“না” এর চেয়ে নারীর শক্তি বেশি: ডিআইইউ শিক্ষার্থীরা

আপডেট: March 8, 2025 |
inbound3693799428590665509
print news

মোঃ আল শাহারিয়া সুইট, ডিআইইউ প্রতিবেদক: নারী দিবস শুধুমাত্র একটি দিন নয় এটি সমতা, সম্মান ও ন্যায়ের পথে একসঙ্গে চলার অঙ্গীকার।

নারীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা তখনই প্রকাশ পাবে, যখন তাঁর সমান অধিকার, সুযোগ এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হবে। নারী পুরুষ একসঙ্গে এগিয়ে চললেই পৃথিবী হবে আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ।

শনিবার (৮-মার্চ) বিশ্ব নারী দিবসে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নারী শিক্ষার্থীরা মতামতে জানান তাদের প্রত্যাশা।

আমি নারী ,আমি বেশি কিছু চাই না।আমি চাই একটু সুযোগ, সামনে এগিয়ে দেয়ার বিশস্ত হাত, আমি চাই আমার দেশে সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ,যেখানে সন্ধ্যা হয়ে গেলে বাইরে বের হতে দশবার ভাবতে হবে না।

এই নারী দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মনের কথা প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন ডিআইিউ’র প্রতিনিধি মোঃ আল শাহরিয়া সুইট।

উম্মেহানি আক্তার জেসি, অর্থনীতি বিভাগ
নারী দিবস: “একদিনের উদযাপন নয়, একটি আন্দোলন”
“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

নারীকে প্রাধান্য দিয়ে এই কথাটি বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। আধুনিক সমাজে নারীরা আগের চেয়ে এগিয়ে গেলেও এখনো নানা বাধার সম্মুখীন পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, নির্যাতন ও নিরাপত্তাহীনতা তাদের পথ কঠিন করে তুলছে।

বিশ্বব্যাপী নারীরা সমান অধিকার, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য লড়াই করে আসছে। এই লড়াই শুধুমাত্র ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের দায়িত্ব।

তাই নারী দিবস কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি এক নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন, যা নারীদের অধিকার, নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতার দাবি তোলে।

নারীদের প্রকৃত অগ্রগতি তখনই সম্ভব, যখন সমাজ তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। শুধু কথায় নয়, বাস্তব কর্মসূচির মাধ্যমেই নারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

আসুন, আমরা একসঙ্গে এমন একটি সমাজ গড়ে তুলি, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ও মর্যাদায় বেঁচে থাকতে পারে।

সুইটি পালমা, অর্থনীতি বিভাগ:

আমি জয়িতা। আজ আমি যখন সুযোগ পেলাম তখন আমি আমার জীবনের গল্পই বলবো।ছোটবেলায় আমার বাবা বলেছিলেন, মেয়েদের ছোটবেলাতে বাবার উপর নির্ভর করতে হয়,বড় হয়ে স্বামীর উপর নির্ভর করতে হয়,বৃদ্ধ বয়সে ছেলের উপর নির্ভর করতে হয়।আসলেই কি তাই??

রাণী এলিজাবেথকেও কি এমনটা করতে হয়েছিলো?? না না রাণী এলিজাবেথকে এভাবে চলতে হয় নি অন্যের উপর নির্ভর হয়ে।

এই যে আমি আজ কথা বলতে পারছি। সময় পাল্টে গেছে নিশ্চয়ই। আমি কথা বলতে পারছি কিভাবে?? শিক্ষিত হয়ে?? শুধু যে শিক্ষাই আমাকে এই সুযোগ দিয়েছে এমনটা নয়,আমাকে সুযোগ দিয়েছে আমার পরিবার, সমাজের মানুষ।

আমি নারী, আমি বেশি কিছু চাই না।আমি চাই একটু সুযোগ, সামনে এগিয়ে দেয়ার বিশস্ত হাত, আমি চাই আমার দেশে সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ,যেখানে সন্ধ্যা হয়ে গেলে বাইরে বের হতে দশবার ভাবতে হবে না।

জানেন, এইতো কিছুদিন আগে টিউশন পড়াতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ থমকে দাড়ালাম, মনে হতে লাগলো এই বুঝি কোনো একজোড়া চোখ আমাকে দেখছে, কেউ কি ফলো করছে আমাকে?

মনের ভেতর কি যে চলছে, তবুও কাউকে বুঝতে দেয়া যাবে না,এগিয়ে গেলাম।আজ আমি বলতে পারছি, আগামীকাল আমি চোখজোড়ার কথা বলতে চাই না,বলতে চাই আমার কথা,নারীদের কথা,নারী শক্তির কথা।

নারীরা কি বা করতে পারে?? ইতিহাস সাক্ষী আছে নারীরা কীভাবে পর্দা ঠেলে বাইরে বের হয়ে এসেছে,বেগম রোকেয়া তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

নারীরা যেমন ঘর সামলাতে জানে, তেমনি বাহিরেও সামলাতে পারে।তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো ” বলেছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।

নেপোলিয়নের উক্তিটির তাৎপর্য বৃহৎ। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বারবার নারী শক্তি জাগ্রত হোক, নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সম্মান প্রতিষ্ঠীত হোক। নরী শক্তির জাগরণেই এই সম্মান সমাজে প্রতিষ্ঠা হওয়া সম্ভব।

তাই নজরুলের গানের ভাষায় বলতে চাই, জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা। জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা।। দিকে দিকে মেলি’ তব লেলিহান রসনা, নেচে চল উন্মাদিনী দিগ্‌বসনা, জাগো হতভাগিনী ধর্ষিতা নাগিনী, বিশ্ব-দাহন তেজে জাগো দাহিকা।

ধূ ধূ জ্ব’লে ওঠ ধূমায়িত অগ্নি, জাগো মাতা, কন্যা, বধূ, জায়া, ভগ্নী! পতিতোদ্ধারিণী স্বর্গ-স্খলিতা জাহ্নবী সম বেগে জাগো পদ-দলিতা, মেঘে আনো বালা বজ্রের জ্বালা চির-বিজয়িনী জাগো জয়ন্তিকা।

সুমাইয়া ইয়াসমিন লুনা ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ:

সমাজে বহুদিন ধরে নারীদের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, “না, তুমি পারবে না।” কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, নারীরা এই “না” শব্দটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে এবং নিজেদের অসাধারণ শক্তি দিয়ে তার জবাব দিয়েছে।

নারী শুধু সংসারের নয়, পুরো সমাজের ভিত্তি। তাদের ধৈর্য, সাহস, আত্মত্যাগ এবং লড়াই আজকের পৃথিবীকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। নারীরা শুধু গৃহস্থালির কাজেই সীমাবদ্ধ নয়।

তারা আজ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, পুলিশ, সেনাবাহিনী, রাজনীতিবিদ প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছেন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীশিক্ষার পথিকৃৎ, যিনি মুসলিম নারীদের শিক্ষার জন্য লড়াই করেছেন।

সমাজে বলতো,নারীরা ঘরের বাইরে গেলে পরিবার ভেঙে যায়। কিন্তু আজকের সমাজ দেখছে, নারীরা এগিয়ে যাওয়াই আসলে একটি উন্নত ভবিষ্যতের প্রতীক। নারীশিক্ষা এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের অধিকার ও সমান সুযোগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

নারী শক্তির আসল রূপ হলো তারা “না” শব্দকে ভয় পায় না, বরং এটিকে নিজের শক্তিতে পরিণত করে। তারা চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে, সীমাবদ্ধতাকে ভেঙে সামনে এগিয়ে যায়।

আজকের বিশ্ব নারী দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত নারীর প্রতি সম্মান ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

তাহেরা ইসলাম তনিমা, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট:

নারী শক্তি মানে শুধু শারীরিক শক্তি নয় এটি মানসিক দৃঢ়তা, সহনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা এবং আত্মবিশ্বাসের এক অপরিসীম শক্তির প্রতীক। নারী শক্তি সেই ক্ষমতা যা পরিবার থেকে সমাজ, শিক্ষা থেকে কর্মক্ষেত্র প্রত্যেকটি স্তরে পরিবর্তন আনতে পারে নারীরা।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর