২০ শিশুকে বাঁচিয়ে নিজেই হারিয়ে গেলেন শিক্ষক মাহরিন চৌধুরী

আপডেট: July 22, 2025 |
inbound3894214537260514090
print news

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের সময় নিজের জীবন বাজি রেখে অন্তত ২০ শিক্ষার্থীর প্রাণ রক্ষা করেছিলেন শিক্ষক মাহরিন চৌধুরী (৪২)। সেই সাহসিনী অবশেষে আর লড়াইয়ে টিকলেন না—চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

সোমবার (২১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

মাহরিনের ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী এক ফেসবুক পোস্টে বোনের মৃত্যুর খবর দিয়ে লেখেন, ‘মাহরিন আপু আর আমাদের মাঝে নেই। আমার বড় বোন, যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন।’

দুর্ঘটনার সময় স্কুল ছুটি শেষে ক্যাম্পাস ত্যাগ করছিলেন মাহরিন চৌধুরী। হঠাৎই আকাশ থেকে একটি প্রশিক্ষণ বিমান ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে, মুহূর্তেই আগুন ও ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। সেই মুহূর্তে আতঙ্কিত শিশুদের বাঁচাতে নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেন তিনি।

তার স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, “ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুড়ে গেছে। আমার মনে হয়েছে পুরো শরীর দগ্ধ। তবু লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে আমাকে বলেছে—ও তখন স্কুল থেকে বের হচ্ছিল, বিমানটি ঠিক সামনে পড়ে। নিজের শরীরে আগুন লাগার পরও ও চেষ্টা করেছে বাচ্চাদের বাঁচাতে।”

প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে দৌড়াতে থাকে। চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। ঠিক তখনই শিক্ষক মাহরিন সাহসিকতার সঙ্গে একে একে অন্তত ২০ জন শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।

সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি “এফ-৭ বিজিআই” মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে ভবনে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনার সময় স্কুলের প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চলছিল। বিকট শব্দ, ধোঁয়া ও আগুনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ভয়াবহ এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আহত হয়েছেন শতাধিক। নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জনই শিশু।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর