অর্থ পাচার মামলায় সোনিয়া-রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র


ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (এডি)। এর জেরে কংগ্রেস দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
মঙ্গলবার দিল্লির আদালতে এডি -র দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, গান্ধীরা একটি শেল কোম্পানি গঠন করে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকার ২ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করেছে। এই অভিযোগকে কংগ্রেস ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ হিসেবে অভিহিত করে, এবং দলটির মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, “সরকার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে ভয় দেখাচ্ছে।”
সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী আগেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে তারা অভিযোগপত্র নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তদন্তে কংগ্রেসের বেশ কিছু শীর্ষ নেতার নাম উঠে এসেছে, যেমন দলের প্রবাস শাখার প্রধান শ্যাম পিত্রোদা এবং অন্যান্য নেতাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্ত শুরু হয় ২০২১ সালে, বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামীর করা ব্যক্তিগত অভিযোগের ভিত্তিতে। তিনি দাবি করেন, কংগ্রেসের দলীয় তহবিল ব্যবহার করে গান্ধীরা ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’ (এজেএল) নামে একটি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে, যার মাধ্যমে তারা কোটি কোটি রুপির সম্পত্তি দখল করেছে।
এজেএল সংস্থা ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকা প্রকাশ করত, যা ২০০৮ সালে আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০১0 সালে, কংগ্রেসের সাহায্যে পুনরায় ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ শুরু করে। কংগ্রেসের দাবি, ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে তারা এজেএল-কে ঋণ দিয়ে সহায়তা করেছে।
২০১০ সালে, ইয়ং ইন্ডিয়ান নামক একটি কোম্পানির কাছে এজেএল তাদের শেয়ার স্থানান্তর করে, যার ফলে সংস্থাটি ঋণমুক্ত হয়ে যায়। ইয়ং ইন্ডিয়ান ছিল সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেস নেতাদের কোম্পানি, এবং মাত্র ৫০ লাখ রুপির বিনিময়ে তারা এজেএল-কে নিয়ন্ত্রণ করে, যার মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় ২,০০০ কোটি রুপি।
এডিদাবি করেছে, ইয়ং ইন্ডিয়ান কোনো দাতব্য কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল না, বরং এটি একটি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছে। তাদের তদন্তে, সংস্থাটি কোনও সামাজিক বা দাতব্য খরচের প্রমাণ পায়নি।
মামলায় অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-এর বিভিন্ন ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের আহ্বান জানানো হয়েছে। পরবর্তী শুনানি আগামী ২৫ এপ্রিল নির্ধারিত।
কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করেছে যে, নরেন্দ্র মোদীর সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের টার্গেট করতে এডি -কে ব্যবহার করছে। ২০১৪ সাল থেকে মোদী সরকারের অধীনে, এডিপ্রায় ১৫০ জন বিরোধী নেতাকে তলব বা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যার মধ্যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও রয়েছেন, যাকে ২০২২ সালে মদ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ন্যাশনাল হেরাল্ডের ইতিহাস কি বলে….
ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা ১৯৩৮ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু প্রতিষ্ঠা করেন। এটি স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল এবং নেহরু নিজে পত্রিকায় কলাম লিখতেন। ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সরকার এটি বন্ধ করে দেয়, তবে স্বাধীনতার পর ১৯৪৫ সালে এটি পুনরায় চালু হয়। ২০০৮ সালে পত্রিকাটি আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে যায় এবং ২০১০ সালে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণে আসে, পরবর্তীতে এটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসে।