নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘নৌকা’ রাখা নিয়ে প্রশ্ন আসিফ মাহমুদের


দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ বাতিল না করে বরং তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সরকারবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “অভিশপ্ত ‘নৌকা’ মার্কাটাকে আপনারা কোন বিবেচনায় আবার শিডিউলভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালেন?”
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর অংশ হিসেবে ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণের প্রস্তাব রেখে একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহালের পর ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক নতুন তালিকায় যুক্ত হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকলেও ‘নৌকা’ প্রতীক সেখানে বহাল রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র প্রতিনিধি ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি লিখেছেন, “সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনারা এই গণঅভ্যুত্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন। কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এবং কাদের দিতে এই মার্কা রেখে দিলেন?”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন পক্ষের দাবিতে ১২ মে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ ও তার সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এরপর নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে।
তবে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদের যুক্তি অনুযায়ী, “প্রতীক কখনোই নিষিদ্ধ হয় না। নৌকা প্রতীক কমিশনের সম্পত্তি। এটি একটি দলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। দল বাতিল হলেও প্রতীক বাতিল হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “পার্টি বিলুপ্ত হলেও প্রতীক ইসির তালিকায় থেকে যাবে। পরবর্তীতে তা অন্য কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। আমরা প্রতীক বাদ দিচ্ছি না।
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রথা চালু হওয়ার পর থেকে নির্বাচন কমিশন দলভিত্তিক প্রতীক সংরক্ষণ করে আসছে। বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারযোগ্য ৬৯টি প্রতীক সংরক্ষিত রয়েছে, যার মধ্যে কিছু প্রতীক এমন দলগুলোর, যাদের নিবন্ধন ইতিমধ্যে বাতিল হয়েছে—যেমন বাঘ, চাবি, কুড়াল ও হুক্কা।
নৌকা প্রতীকও সেই তালিকায় থাকবে জানিয়ে কমিশনার মাছউদ বলেন, “প্রতীকের মালিক নির্বাচন কমিশন। দল নেই, মানে প্রতীক নেই—এটা কোনো যুক্তি নয়। যেমন ফ্রিডম পার্টি হয়তো এখন আর নেই, কিন্তু তাদের প্রতীক কমিশনের তালিকায় রয়ে গেছে।”