পাকিস্তানকে ১২৫ রানে অলআউট করে টাইগারদের সিরিজ জয়


পেণ্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচের ভাগ্য। কখনো বাংলাদেশের ভাগ্যে ম্যাচ চলে আসে। আবার কখনো পাকিস্তান ছন্দ পেয়ে যায়।
বাংলাদেশ ফেভারিট ছিল ঠিকই। কিন্তু পাকিস্তানের দারুণ ফাইটব্যাকে দুঃশ্চিন্তার কালোমেঘও ছড়িয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক শিবিরে। বিশেষ করে শেষ ওভারের আগের ৩ ওভারে যেভাবে পাকিস্তান লড়াই করলো, তা ছিল প্রশংসনীয়।
১৬ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিল ৭ উইকেটে ৮৮। পরের ৩ ওভারে তাদের রান যথাক্রমে, ৯, ৯ ও ১৫। হারায় ২ উইকেট। তাতেও হাল ছাড়েনি তারা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৩ রান। মোস্তাফিজুর রহমানের করা প্রথম বলে আহমেদ দানিয়াল চার মারলেন।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিস্তব্ধতা। কিন্তু পরের বলেই উল্লাস, উৎসব। ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবার মোস্তাফিজের স্লোয়ার উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন ডিপ মিড উইকেটে। শামীমের নির্ভরতার হাতে জমে যায় বল। নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়।
পাকিস্তানকে ১২৫ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয় ৮ রানে। সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলে লিটন কুমার দাসের দল। একাধিক ম্যাচের সিরিজে এবারই প্রথম পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
ফিফটির পর সাজঘরে ফাহিম:
রিশাদ হোসেনকে বিশাল ছক্কা মেরে ফাহিম আশরাফ শুধু ফিফটিই তোলেননি, লক্ষ্য নাগালে নিয়ে আসেন। ওই ওভারে রিশাদ এক ছক্কার পাশাপাশি দুই চারও হজম করেন। প্রবল চাপে থেকে ওভারের শেষ বলটি করেন লেগ স্পিনার। শর্ট বল এবার ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি ফাহিম। বোল্ড হয়ে ৫১ রানে ফেরেন সাজঘরে। ৩২ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৫১ রান করে ফাহিম আউট হলেন। পাকিস্তান হারাল নবম উইকেট।
১২ বলে ২৮ রান প্রয়োজন পাকিস্তানের:
ফাহিম আশরাফের ব্যাটে লড়াই করছে পাকিস্তান। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ফিফটি তুলে দলকে জয়ের লড়াইয়ে রেখেছেন। শেষ ১২ বলে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৮ রান।
শরীফুলের তৃতীয় শিকার আব্বাস:
ফাহিম আশরাফকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করছিলেন আব্বাস আফ্রিদি। তাদের ৪১ রানের জুটি চোখ রাঙানি দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। শরীফুল বোলিংয়ে ফিরে ভাঙলেন এই জুটি। তার স্লোয়ারে বোল্ড হন ১৩ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ রান করা আফ্রিদি।
পাকিস্তান হারাল অষ্টম উইকেট।
৭ উইকেট নেই পাকিস্তানের:
সপ্তম উইকেট হারাল পাকিস্তান। তাদের দলীয় রান পঞ্চাশ ছোঁয়ার আগেই ৭ ব্যাটসম্যান ফিরেছেন সাজঘরে। স্কোরবোর্ডের চিত্র, ৪৭/৭।
সবশেষ আউট হলেন খুশদীল শাহ। স্পিনার মাহেদীর দ্বিতীয় শিকার তিনি। অ্যাক্রোস দ্য লাইনে ব্যাট চালাতে গিয়ে বল মিস করেন খুশদীল। এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত টিকে যায়।
৬ উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে পাকিস্তান:
১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল সালমান আগা ও খুশদীল শাহর ব্যাটে। মনে হচ্ছিল তারা উইকেটের মিছিল থামাতে পারবেন। কিন্তু পারলেন না।
আসকিং রান রেট বেশি থাকায় আক্রমণে যেতেই হতো। সেই কাজ করতে গিয়ে উইকেট হারালেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। স্পিনার মাহেদীকে উড়াতে গিয়ে লং অফে সালমান আগা ক্যাচ দেন ৯ রানে। পাকিস্তান হারাল ষষ্ঠ উইকেট।
ইনিংসের অর্ধেকতম ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ৬ উইকেটে ৩২। শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য তাদের চাই ১০২ রান।
পাওয়ার প্লে’তে বাংলাদেশের দাপট:
টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লে’তে মাত্র ২৯ রান পায়। হারায় ৪ উইকেট। পাকিস্তানের শুরুটাও আরো বাজে হয়েছে। ১৭ রান তুলতে অতিথিরা হারিয়েছে ৫ উইকেট।
সাকিবের ডাবল উইকেট মেডেন:
প্রবল চাপে থাকা পাকিস্তানকে আরো চাপে ফেললেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। নিজের প্রথম ওভারে পেলেন জোড়া উইকেট। আউট করলেন হাসান নওয়াজ ও মোহাম্মদ নাওয়াজকে। দুজনকে আউট করার বল প্রায় একই ছিল।
বল উইকেটে পড়ে বাড়তি গতি ও বাউন্স পায়। তাতে আটকে যান ব্যাটসম্যানরা। ব্যাট চালিয়ে দুজনই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। হাসান ৬ বল খেলে কোনো রান করতে পারেননি। নওয়াজ প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন।
হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু খুশদীল কোনো রকমে বল ডিফেন্ড করেন।
১৫ রান তুলতে পাকিস্তান হারাল ৫ উইকেট।
তানজিদ নিজের প্রথম ওভারে কোনো রান দিলেন না। উইকেট পেলেন ২টি।
শরীফুলের দ্বিতীয় শিকার ফখর:
পেসার শরীফুলের বল মিড উইকেট দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ফখর জামান। টাইমিং মেলেনি। বল তার গ্লাভসে লেগে যায় উইকেটের পেছনে। বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। কিন্তু ফখর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের আগেই হাঁটা শুরু করেন ড্রেসিংরুমে। পাকিস্তান হারাল তৃতীয় উইকেট। শরীফুল পেলেন দ্বিতীয় উইকেট। ১ চার মেরে ফখর আউট ৮ রানে।
দ্বিতীয় ওভারে আরও এক উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ:
দ্বিতীয় ওভারে আরও একটি সাফল্য পেল বাংলাদেশ। এবার শরীফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান মোহাম্মদ হারিস। গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি। ৯ রানেই নেই পাকিস্তানের ২ উইকেট। ফখর জামানের সাথে যোগ দিয়েছেন সালমান আগা।
প্রথম ওভারেই সাফল্য পেল বাংলাদেশ:
রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। মাহেদী হাসানের করা প্রথম ওভারের ষষ্ঠ বলটি ডিপ পয়েন্টে ফেলে ২ রান নিতে যান সাইম ও ফখর জামান। রিশাদ দ্রুত কুড়িয়ে সেটা দেন লিটন দাসকে। লিটন ভেঙে দেন উইকেট ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই। সাইম ফিরে যান ৪ বল খেলে ১ রান করে।
জাকেরের ফিফটিতে ১৩৪ রানের টার্গেট দিলো বাংলাদেশ:
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বেশ কঠিন! দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার নাঈম শেখ। ল্যাপ স্কুপ খেলার চেষ্টায় বল গ্লাভসে লেগে ক্যাচ ওঠে উইকেটকিপারের হাতে। একটু বেশি ফ্যান্সি শটের খেসারত। এরপর দ্রুত উইকেট দিয়ে বসেন লিটন দাসও। আর তৌহিদ হৃদয় রান নেওয়ার তাড়ায় পাকিস্তান অধিনায়কের এক দুর্দান্ত থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরই মিড-অন অঞ্চলে সহজ ক্যাচ দিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দেন পারভেজ হোসেন ইমন। তাতে পাওয়ার প্লে‘র মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ঠিক যেন প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন মেহেদী ও জাকের। মেহেদী খেলেন ঝোড়ো ৩৩ রানের ইনিংস, আর জাকের আলি দেখান দারুণ আত্মবিশ্বাস। খেলেন ৫৫ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। এই জুটির কল্যাণে বাংলাদেশ সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩৩। জিততে পাকিস্তানকে করতে হবে ১৩৪ রান। যদিও এই উইকেটে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ হয়তো ১০–১৫ রান কম করে ফেলেছে।
পাকিস্তানি বোলাররা এই ম্যাচে একটু কৌশল বদলেছেন। আগের তুলনায় ধীর গতির বল করেছেন এবং সেটিই কাজ দিয়েছে। সালমান, দানিয়েল আর আব্বাস— তিনজনই নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।
জাকেরের ফিফটি, শরীফুলের বিদায়:
শেষ ওভারটি বেশ কার্যকর করলেন জাকের আলী। দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি হাঁকান ৪৭ বলে ১টি চার ও ৫ ছক্কায়। একই ওভারের তৃতীয় বলে অবশ্য রান আউট হয়ে ফিরে যান শরীফুল।
ছক্কা মেরেই ফিরলেন রিশাদ:
১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে আব্বাস আফ্রিদিকে লং অফ দিয়ে বিশাল চক্কা হাঁকান। কিন্তু পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান রিশাদ। ৪ বলে ১ ছক্কায় ৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে। একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করা জাকেরের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শরীফুল ইসলাম।
১০০ রানের মাথায় সপ্তম উইকেটের পতন:
দলীয় ১০০ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারালো বাংলাদেশ। সালমান মির্জার করা ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে উড়িয়ে মেরে এক্সট্রা কাভার অঞ্চলে ধরা পড়েন তানজিম হাসান। ৪ বলে ১ চারে ৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। জাকেরের সঙ্গে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন রিশাদ হোসেন।
৯৩ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেটের পতন:
দানিয়েলের করা ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে যান শামীম পাটোয়ারী। ৪ বল খেলে ১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। জাকেরের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব।
৫৩ রানের জুটি গড়ে ফিরলেন মাহেদী:
২৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন জাকের আলী ও শেখ মাহেদী হাসান। পঞ্চম উইকেটে তারা দুজন দলীয় সংগ্রহে ৫৩ রান যোগ করেন। কিন্তু দলীয় ৮১ রানের মাথায় ভাঙে এই জুটি। হাসান নাওয়াজের করা ১৪তম ওভারের শেষ বলটি উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ নাওয়াজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মাহেদী। ২৫ বলে ২টি চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রানের ইনিংস খেলে যান তিনি। জাকেরের সঙ্গে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন শামীম পাটোয়ারী।
জাকের-মাহেদীর ব্যাটে ৫০ পেরুলো বাংলাদেশ:
২৮ রানেই ৪ উইকেট হারানোর পর হাল ধরেন জাকের আলী ও মাহেদী হাসান। তাদের দুজনের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ ৫০ রান পেরিয়েছে। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৫৩। জাকের ১০ ও মাহেদী ১৬ রানে ব্যাট করছেন।
২৮ রানেই ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের:
২৮ রানেই ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের। এবার ফিরলেন পারভেজ হোসেন ইমন। অভিষিক্ত আহমেদ দানিয়েলের বলে ফাহিম আশরাফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমন। ১৪ বল খেলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৩ রান করেন তিনি।
শূন্যরানে ফিরলেন তাওহীদ হৃদয়:
পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন নতুন ব্যাটসম্যান তাওহীদ হৃদয়। তিনি রান আউটে কাটা পড়েন ৩ বল খেলে কোনো রান না করে।
এবার ফিরলেন লিটন:
দলীয় ২৫ রানে সালমান মির্জার করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই আউট হন লিটন দাস। তার বলটি উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে হাসান নাওয়াজের হাতে তালুবন্দি হন তিনি। ৯ বল খেলে ১ চারে ৮ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে।
নবম বলেই উইকেট হারালো বাংলাদেশ:
দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফাহিম আশরাফের করা বলে উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ হারিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তানজিদ হাসানের জায়গায় ফেরা নাঈম শেখ। ৭ বল খেলে ৩ রান করেন তিনি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ:
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে ব্যাট করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলে আজ দুটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। তানজিদ হাসান ও তাসকিন আহমেদের জায়গায় এসেছেন নাঈম শেখ ও শরীফুল ইসলাম। পাকিস্তান দলে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে আবরার আহমেদের জায়গায় এসেছেন আহমেদ দানিয়েল। আজ তার অভিষেক হলো পাকিস্তানের জার্সিতে।
বাংলাদেশ একাদশ:
পারভেজ হোসেন ইমন, নাঈম শেখ, লিটন দাস (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন, জাকের আলী, মাহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম।
পাকিস্তান একাদশ:
ফখর জামান, সাইম আইয়ুব, মোহাম্মদ হারিস (উইকেটরক্ষক), হাসান নওয়াজ, সালমান আগা (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নওয়াজ, খুশদিল শাহ, ফাহিম আশরাফ, আব্বাস আফ্রিদি, সালমান মির্জা, ও আহমেদ দানিয়াল।
বাংলাদেশ: ১৩৩/১০ (২০ ওভারে)
পাকিস্তান: ১২৫/১০ (১৯.২ ওভারে)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী
সিরিজ: বাংলাদেশ ২ : ০ পাকিস্তান