ে আওয়ামী লীগে কোনো অনুশোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং পুরো বিষয়টিকে এখনো ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই মনে করে দলটি।

বিশেষ করে, গত জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলন দমনে যেভাবে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তাতে যত প্রাণহানি হয়েছে, সেটির দায় স্বীকার করে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি দলটিকে।

দলটির শীর্ষ নেতারা এখনো বিশ্বাস করেন যে গণঅভ্যুত্থানের নামে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের’ মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।

একই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নেতারা।

তবে এসবের মধ্যেই আগস্ট পরবর্তী সাংগঠনিক বিপর্যয় কাটিয়ে দলটি আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। তৃণমূলে কেউ কেউ এলাকায়ও ফিরতে শুরু করেছেন।

কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা করতে গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস পর সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম কর্মসূচি দিতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগকে।

তবে এখনই সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নেই বলে শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যাচ্ছে।

বরং দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো যে হতাশা ও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, সেটি সামনে আরো বেড়ে অন্তর্বর্তী সরকার কতদিনে জনসমর্থন হারায়, আপাতত সেটিই দেখার অপেক্ষা করছেন তারা।

তবে বিদেশে ‘আত্মগোপনে’ থেকে শীর্ষ নেতাদের বাংলাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করা নিয়ে দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকের ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে তারা দেশে নেতা-কর্মীদের আরো বিপদের মুখে ফেলছেন।

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ব্যর্থ হলেও নিজেদের কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা না চাইলে মাঠের রাজনীতিতে ফেরা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে।

‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানকে শুরু থেকেই ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে আওয়ামী লীগ। গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে দেশে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই প্রথম ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন।

‘এটা যে একটা বিরাট চক্রান্ত, সেটা বুঝাই যাচ্ছিল,’ গত ২৪ জুলাই সাংবাদিকদের বলেন শেখ হাসিনা।

ক্ষমতা হারানোর তিন মাস পরেও আওয়ামী লীগ একই কথা বলছে।

‘এটা (গণঅভ্যুত্থান) যে একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল, ইউনূস সরকারের কথাবার্তা ও কাজ-কর্মেই সেটি ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেও সে কথা স্বীকার করেছেন।’

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে’র একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি বলেন, ‘এ (বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের) আন্দোলন খুব পরিকল্পিতভাবে চালিয়ে নেয়া হয়েছে। কিছুই হঠাৎ হয়নি।’

আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকাবিরোধিতায় রূপ নেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি বিদেশী শক্তিরও ভূমিকা রয়েছে।

‘স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে, তারাই এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত। বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণ করতে চায়,’ বলছিলেন সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

গত ৫ আগস্টের পর ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারেও একই কথা জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

‘আমি এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে (আন্দোলনকারী) ছোট গোষ্ঠীটি বিদেশী একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্ররোচিত হয়েছিল। আমি (পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা) আইএসআইকে প্রবলভাবে সন্দেহ করি।’

যদিও এর আগেও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন ষড়যন্ত্রের কথা বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামী লীগ কেন কথিত সেই ষড়যন্ত্র রুখতে ব্যর্থ হলো?

‘ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেটা আমরা জানতাম। কিন্তু কোটা ইস্যু ধরে সেটি যে এতদূর গড়াতে পারে, ওইটা আমরা কেউই ভাবতে পারিনি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীগুলোও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম।

দায় নিতে চায় না আওয়ামী লীগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে গত জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে বলপ্রয়োগ করেছে এবং তাতে যত মানুষ হতাহত হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসে সেটি নজিরবিহীন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, আন্দোলন চলাকালে তিন সপ্তাহে সাড়ে আট শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিভাগই মারা গেছেন গুলিতে।

এছাড়া আহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই হাত, পা ও চোখ হারিয়েছেন; পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন কেউ কেউ।

কিন্তু হতাহতের এসব ঘটনার পুরো দায় নিতে চায় না আওয়ামী লীগ।

‘শুরু থেকেই আমরা বলে আসছিলাম, এই আন্দোলনে একটা তৃতীয়পক্ষ রয়েছে, যাদের গুলিতে সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন নাছিম।

পরিকল্পিত যেই ‘ষড়যন্ত্রে’র কথা আওয়ামী লীগ বলছে, সেটির অংশ হিসেবেই এটি কথা হয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

‘সরকারের একজন উপদেষ্টাও তো এই কথা স্বীকার করেছেন যে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল বাংলাদেশের পুলিশ ব্যবহার করে না, অথচ সেই অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছে,’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১২ আগস্ট তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আহত আনসার সদস্যদের বক্তব্য শুনে আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে।

পুলিশের ফায়ার (গুলি) কম লাগছে তাদের। সিভিলিয়ান পোশাকে ৭.৬২ রাইফেলের গুলি লেগেছে। ম্যাসিভ ইনভেস্টিগেশন দরকার। এরা কারা? কাদের হাতে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল গেলো?’

যদিও পরে হোসেন দাবি করেন, গণমাধ্যমে তাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

‘আমি বলেছিলাম, পুলিশের কাছে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল কারা দিয়েছে, এটা প্রথম আমি তদন্ত করবো…এমনকি আমি এ কথাও বলেছিলাম, সিভিলিয়ানদের হাতে আমি এই রাইফেল দেখেছি।

দে আর নট পার্ট অব পুলিশ। আমি সেটাও তদন্তের কথা বলেছিলাম,’ গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।

তবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকেই ‘তৃতীয়পক্ষের গুলি’ চালানোর বিষয়ে কথা বলে আসছিল আওয়ামী লীগ। তাহলে তখন কেন তাদের দাবি অনুযায়ী ওই ‘পক্ষটি’কে শনাক্ত করা সম্ভব হলো না।

‘সেটার কথা অবশ্যই মাথায় ছিল। কিন্তু তখন দেশে যে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, সেটি সামাল দেয়াকেই সরকার বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল,’ বলেন নাছিম।

আওয়ামী লীগ এসব কথা বললেও পুলিশ, বিজিবি ও দলটির বন্দুকধারী নেতাকর্মীরা যে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, সেটার অসংখ্য ছবি ও ভিডিও তখনই সামনে এসেছে। এমনকি ‘পুলিশের পোশাক পরে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে’ এমন বক্তব্যও তখন এসেছে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের মুখ থেকে।

‘এরকম ঘটনা যে একেবারেই ঘটেনি, সেটা তো আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটনাগুলোর তদন্তও তো আমরা শুরু করেছিলাম। সেগুলোর তদন্ত শেষ করলেই কার কতটুকু দায়, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম।

জুলাই থেকে গত চার মাসে হামলায় দলটির কয়েক শ’ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ।

‘ইতোমধ্যেই আহত-নিহতদের তথ্য সংগ্রহ আমরা শুরু করেছি,’ বলেন চৌধুরী।

সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাতিল করা হয়েছে ১৫ আগস্টের শোক দিবস, সংবিধান দিবসসহ জাতীয় আটটি দিবস।

এখন ‘গণহত্যার’ অভিযোগে আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ অন্য নেতাদের বিচার করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। এমনকি দল হিসেবে আওয়ামীকে নিষিদ্ধও করারও দাবি করছেন অনেকে।

‘এগুলোর সবই ষড়যন্ত্রের অংশ,’ বলছিলেন চৌধুরী।

আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যেইএসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

‘অতীতেও এমন চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগকে দাবাতে পারেনি, এরাও পারবেন না,’ বলেন তিনি।

তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারছে না…আমরা একটু নিশ্চুপ আছি, যাতে আমাদের ওপর দোষ না আসে।’

অন্তর্বর্তী সরকার কখন ব্যর্থ প্রমাণিত হয়, দলটি এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছে।

‘দেশের ক্ষতি করার জন্য এরা যে মিথ্যা বলে ও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করেছে, সেটা জনগণ বুঝে গেছে। খুব শিগগিরই এদের পতন ঘটবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কী বলছেন?
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পর হামলার ভয়ে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দলটির নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

গত তিন মাসে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসায় তাদের কেউ কেউ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছিলেন।

কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ঘোষণার পর আবারো ঘর ছাড়তে হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

‘নিজেরা নিরাপদে থেকে বিদেশে বসে বসে নেতারা যে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন, তারা কি আমাদের কথা ভাবেন? ভেবে থাকলে এমন কর্মসূচি তারা এখন কিভাবে ঘোষণা করেন?,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের একজন নেতা।

একই সুরে কথা বলেছেন তৃণমূলের অন্য নেতারাও। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই অংশ নিবেন না বলে জানিয়েছেন।

‘দলের জন্য যথেষ্ঠ ত্যাগ স্বীকার করেছি। তাতে লাভ কী হয়েছে? মার খাই আমরা, রক্ত দিই আমরা, আর হাইব্রিড নেতারা এসে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়,’ বলছিলেন দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতা।

তিনি অবশ্য এখনো এলাকাতেই অবস্থান করছেন।

‘এলাকাতেই আছি। কিন্তু বাড়ির বাইরে খুব একটা বের হই না,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তারা দু’জনই মনে করেন যে জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলন দমনে সরকার ও দলের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগের দুঃখপ্রকাশ করা উচিৎ।

তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারছে না…আমরা একটু নিশ্চুপ আছি, যাতে আমাদের ওপর দোষ না আসে।’

অন্তর্বর্তী সরকার কখন ব্যর্থ প্রমাণিত হয়, দলটি এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছে।

‘দেশের ক্ষতি করার জন্য এরা যে মিথ্যা বলে ও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করেছে, সেটা জনগণ বুঝে গেছে। খুব শিগগিরই এদের পতন ঘটবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কী বলছেন?
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পর হামলার ভয়ে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দলটির নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

গত তিন মাসে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসায় তাদের কেউ কেউ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছিলেন।

কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ঘোষণার পর আবারো ঘর ছাড়তে হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

‘নিজেরা নিরাপদে থেকে বিদেশে বসে বসে নেতারা যে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন, তারা কি আমাদের কথা ভাবেন? ভেবে থাকলে এমন কর্মসূচি তারা এখন কিভাবে ঘোষণা করেন?,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের একজন নেতা।

একই সুরে কথা বলেছেন তৃণমূলের অন্য নেতারাও। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই অংশ নিবেন না বলে জানিয়েছেন।

‘দলের জন্য যথেষ্ঠ ত্যাগ স্বীকার করেছি। তাতে লাভ কী হয়েছে? মার খাই আমরা, রক্ত দিই আমরা, আর হাইব্রিড নেতারা এসে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়,’ বলছিলেন দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতা।

তিনি অবশ্য এখনো এলাকাতেই অবস্থান করছেন।

‘এলাকাতেই আছি। কিন্তু বাড়ির বাইরে খুব একটা বের হই না,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তারা দু’জনই মনে করেন যে জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলন দমনে সরকার ও দলের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগের দুঃখপ্রকাশ করা উচিৎ।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর