যে চিকিৎসকের হাত ধরে ইসলামে ফিরেন আফ্রিকার কোটি মানুষ

আপডেট: August 6, 2021 |
print news

বিলাসী জীবনের বাসনা জলাঞ্জলি দিয়ে ইসলাম ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিবেদন করেন ডা. আবদুর রহমান আস সামিত। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি আফ্রিকা মহাদেশের বিরান ভূমিতে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন তিনি। আফ্রিকা মহাদেশে ইসলাম প্রচারে ২৯ বছর কাজ করেছেন। এ সময় তাঁর হাতে ১১ মিলিয়ন বা এক কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। পাঁচ হাজার সাত শ মসজিদ নির্মাণ করেছেন। ৯ হাজার পাঁচ শ কূপ খনন করেছেন। ৮৬০টি স্কুল, চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০৪টি ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ডা. আস সামিত শৈশবেই মানবসেবায় ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন ছোট্ট সংঘ। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াকালে তিনি শ্রমিকদের প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতেন। তাঁর ও বন্ধুদের জমানো অর্থ দিয়ে তিনি একটি পুরনো গাড়ি কেনেন। প্রতিদিন বিনা ভাড়ায় শ্রমিকদের তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন। খরচের অর্থ জমিয়ে ইসলামী বই কিনতেন এবং মসজিদে তা বিতরণ করতেন।

kalerkantho

১৯৪৭ সালের ১৫ অক্টোবর আবদুর রহমান বিন হামুদ আস সামিত কুয়েতে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৭২ সালে বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন ও সার্জারি বিষয়ে পড়েন। ১৯৭৪ সালে লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৭৮ সালে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে মন্ট্রিয়াল জেনারেল হাসপাতাল থেকে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিষয়ে স্নাতযেকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর দুই বছর লন্ডনের কিং কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। অতঃপর কুয়েতে ফিরে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আল সাবাহ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেন। এ সময় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রবন্ধ ও আফ্রিকার মুসলিমদের নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেন।

সর্বপ্রথম কুয়েতের সাবেক আমির জাবির আল আহমদ আল সাবাহর স্ত্রী তাঁকে কুয়েতের বাইরে কোনো দুর্গম স্থানে মসজিদ নির্মাণে আর্থিক অনুদান দেন। তখন আস সামিত আফ্রিকার মারাওয়িতে মসজিদ তৈরি করেন। সেখানে খ্রিস্টানদের কয়েকটি গির্জা থাকলেও মুসলিমদের কোনো মসজিদ পাননি। তাদের ইসলামী শিষ্টাচার, নৈতিক শিক্ষা ও অন্যান্য কারিগরি দক্ষতা কোনো কিছুই ছিল না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় ডা. আস সামিত কুয়েতভিত্তিক একাধিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ‘আফ্রিকান মুসলিম এজেন্সি’ যার পরবর্তী নাম ‘ডাইরেক্ট অ্যাইড’ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যু অবধি এর জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া আমেরিকা ও কানাডার মুসলিম ফিজিশিয়ান সোসাইটি, কুয়েত রিলিফ কমিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক চ্যারিটি অথোরিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক কাউন্সিল ফর কল অ্যান্ড রিলিফসহ অনেক সেবামূলক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।

kalerkantho

আফ্রিকায় দীর্ঘ তিন দশক অবস্থান করে সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামের শিক্ষা তুলে ধরেন। শুধু আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও চিকিৎসা নিতে কুয়েতে আসতেন। এ সময় অসংখ্যবার তিনি স্থানীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন। তানজানিয়া, মালাভি, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ সুদান, কেনিয়া, নাইজারসহ বহু দেশের অসংখ্য মানুষ তাঁর হাত ধরে ইসলামের পথে ফিরে আসেন। বংশীয়ভাবে মুসলিম হলেও অভাবে পড়ে তাঁরা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এক শ বা দেড় শ বছর আগে ইসলাম গ্রহণ করা অনেক গোত্র, পরিবার বা বংশ অভাবে পড়ে কিংবা দাওয়াতের কার্যক্রম না থাকায় পুরোপুরি খ্রিস্টান হয়েছে।

ডা. আস সামিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আরবের ধনী মুসলিমদের জাকাত বিশ্বের ২৫০ মিলিয়ন মুসলিমের অভাব পূরণে সহায়ক। এদের জাকাতের পরিমাণ ৫৬.৮৭৫ বিলিয়ন ডলার হলেও প্রত্যেক অভাবী দরিদ্রের ভাগে ২২৭ ডলার পড়বে। উত্পাদনমুখী কাজের আয় দিয়ে জীবনযাপনে এ পরিমাণ অর্থ যথেষ্ট।’ অসহায়-অভাবীদের সহায়তা প্রদানে তিনি কখনো ধর্ম বা বর্ণ দেখেননি।

সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য মর্যাদাপূর্ণ সব সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার পান। ২০০৬ সালে হামদান বিন রাশিদ আলে মাকতুম পুরস্কার পান। এ ছাড়া অসংখ্য সম্মাননা, পুরস্কার ও পদক লাভ করেন। ডা. আস সামিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন। তা হলো : ‘লাব্বাইক আফ্রিকা’, ‘দামআতু আফ্রিকা’, ‘রিহলাতু খাইরিন ফি আফ্রিকা রিসালাতু ইলা ওয়ালাদি’ ইত্যাদি।

সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর