রায়ের কপি পাওয়ার পর জামায়াত ও ইশরাক ইস্যুতে সিদ্ধান্ত: ইসি সচিব

আপডেট: June 1, 2025 |
inbound7715523140059078217
print news

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক এবং ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপেোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ বিষয়ে আদালতের রায়ের কপির হাতে পাওয়ার পর করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রোববার বিকালে নির্বাচন কমিশন-ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

এদিন রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে এক যুগ আগে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ।

সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, “এখনও পর্যন্ত জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীকের ব্যাপারে মাননীয় আদালতের কোনো পর্যবেক্ষণ আমরা পাইনি। পেলে এ বিষয়ে আইনগতভাবে যেটা প্রযোজ্য, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রায়ের কপি পাওয়ার পর কমিশন বসবে বলে জানান তিনি। “আইনগতভাবে তারা (জামায়ত) যা প্রাপ্য, তা পাবে।

কোনো কাগজ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য আমি দিতে পারব না।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে নির্বাচন কমিশন।

সে সময় ৩৮টি দলের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতে ইসলামীও দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নিবন্ধিত হয়। আইন অনুযায়ী শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালের জানুয়ারি হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন।

রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১ অগাস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ রায় দেয়।

সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র ‘সাংঘর্ষিক হওয়ার; কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয় ওই রায়ে।

এদিকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

ওই সিদ্ধান্ত ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৯ এর উপবিধি (১) এর ৩২ নম্বর ক্রমিক থেকে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাতিল করার প্রস্তাব কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়।

তারপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা নির্বাচনি প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ গেজেট জারি করে ইসি।

এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, “ইশরাকের বিষয়েও মাননীয় আদালতের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ইশরাক হোসেনের শপথ আটকাতে আপিল বিভাগে যে আবেদন করা হয়েছিল, ২৯ মে তা পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এই জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারির জন্য নির্বাচন কমিশন মন্ত্রণালয়ের কাছে যে মতামত চেয়েছিল, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছে সর্বোচ্চ আদালত।

আপিল বিভাগ বলেছে, সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দিয়েছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ না করে নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে।

অথচ সংবিধান অনুযায়ী উল্টো নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করার কথা মন্ত্রণালয়ের। আইনগতভাবে বিষয়টি কোন দিকে যাবে, জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, “আইনগতভাবে সেটা কোন দিকে গড়াবে সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর