জুলেখার মুখে অচেনা দাগ, নিতে হবে বিদেশে


মোহাম্মদ রেজাউল করিম, স্টাফ রিপোর্টারঃ জুলেখা, জন্মের পর থেকেই তার মুখে দেখা দেয় কালো দাগ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই দাগ থেকে চুল গজাতে শুরু করে।
বর্তমানে জুলেখার বয়স ১৯ বছর, গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, কেউ কেউ ফিসফিস করে বলে ‘অন্যরকম মেয়ে’। বাড়তে থাকে মানুষের কৌতূহলী দৃষ্টি আর সমাজের তির্যক কথা।
সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম। কাঁচা রাস্তা, খড়ের ঘর আর দিনমজুরের সংসার। এখানেই জন্ম জুলেখার। এই বয়সে অন্য মেয়েরা হয়তো কলেজে যাচ্ছে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলছে, নতুন স্বপ্ন গড়ছে। কিন্তু জুলেখার জীবন থেমে গেছে এক অচেনা রোগের ছায়ায়।
স্কুলে কখনো যাওয়া হয়নি তার। বাবা দিনমজুর, সংসার চালাতেই হিমশিম। চিকিৎসার সুযোগ ছিল না। তাই জুলেখা চুপ করে সহ্য করেছে নিজের ব্যথা, নিজের লজ্জা।
কয়েকদিন আগে জুলেখার খবর পৌঁছায় আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিনের কাছে। তিনি জানান, খবর দেখে আমি গভীরভাবে ব্যথিত হই।
প্রতিশ্রুতি দিই তাকে সাহায্য করব। চট্টগ্রামে এনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাই। চট্টগ্রামের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম আলী চৌধুরী আজাদ বলেন, এই রোগটির নাম কনজেনাইটাল জায়ান্ট হাইরি মেলানোসাইটিক নেভাস।
এটি অত্যন্ত বিরল। ছোট আকার হলে কেটে ফেলা বা লেজার করা যায়। কিন্তু জুলেখার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড়, দেশে এ ধরনের চিকিৎসা কার্যত অসম্ভব।
এই রোগ শুধু শারীরিক নয়, মানসিক কষ্টও তৈরি করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, এতে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি। আর সমাজে বেঁচে থাকাটাও হয়ে ওঠে কঠিন।
মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, তার চিকিৎসা বিদেশে করাতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে বিদেশে পাঠানোর।
দেশের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে কাজটি সহজ হবে। এরই মধ্যে জনতার দলের সহ-সভাপতি ও আশ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহবুবুল আলম-ও পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা আশ ফাউন্ডেশনের সাথে মিলে চেষ্টা করছি জুলেখার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা জরুরি।
জুলেখার মা চোখ মুছতে মুছতে বলেন, আমার মেয়েটা যেন অন্য মেয়েদের মতো খেলতে পারে, হাসতে পারে—এই স্বপ্ন দেখি।
যদি সে সুস্থ হয়, আমার আর কোনো দুঃখ থাকবে না। আল্লাহর রহমতে ফাউন্ডেশন আর জনতার দল আমাদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামের উঠোনে দাঁড়িয়ে জুলেখা দূরে তাকিয়ে থাকে। তার মুখে অচেনা দাগ, কিন্তু চোখে স্বপ্নের আলো। সে চায় সমাজের অন্য মেয়েদের মতো সাধারণ জীবন—কোনো আড়াল নয়, কোনো লজ্জা নয়।
জুলেখার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, তা নির্ভর করছে আমাদের সহানুভূতির ওপর। হয়তো একটু সাহায্য, একটু সহমর্মিতা—তাতেই খুলে যেতে পারে এক তরুণীর নতুন জীবনের দরজা।