যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: আলোচনায় দেরি- সময় কম, আশাও ক্ষীণ

আপডেট: July 21, 2025 |
inbound712469519703376071
print news

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে দর–কষাকষির শুরু থেকেই বেসরকারি খাত, অর্থনীতিবিদ বা বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফলে আলোচনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দেশের রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, শুল্ক না কমলে এর ভুক্তভোগী হবেন তাঁরাই।

বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা জানিয়ে দিয়েছেন, এই দর–কষাকষিতে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল। প্রতিযোগী দেশগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশের হাতে সময় আছে আর মাত্র ১০ দিন।

সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের সঙ্গে দুই দফা আলোচনা হয়েছে। তবে ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। কারণ, ইউএসটিআরের হাতে শুল্ক কমানোর এখতিয়ার নেই। সেটা করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। তাই এখন এসে সরকারের শীর্ষ মহল বেসরকারি খাতকে অনানুষ্ঠানিকভাবে লবিস্ট নিয়োগসহ চাপ প্রয়োগের কৌশলে যুক্ত হতে বলছে।

তবে বেসরকারি খাত শুরু থেকেই আলোচনায় অংশ নিতে চেয়েছিল। এপ্রিলে তারা লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শও দিয়েছিল, কিন্তু সরকার সে আহ্বান আমলে নেয়নি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত শনিবার বেসরকারি খাতকে আলোচনায় সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করেন। বিজিএমইএ দ্রুত দুটি মার্কিন লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু দেরিতে উদ্যোগ নেওয়ায় মানসম্মত লবিস্ট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে সরকার কোনো তথ্য দেয়নি এনডিএ (নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) এর কারণ দেখিয়ে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যুতে তাঁদের পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সেখানে রপ্তানি হয়েছে ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য, যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানিতে গড় শুল্কহার দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ।

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, “৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে এমন সংকট দেখিনি। আমার এক বড় ক্রেতা বলেছেন, দর–কষাকষিতে আমাদের অবস্থান দুর্বল।”

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, “আমরা কূটনৈতিকভাবে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছি। তবে এখনো ১০ দিন সময় আছে—সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবহার করে শেষবারের মতো চেষ্টা করা উচিত। এই শুল্ক না কমলে ছয় মাসের বেশি ব্যবসা টিকবে না, ১০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে যাবে।”

গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ৫৭টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হার ছিল ৩৭ শতাংশ। পরে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত হয়, কিন্তু ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হয়।

এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্ত হন। ৯–১১ জুলাই ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় দফা আলোচনা হলেও কোনো সুসংবাদ মেলেনি।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “আমরা মাত্র দুই দিন আগে লবিস্ট নিয়োগের জন্য সরকারের অনানুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু দেরি হওয়ায় ভালো লবিস্ট পেতেও সমস্যা হচ্ছে। সময় খুব কম, ভালো ফল পাওয়া কঠিন। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

সূত্র: প্রথম আলো।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর