নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়শিপের শিরোপা নিশ্চিত করল বাংলাদেশ

আপডেট: July 21, 2025 |
boishakhinews 70
print news

ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। তবে ড্র নয়, জিতেই সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়শিপের শিরোপা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার ‘অঘোষিত’ ফাইনালে মোসাম্মৎ সাগরিকার কাছেই হেরেছে নেপাল। দারুণ এক হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশকে ৪-০ ব্যবধানের জয় এনে দিয়েছেন তিনি।

তিন নয়, চার গোল করেছেন সাগরিকা। তাতে দুর্দান্তভাবে ফেরাটা রাঙালেন বাংলাদেশি ফরোয়ার্ড। লাল কার্ডের নিষেধাজ্ঞায় তিন ম্যাচ মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। গোলগুলোকে যে মিস করছিলেন তা যেন ফেরার ম্যাচে বুঝিয়ে দিলেন টুর্নামেন্টের প্রথম হ্যাটট্রিককারী।

আজকেরটি টুর্নামেন্টে তার দ্বিতীয়। অপরাজিত চ্যাম্পিয়নে কোচ পিটার বাটলারের চাওয়াও পূর্ণ হয়েছে। গতকালই তিনি জানিয়েছিলেন, জিতেই শিরোপা উদযাপন করতে চায় বাংলাদেশ।

কিংস অ্যারেনায় টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচ শুরু হয় উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা দিয়ে।

এরপর ম্যাচ শুরু হতেই খেলার নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। তাতে দ্বিতীয় মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় স্বাগতিকেরা। তবে ডান প্রান্ত থেকে সাগরিকার নেওয়া শটটি কর্নারের বিনিময়ে নেপালকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক সুজাতা তামাং।

 

ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল বাংলাদেশ।

সতীর্থর নেওয়া কর্নার কিকে দারুণ এক হেড করেছিলেন সাগরিকা। তবে গোললাইন থেকে নেপালের এক ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করলে হতাশ হতে হয় সাগরিকাকে। ৩ মিনিট পরে অবশ্য ঠিকই জাল খুঁজে নিয়েছেন বাংলাদেশি ফরোয়ার্ড। সতীর্থর দারুণ এক পাসে গোলবার ছেড়ে বেরিয়ে আসা নেপালের গোলরক্ষককে কাটিয়ে ফাঁকাবারে বল জড়িয়ে দেন তিনি। তাতে টুর্নামেন্টের পঞ্চম গোলে ফেরাটা রাঙালেন এই ফরোয়ার্ড।
১৯ মিনিটে মিলি আক্তারের ভুলে প্রায় সমতায় ফিরেছিল নেপাল। তবে ভাগ্যেকে পাশে পায়নি তারা। সঙ্গে শেষ মুহূর্তে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দলকে রক্ষা করেছেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। বাতাসে থাকা বল ধরতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন তিনি। সুযোগ পেয়ে নেপালের এক খেলোয়াড় শট নিলেন তা বাঁ প্রান্তের পোস্টে লেগে বাধা হয়। ফিরতি সুযোগে আরেকজন শট নিলেন গোললাইন অতিক্রম করার আগেই শূন্যে লাফিয়ে তালুবন্দি করেন মিলি।

 

অন্যদিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। নেপালের গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি মুনকি আক্তার। শটটা অবশ্য গোলবারেই নিয়েছিলেন তিনি। তবে এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের হাতে বাধা প্রাপ্ত হওয়ায় বলের গতি যায় কমে। তবুও জালে জড়াতে পারত বলটা। কিন্তু একদম শেষ মুহুর্তে কোনো মতে কর্নারের বিনিময়ে নেপালকে দ্বিতীয় গোল হজম করা থেকে বাঁচান রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড়। পরে ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়ে আরো বেশ কিছু আক্রমণ করলেও দ্বিতীয় গোলের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।

বিরতি শেষেই বাংলাদেশকে দ্বিতীয় লিড এনে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন সাগরিকা। তবে ৪৮ মিনিটে পাওয়াটা তার সুযোগে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বাঁ প্রান্তের পোস্ট। তবে ৫১ মিনিটে ঠিকই জোড়া গোলের দেখা পান তিনি। সেটিও দুর্দান্ত এক ফিনিশিংয়ে। উমেলা মারমার পাস ধরেই শরীরে সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে পায়ের জাদুতে ধোঁকা দিয়ে ডান পায়ের দারুণ শটে নেপালের গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি। ৬ মিনিট পর পেয়ে যান টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকও। জয়নব বিবির পাসে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বলকে দেন জড়িয়ে।

৬৩ মিনিটে নিজের চতুর্থ গোলটাও প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন সাগরিকা। তবে উমেলার দুর্দান্ত পাসটাকে গোলে পরিণত করতে পারেননি তিনি। বাঁধা হয়ে দাঁড়ান গোলরক্ষক সুজাতা। গোলবার ছেড়ে বেরিয়ে এসে তার নেওয়া শট বাঁ প্রান্তে লাফিয়ে ধরেন নেপালের গোলরক্ষক। ৭৪ মিনিটে তার আরেকটি নিশ্চিত গোলও ঠেকিয়ে দেন সুজাতা। এর আগে ৭২ মিনিটে তার এক গোল অফসাইডের কারণে বাতিলও হয়।

 

আসি আসি করা চতুর্থ গোলটা অবশ্য ৭৭ মিনিটে ঠিকই পেয়ে যান সাগরিকা। টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বেোচ্চ ৮ গোল করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ ১০ গোল করেছেন নেপালের পূর্ণিমা রাই। ম্যাচের ৮২ মিনিটে ব্যবধান কমানোর এক সুযোগ পেয়েছিল নেপাল। তবে বাংলাদেশের গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি মিনা দেউবা। পরে আর কোনো গোল না হলে বিজয়ের উল্লাসে মাতেন বাংলাদেশে মেয়েরা। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো যুব পর্যায়ের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষবার ভুটানের সঙ্গে যৌভভাবে চ্যাম্পিয়ন ছিল।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর